জিয়ার পাপেই তো রাজনীতির এই অবস্থা: দীপু মনি

তানিম আহমেদ, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২২ অক্টোবর ২০১৭, ১০:৪০ | প্রকাশিত : ২২ অক্টোবর ২০১৭, ১০:০৭

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান সেনাবাহিনীর প্রধান থাকাকালে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে স্বাধীনতাবিরোধীদের রাজনীতি করার সুযোগ করে দিয়েছিলেন। আর সেই ‘পাপ’ এর কারণে রাজনীতি কলুষিত হয়েছে বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দীপু মনি। ঢাকাটাইমসকে দেয়া দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপ, বিএনপি ও জিয়াউর রহমানের প্রশংসা করে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের উক্তি, রোহিঙ্গা সংকট, পদ্মাসেতুতে দুর্নীতি চেষ্টার অভিযোগ তোলার নেপথ্যের কাহিনিসহ নানা বিষয় উঠে এসেছে।

আজ থাকছে সাক্ষাৎকারের প্রথম পর্ব, যেখানে দীপু মনি কথা বলেছেন আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচন কমিশনের সংলাপ এবং নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের অবস্থানের বিষয়ে।

২০০৮ সালে চাঁদপুর-৩ আসন থেকে আওয়ামী লীগের টিকেটে নির্বাচিত হয়েই বাংলাদেশে প্রথম নারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ পান দীপু মনি। বর্তমানে তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি। ২০১৬ সালে আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলনে এই রাজনীতিক তৃতীয়বারের মতো দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হন। এর আগে তিনি আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন।

নির্বাচন কমিশনের সাথে আপনাদের সংলাপ কেমন হলো?

অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য আওয়ামী লীগের মতামত দিয়েছি। আলোচনা খুবই সৌহার্দ্যপূর্ণ হয়েছে। গণতন্ত্র, বর্তমান প্রেক্ষাপট এবং নির্বাচন এ বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের মূল বক্তব্য ছিল। পাশাপাশি আগামী জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে কী ধরণের সংস্কার প্রয়োজন, বা কিছু সংস্কার নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল যে প্রস্তাব দিয়েছে তা বর্তমান আইনী কাঠামোর সাথে কোথায় সাংঘর্ষিক তা আমরা তুলে ধরেছি।

সংলাপে দলীয় সংকীর্ণ কোন দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ ঘটেনি। বৃহত্তরও জাতীয় স্বার্থ প্রতিফলিত হয়েছে।

বিএনপির ২০ দফা প্রস্তাবকে কীভাবে দেখছেন?

বিএনপি কী বলল সেটা নিয়ে আমরা চিন্তিত নই। আমাদের কথা হলো, কোন পদ্ধতি অনুসৃত হলে নির্বাচন প্রক্রিয়া স্বচ্ছ হবে। মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার সুরক্ষিত হবে। বিএনপির সাথে আমাদের প্রস্তাবের মৌলিক পার্থক্য তো থাকবেই। কারণ আওয়ামী লীগ হচ্ছে বাংলার মানুষের আন্দোলন সংগ্রামের মাধ্যমে জন্ম নেয়া একটি দল। অন্যদিকে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলদারের নেতৃত্বে (সুপ্রিম কোর্টের রায়ে) সুবিধাভোগীদের প্লার্টফম হচ্ছে বিএনপি। তাদের কাজ হচ্ছে আওয়ামী লীগ ও স্বাধীনতার বিরোধিতা করা।

বিএনপির সাথে সংলাপে সিইসির একটি বক্তব্য (জিয়াউর রহমান গণতন্ত্র পুর্নঃপ্রতিষ্ঠাতা করেছেন) নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে? আপনারা কি সংলাপে বিষয়টি উপস্থাপন করেছেন?

আমাদের বিষয়টি উপস্থাপনের প্রয়োজন হয়নি। কারণ সিইসি তাঁর প্রারম্ভিক বক্তব্যে দেশের ইতিহাস, আমাদের আওয়ামী লীগের ইতিহাস এবং আমাদের গণতন্ত্রের ইতিহাস নিয়ে যা বলেছেন, তারপর আমাদের ভিন্ন কোন প্রশ্ন করার প্রয়োজন হয়নি। কারণ তিনি যা বলেছেন, তা সম্পূর্ণভাবে ঐতিহাসিক সত্যের কথা বলেছেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনারের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে বলছি, বাংলাদেশের যে কেউ যে কোন কথা বলুক না কেন। যাকে (জিয়াউর রহমান) দেশের সর্বোচ্চ আদালত রায় দিয়ে অবৈধ ক্ষমতা দখলদার বলেছে। তাকে আর যাই বলা হউক বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তক বলা অর্থহীন। তার বহু দল মানে তো তিনি একাই তো অনেক দল করেছেন। প্রথমে জাগদল, তারপর বিভিন্ন পর্যায়ে এনে বিএনপি গঠন করেছেন। বহুদলীয় নামে যাদের রাজনীতি করার সুযোগ দিয়েছেন তাদের কি বাংলাদেশে কোনরূপ রাজনীতি করার কথা ছিল? তারা তো সাংবিধানিকভাবে নিষিদ্ধ ছিল। নিষিদ্ধ যুদ্ধাপরাধীদের দেশের রাজনীতিতে সিদ্ধ করার পাপ কাজের জন্যই তো দেশের রাজনীতির আজ এ অবস্থা।

বিএনপি তো নির্বাচনের আগে সংসদ ভেঙে নির্দলীয় সরকারের অধীনে ভোটের দাবি জানিয়েছে...

গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় অন্তবর্তীকালীন সরকার (বিএনপির দাবি অনুযায়ী) হয় না। নির্বাচনের সময় চলমান সরকারটি অন্তবর্তীকালীন সরকার হিসাবে কাজ করবে। সেই সরকার কোন নীতিনির্ধারণী কাজ না করে রুটিন কাজ করবে। নির্বাচন কমিশন যেভাবেই চাইবে সেভাবেই সহযোগিতা করবে। বিএনপি একবার বলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার। যেহেতু এটা সংবিধান থেকে সুপ্রিম কোর্টের রায়ে নিষ্পত্তি হয়ে গেছে। তাই এ প্রক্রিয়ায় যাওয়ার কোন সুযোগ নেই। তাই তারা এখন সহায়ক সরকারে গেছে। অন্তবর্তীকালীন সরকার তো সহায়ক সরকারের ভূমিকায় থাকে। তাদের মূল কথা হলো ইয়াজউদ্দিনের আহমেদের নেতৃত্বে সরকারের মতো একটি সরকার, যাতে ছলচাতুরি করে বিএনপি ক্ষমতায় আসতে পারে। এদেশের ইতিহাসেই দেখা যায় বিএনপি নির্বাচনকে কলুষিত করেছে, মানুষের ভোটাধিকারকে ভুলণ্ঠিত করেছে। ষড়যন্ত ও নীলনকশার মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছে।

বিএনপি তো ইভিএমের বিরোধিতা করছে...

পৃথিবীর সকল উন্নত দেশেই নির্বাচন হচ্ছে ইভিএমে। বাংলাদেশও উন্নত হচ্ছে। আমি যখন উন্নতির দিকে যাচ্ছি তখন তো আমি বিজ্ঞান, প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে সামনের দিকে যাব। তারা কেনো উন্নতি ও প্রগতিকে তাদের প্রতিবদ্ধকতা মনে করে? প্রযুক্তি ও বিজ্ঞান কিন্তু নিরপেক্ষ। যন্ত্র আওয়ামী লীগ ও বিএনপি চিনে না। তারা কোন জায়গায় ভোট দিয়েছেন সেটা চিনে। তারা চাইছে পেশীশক্তি দিয়ে নির্বাচনী ফলাফলকে অন্যায়ভাবে প্রভাবিত করতে। তাই তারা বিজ্ঞানের ব্যবহারকে নিরুৎসাহিত করতে চাইছে।

এতো অল্প সময়ে সারাদেশে ইভিএমে নির্বাচন সম্ভব কি না, সে প্রশ্নও তো আছে।

আমরা বলছি, ইভিএম হওয়া উচিত। ইভিএমে নির্বাচন হলে আরও বেশি স্বচ্ছ হবে। যদি সারাদেশে সম্ভব না হয়, তাহলে বিভিন্ন অংশে ব্যবহার করা যেতে পারে। এখন হয়তো দেশের ৩০ ভাগ অংশে ইভিএম ব্যবহার করা যেতে পারে। পরের নির্বাচনে হয়তো তা আমরা শতভাগে পরিণত করতে পারব। আমাদেরকে তো শুরু করেতে হবে।

সংসদীয় আসন পুর্নবিন্যাসে আপনাদের মতামত কী?

আসন পুর্নবিন্যাসের সাথে আদমশুমারির সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। আমাদের দেশে সর্বশেষ আদমশুমারি হয়েছে ২০১১ সালে। বিগত নির্বাচনের আগেও তো আসন পুর্নবিন্যাস হয়েছে। কিন্তু এখন কোন আদমশুমারি অনুযাযী তা হবে? ২০২১ সালের আগেতো আর আদমশুমারি হচ্ছে না। এখন আদমশুমারির দাবি অযৌক্তিক। আসন পুর্নবিন্যাসের আপিল নিষ্পতি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। আর আপিল নিষ্পতি না হলে তো নির্বাচন আটকে যাবে। আজ যারা আসন পুর্নবিন্যাসের দাবি করছেন তারা আগামী নির্বাচনকে অনিশ্চিত করে দেয়ার জন্য চাইছেন।

বিএনপি নির্বাচনে সেনাবাহিনীকে নির্বাহী ক্ষমতা দেয়ার পক্ষে। আপনারা এর বিরোধী কেন?

উপমহাদেশের অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের দেশের নির্বাচন শান্তিপূর্ণ। নির্বাচন আমাদের দেশে উৎসব। আমাদের দেশে ২০০১ সালে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সংজ্ঞা বদলানো হয়েছে। বিভিন্ন বাহিনীর কাজের এবং প্রশিক্ষণের ভিন্নতা রয়েছে। তাই তাদের মাইন্ডসেটের ভিন্নতাও রয়েছে। সেনাবাহিনী ও পুলিশের কাজের ধরণের ও ক্ষেত্র ভিন্ন। সেনাবাহিনী বিশেষায়িত বাহিনী। তাই তাদের নির্বাচনে আনা সঠিক কোন বিষয় নয়। তাদের আনতে হলে কোন পরিস্থিতি আনতে হতে পারে। যদি নির্বাচন কমিশন ও সিভিল অ্যাডমিনিস্টেসন মনে করে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়মিত সদস্যদের দ্বারা কোনভাবে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না, তখন তারা চাইতে পারেন। চাওয়ার বিষয়টি আমাদের ফৌজদারি কার্যবিধিতেই রয়েছে।

আগামী নির্বাচনে কোন অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা করছেন কি না?

আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য হবে। তবে সেক্ষেত্রে সকল রাজনৈতিক দলকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। বিএনপি-জামায়াত ২০১২, ১৩ ও ১৪ সালে যেভাবে সহিংসতা করেছে এবং জনগণের জানমাল নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে। এখন তা আবারও দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করে তাহলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী আইনানুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। তবে আশা করি, তারা এ পরিস্থিতি সৃষ্টি করবে না। আগামী নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিবেন এটা আমাদের প্রত্যাশা। সেই নির্বাচনের ফলাফল যা হবে তা সকল রাজনৈতিক দল মেনে নিয়ে গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রা এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করবে।

(চলবে)

ঢাকাটাইমস/২২অক্টোবর/টিএ/ডব্লিউবি

সংবাদটি শেয়ার করুন

সাক্ষাৎকার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

সাক্ষাৎকার এর সর্বশেষ

স্বাধীনতার পর থেকেই দেশ গড়তে কাজ করে যাচ্ছেন প্রকৌশলীরা: এস. এম. মঞ্জুরুল হক 

‘স্থিতিশীল সামষ্টিক অর্থনীতির স্বার্থে সরকারকে ভারসাম্যমূলক নীতি-উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে’: ড. আতিউর রহমান

প্রতি মুহূর্তেই মনে হচ্ছিল আর্মিরা ধরে নিয়ে যাবে: ফরিদা খানম সাকি

দাম বাড়ালে এতক্ষণে কার্যকর হয়ে যেত: ক্যাব সহ-সভাপতি নাজের হোসাইন

জন্ম থেকেই নারীদের যুদ্ধ শুরু হয়: নারী উদ্যোক্তা ফরিদা আশা

নারীরা এখন আর পিছিয়ে নেই

ভবন নির্মাণে সিটি করপোরেশনের ছাড়পত্র নেওয়ার নিয়ম করা উচিত: কাউন্সিলর আবুল বাশার

তদারকি সংস্থা এবং ভবন নির্মাতাদের দায়িত্বশীল হতে হবে: অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান

বেইলি রোডের আগুনে রাজউকের ঘাটতি রয়েছে: মো. আশরাফুল ইসলাম

নতুন করে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হয়ে ভবন অনুমোদন দিতে হবে: ইকবাল হাবিব

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :