চাকরি দেওয়ার জন্য ফ্রেশ গ্র্যাজুয়েট খুঁজছি

ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০৩ নভেম্বর ২০১৭, ১৩:৪২ | প্রকাশিত : ৩০ অক্টোবর ২০১৭, ০৮:০৯

মাইক কাজী। বিশ্বখ্যাত তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান কাজী আইটি সেন্টার লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা। কনসালটিং, টেকনোলজি, আউটসোর্সিং ও পরবর্তী প্রজন্মের সেবা দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। তার মতে, যোগ্য এমন শত শত লোককে নিরন্তর চাকরি দিতে পারবেন তিনি। শুধু প্রয়োজন গ্র্যাজুয়েশন আর ইংরেজি ভালো পড়তে, লিখতে ও বুঝতে পারা।

তার ব্যবসার শুরুটা চমকে যাওয়ার মতোই। তিনি তখন যুক্তরাষ্ট্রে, দশম শ্রেণিতে পড়েন। ৪০০ ডলারে একটি গাড়ি কিনে তা পরে ১২০০ ডলারে বিক্রি করে দেন। এই মুনাফাটা তাকে আকর্ষণ করে।

তার আইটি ব্যবসায় আসাটাও আগে থেকে পরিকল্পনা করে নয়। নিজের প্রতিষ্ঠানের জন্য ওয়েবসাইট বানাতে গিয়ে এই নতুন দিশার সন্ধান পান মাইক কাজী। আজ শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই তার প্রতিষ্ঠানের হয়ে কাজ করেন ৭০০ মার্কিন নাগরিক। আর বাংলাদেশে কাজী আইটি যাত্রা করে ২০১০ সালে। তার প্রতিষ্ঠানের পরিবেশও ব্যতিক্রমী।

১৯৮৭ সালের দিকে পরিবারের সঙ্গে যখন যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান তখন তিনি পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র। কয়েক বছর পর তার পরিবার বাংলাদেশে চলে এলেও তিনি থেকে যান সেখানে। ব্যবসার পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রে এমবিএম শেষ করেন।

কাজী আইটির প্রধান নির্বাহী মাইক কাজী তার ব্যবসার শুরু ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেছেন ঢাকাটাইমসের সঙ্গে। একান্ত সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন নিজস্ব প্রতিবেদক জহির রায়হান।

ঢাকাটাইমস: আপনি যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবসা করছেন। সেখান থেকে বাংলাদেশে ব্যবসা করতে আসার পেছনে কী কাজ করেছে?

মাইক কাজী: জন্মভূমির প্রতি আমার কিছু দায়িত্ব আছে। সেটা একটা দিক। এ ছাড়া আমি এখানে আইটি সেক্টরের ভবিষ্যৎ দেখছি। বিপিও (বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিং) দেখেছি এখানে। সরকার ২০২১ সালের মধ্যে আইটি সেক্টরে পাঁচ বিলিয়ন ডলার টার্গেট করেছে। কিন্তু আমি এখানে দেখছি ৫০ বিলিয়ন ডলার মার্কেট।

ঢাকাটাইমস: আপনাদের কাজের ধরনটা সম্পর্কে যদি বলেন...

মাইক কাজী: আমরা ইউএসের বিভিন্ন ব্যাংকের কাজ বাংলাদেশে বসে করে দেই। ব্যাংকের বিভিন্ন আইটি সাপোর্ট আছে, মর্ডগেজের কাজ, তাদের বাড়িঘরের লোন আছে- এগুলো মেনটেনেন্স বাংলাদেশে বসে করি। অমরা অনলাইনেই কাজগুলো করে থাকি। আমাদের প্রতিষ্ঠান ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকে। সেখানকার ব্যাংকের কাছে মর্ডগেজ করা বাড়িগুলো মেনটেনেন্স করার জন্য আমাদের লোক নিয়োগ দেয়া আছে। বাংলাদেশে বসে তাদের কাজগুলো মনিটরিং করা হয়। কখনো স্কাইপি, কখনো ফোনে ও বিভিন্ন অনলাইন মাধ্যমে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়।

ঢাকাটাইমস: আপনাদের কাজের চাহিদা কেমন?

মাইক কাজি: আমাদের যে কাজ আসছে তার ১৫ শতাংশও আমরা শেষ করতে পারছি না। আমাদের ৬০-৭০ শতাংশ বাকি আছে মার্কেট ম্যাচিউরিটি করার জন্য।

ঢাকাটাইমস: তাহলে তো আপনাদের প্রচুর কর্মী দরকার। কাদের অগ্রাধিকার দেবেন?

মাইক কাজী: হ্যাঁ, আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে আমি কাজী আইটিকে দুই বিলিয়ন ডলারের কোম্পানি হিসেবে দেখতে চাই। বেশি করে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে চাই।

যুবকরা আমার সম্পদ, তাদেরই আমরা খুঁজছি। ফ্রেশ গ্রাজুয়েট বা যারা গ্রাজুয়েশন শেষ করেছে, তাদের আমাদের খোঁজা লাগবে না। উল্টো আমি তাদের খুঁজছি। আমাদের এইচআর টিম আছে। ফেসবুকে আমরা কয়েক হাজার ডলার মাসে খরচ করি তাদের খোঁজার জন্য। তাদের ওয়ান বাই ওয়ান খুঁজছি। তারা যদি নিজেরাই আসে তাহলে তাড়াতাড়ি হতো।

আমাদের কাজের অভাব নেই। আজ যদি আপনি ১০০ লোক দেন আমি সবাইকে নিয়োগ দিতে পারব। শুধু দেখব তারা ভালো ইংরেজি পড়তে, লিখতে ও বুঝতে পারে। ইংরেজিতে স্পিকিং অতটা লাগবে না। এমন যোগ্যতার আমাকে ১০০ লোক দিন, আমি তাদের নিয়োগ দেব। আমি তাদের জন্য কালকে আমেরিকায় আরেকটা কোম্পানি কিনব। কিনে আবার ১০০ লোক নিয়োগ দিতে পারব।

ঢাকাটাইমস: তার মানে আপনার সুযোগ আছে চাকরি দেওয়ার, কিন্তু সে অনুযায়ী যোগ্য লোক পাচ্ছেন না?

মাইক কাজী: পাচ্ছি, তবে আরও দ্রুত পেতে হবে। আর সেটার জন্য আমাদের আরও মার্কেটিং করতে হবে। আমাদের বোঝাতে হবে যে আইটি সেক্টরে ভবিষ্যৎ আছে। এটাকে আরও ব্র্যান্ডিং করতে হবে।

ঢাকাটাইমস: সম্প্রতি শেষ হওয়া যশোরে চাকরি মেলায় আপনি গিয়েছেন। আপনার সেখানকার অভিজ্ঞতা একটু শুনি।

মাইক কাজী: যশোরে শেখ হাসিনা সফটওয়ার টেকনোলজি পার্কে আমি ম্যাজিক দেখেছি। এত সুন্দর করে হাইটেক পার্ক করা হয়েছে, মনেই হয়নি আমি বাংলাদেশের মধ্যে ছিলাম। আমরা এখন ফরেন ক্লাইন্টদের যশোরে এনে দেখাতে পারব।

সেদিন ৩০-৪০ হাজার লোক সেখানে গিয়েছিল। তারা গিয়ে দেখেছে এত বড় বড় দুই-তিনটি বিল্ডিং আছে দেশের মধ্যে। এটা অনেকে জানত না। হ্যাঁ, ওখানে কিছু সমস্যা দেখা গেছে। যে আয়োজন করেছিল তার চেয়ে বেশি লোক এসেছে। আমি এটাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছি। যশোরে যারা গেছে তারা ভেবেছে আইটিতে তাদের একটা ক্যারিয়ার আছে। আগে তো এই স্বপ্ন দেখতে পারত না। দেখত ব্যাংকে জব করবে, না হয় কোনো কোম্পানিতে মার্কেটিংয়ে কাজ করবে। এখন তারা সেলসম্যান না হয়ে একটা অফিসে বসে পাঁচ-দশ গুণ বেশি আয় করতে পারার স্বপ্ন পেয়েছে।

ঢাকাটাইমস: যশোরে চাকরি মেলায় আপনার প্রতিষ্ঠান থেকে কাউকে চাকরি দেয়া হয়েছে?

মাইক কাজী: সেটা একটা চমৎকার অভিজ্ঞতা। আমার জীবনে এমন ঘটনা প্রথম ঘটল। আমি একটি স্টেজে ছিলাম, বিভিন্ন কোম্পানির প্রধানরা ছিলেন। বেসিসের সভাপতি মোস্তাফা জব্বার ছিলেন। আমি ৮০ জনের মতো প্রার্থীকে স্টেজে ডেকেছিলাম। মজাদার কিছু প্রক্রিয়া শেষে ১৫ জনের মতো টিকেছিল। তাদের বলেছি একাডেমিক জ্ঞানের বাইরে আর কী যোগ্যতা আছে তাদের। একজন বলল সে গান গাইতে পারে। গান গেয়ে আমাদের মুগ্ধ করল। তার পোশাক ভালো, তার কনফিডেন্ট ভালো, একাডেমিক যোগ্যতা আছে। তাকে আমি সিলেক্ট করলাম। এরপর যাদের ইংরেজিতে টাইপিং স্পিড ভালো তাদের থাকতে বললাম। এতে অনেকে বাদ পড়ল। এই পর্যায়ে আরও এক মজার প্রক্রিয়া শেষে আটজন টেকে, তাদের আমরা নিয়োগ দিয়েছি।

ঢাকাটাইমস: আপনার বক্তব্যে পোশাকের ব্যাপারটি এসেছে। চাকরিপ্রার্থীদের পোশাক একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

মাইক কাজী: চাকরিপ্রার্থীদের আমি বলব, বিয়ে করতে যাচ্ছেন বা বিয়ের বরযাত্রী হিসেবে যাচ্ছেন এমন সাজে যাবেন কোনো চাকরির ইন্টারভিউর জন্য। কারণ প্রথমে দেখনদারি তারপর গুণবিচারি। প্রথম দর্শনে পছন্দ না হলে কীভাবে চাকরি দেবে। ঠিকমতো বসতে হবে। আই কনটাক থাকতে হবে। একটা টি-শার্ট পরে এসে এলোমেলোভাবে যদি ইন্টারভিউ দিতে বসে যান, তাহলে তো হবে না।

ঢাকাটাইমস: যশোরের আইটি পার্কে আপনার প্রতিষ্ঠানের জন্য জায়গা বরাদ্দ নিচ্ছেন কি না?

মাইক কাজী: আমাদের রাজশাহীতে অফিস আছে। আমাদের পরিকল্পনা আছে যশোরে অফিস নেওয়ার। যশোরের যে আটজনকে আমরা নিয়োগ দিয়েছি তারা যদি ভালো করে তাহলে আমরা যশোরে দ্রুত অফিস নেব। আমরা ৬ হাজার স্কয়ার ফুটের অফিস নিচ্ছি রাজধানীর সোবহানবাগে। (চলবে)

(ঢাকাটাইমস/৩০অক্টোবর/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

সাক্ষাৎকার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

সাক্ষাৎকার এর সর্বশেষ

স্বাধীনতার পর থেকেই দেশ গড়তে কাজ করে যাচ্ছেন প্রকৌশলীরা: এস. এম. মঞ্জুরুল হক 

‘স্থিতিশীল সামষ্টিক অর্থনীতির স্বার্থে সরকারকে ভারসাম্যমূলক নীতি-উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে’: ড. আতিউর রহমান

প্রতি মুহূর্তেই মনে হচ্ছিল আর্মিরা ধরে নিয়ে যাবে: ফরিদা খানম সাকি

দাম বাড়ালে এতক্ষণে কার্যকর হয়ে যেত: ক্যাব সহ-সভাপতি নাজের হোসাইন

জন্ম থেকেই নারীদের যুদ্ধ শুরু হয়: নারী উদ্যোক্তা ফরিদা আশা

নারীরা এখন আর পিছিয়ে নেই

ভবন নির্মাণে সিটি করপোরেশনের ছাড়পত্র নেওয়ার নিয়ম করা উচিত: কাউন্সিলর আবুল বাশার

তদারকি সংস্থা এবং ভবন নির্মাতাদের দায়িত্বশীল হতে হবে: অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান

বেইলি রোডের আগুনে রাজউকের ঘাটতি রয়েছে: মো. আশরাফুল ইসলাম

নতুন করে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হয়ে ভবন অনুমোদন দিতে হবে: ইকবাল হাবিব

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :