‘কৃষি ব্যবস্থাপনায় প্রযুক্তিগত উন্নয়নে জোর দিতে হবে’

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ১০ অক্টোবর ২০১৮, ২০:২৭

‘দেশের মোট কর্মসংস্থানের ৪০ শতাংশ কৃষিকাজে নিয়োজিত। বিপুল সংখ্যক মানুষ নিয়োজিত থাকলেও মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) কৃষিখাতের অবদান মাত্র ১৪ দশমিক ৩৩ শতাংশ। প্রযুক্তিগত উন্নয়ন না হওয়ায় কৃষি থেকে কাঙ্খিত সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। টেকসই উন্নয়নে তাই ধানভিত্তিক কৃষিখাদ্য ব্যবস্থাপনা করতে হবে।’

বুধবার রাজধানী আগারগাঁওয়ে পরিকল্পনা কমিশনের এনইসি মিলনায়তনে পরামর্শ সভায় এসব কথা বলেন বক্তারা।

সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান।

ধানভিত্তিক কৃষিখাদ্য ব্যবস্থাপনায় বিনিয়োগের গুরুত্ব ও এক্ষেত্রে বিনিয়োগের মাধ্যমে কিভাবে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা যায় এবং বিনিয়োগের জন্য যৌথ অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে কিভাবে অর্থ সংস্থান করা যায় তা নিয়ে সভায় আলোচনা হয়। এসডিজি অর্জনে ধানভিত্তিক কৃষিখাদ্য ব্যবস্থাপনা কিভাবে ভূমিকা রাখতে পারে এবং এর জন্য কতটুকু অর্থ সহায়তা প্রয়োজন সেসব বিষয়ও তুলে ধরেন বক্তারা। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) এবং ইন্টারন্যাশনাল রাইস রিসার্চ ইনস্টিটিউট (ইরি) যৌথভাবে এ সভার আয়োজন করে।

বক্তারা বলেন, কৃষিক্ষেত্রে গবেষণা ও নতুন উদ্ভাবন আনতে হবে। প্রযুক্তিকে কাজে লাগাতে হবে, পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন ও কৃষকরা যেন ন্যায্যমূল্য পান, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। খরা, লবণাক্ততা ও জলাবদ্ধতাসহ বিভিন্ন প্রতিকূল পরিবেশে সহনশীল ধানের জাত উদ্ভাবন করতে হবে।

অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, বর্তমান সরকার কৃষিখাতে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহার করতে বদ্ধপরিকর। উদ্ভাবনী কৃষিখাদ্য উৎপাদন ও বিতরণ জাতীয় খাদ্য ও পুষ্টির নিরাপত্তা বৃদ্ধি করছে। এর ফলে দারিদ্র্য বিমোচনসহ গ্রামীণ জীবন-জীবিকার উন্নয়ন হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘বন্যা-ঝড়সহ অনেক প্রতিবন্ধকতা থাকলেও ধান উৎপাদনে আমরা ভালো করেছি।’ গবেষকদের প্রতিকূল পরিবেশে ও সব সময় যেন ধান উৎপাদিত হয়, সেই জাত উৎপাদনেরও তাগিদ দেন অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ।

সভায় ‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনে বাংলাদেশের নীতিমালাসমূহের অগ্রাধিকার’ শীর্ষক পত্র উপস্থাপন করেন পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) অধ্যাপক ড. শামছুল আলম। তিনি বলেন, মোট কর্মসংস্থানের ৪০ শতাংশ কৃষি সেক্টরে। কিন্তু তরুণরা এ সেক্টরে কাজ করতে আগ্রহী না। যারা কাজ করছেন, তাদের বেশিরভাগই বয়স্ক ও মধ্যবয়স্ক। প্রযুক্তিগত উন্নয়নের মাধ্যমে তরুণদেরও এ খাতে আগ্রহী করে তুলতে হবে।

ড. শামছুল আলম বলেন, নেদারল্যান্ড কৃষি ও খাদ্যপণ্য রপ্তানি করে বছরে ৫৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করে। সেখানে বাংলাদেশের মোট রপ্তানি আয় ৩৫ বিলিয়ন ডলারের মতো।

তিনি বলেন, ‘৪১ হাজার ৫৪৩ বর্গকিলোমিটারের দেশ নেদারল্যান্ড। তারা পারলে আমরা কেন পারবো না। এর জন্য প্রয়োজন উন্নত নিবিড় কৃষিপদ্ধতি। আর এর জন্য ‘ডেল্টা প্লান-২১০০’ হাতে নিয়েছে সরকার। এ প্লান প্রথম করেছে নেদারল্যান্ড আর বাংলাদেশ হলো দ্বিতীয়।’

ড. শামছুল আলম বলেন, কৃষিক্ষেত্রে রিসার্চ ও ইনোভেশন প্রয়োজন। আর যারা কাজ করবেন, তাদের এ সম্পর্কে জ্ঞান থাকতে হবে। আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করতে হবে।

তিনি বলেন, কৃষিক্ষেত্রে অবদানের জন্য জিডিপিতে ১ শতাংশ গ্রোথ হলে দারিদ্র্য কমতে সহায়তা করে দশমিক ৫ শতাংশ। কৃষি সেক্টরের গ্রোথ অন্য যেকোনো সেক্টরের চেয়ে বেশি দারিদ্র্য কমাতে সহায়তা করে।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নাসিরুজ্জামান সভায় বলেন, ‘অতিরিক্ত জনসংখ্যা আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ। যে কৃষিপণ্য উৎপাদিত হয়, তা থেকে রপ্তানি আমরা কমই করতে পারি। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অনেক প্রাকৃতিক দুর্যোগ হয়। ঝড়-বন্যা বেশি হচ্ছে, সমুদ্র উপকূলবর্তী জেলাগুলোর পানিতে লবণাক্ততা দেখা দিচ্ছে। এগুলো আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ।’

তিনি বলেন, সরকার কৃষিতে বিনিয়োগ করছে। কিন্তু সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খাতকেও বেশি করে এ সেক্টরে বিনিয়োগ করতে হবে। কৃষিক্ষেত্রে বিনিয়োগ লাভজনক। সরকার এখানে বিভিন্ন রকম সুযোগ দেয়।

পরামর্শ সভায় অংশ নেন বাংলাদেশে কর্মরত দাতা সংস্থার দেশীয় প্রতিনিধিরা। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয়, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়, দেশীয় ও আর্ন্তজাতিক উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার সদস্য, ধানবিজ্ঞানী, বিশেষজ্ঞ এবং নীতি-নির্ধারকরাও সভায় উপস্থিত ছিলেন।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব এবং উইং চিফ সুলতানা আফরোজের সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য দেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সচিব মনোয়ার আহমেদ।

পরামর্শ সভায় বলা হয়, বাংলাদেশ কৃষিভিত্তিক দেশ এবং এ খাতে ব্যাপক সফলতা রয়েছে। বিশেষ করে ধানভিত্তিক কৃষি খাদ্য ব্যবস্থাপনায় গবেষণার মাধ্যমে আরও উন্নয়ন ঘটিয়ে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা যাবে। ধানভিত্তিক কৃষিখাদ্য ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এসডিজির যে সকল ক্ষেত্রে অবদান রাখা যায় তা হলো -সকল ধরনের দারিদ্র্যের অবসান (এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা ১) , ক্ষুধার অবসান, খাদ্য নিরাপত্তা ও উন্নত পুষ্টিমান অর্জন, টেকসই কৃষির প্রসার (এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা ২), অসমতা কমিয়ে আনা (এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা ১০), জলবায়ু পরিবর্তন ও এর প্রভাব মোকাবেলায় জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণ (এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা

১৩)।

‘ধান ভিত্তিক কৃষি খাদ্য ব্যবস্থাপনা উন্নয়নের মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন এবং যেসব ক্ষেত্রে ইন্টারন্যাশনাল রাইস রিসার্চ ইনস্টিটিউট (ইরি) অবদান রাখতে পারে’ শীর্ষক পত্র উপস্থাপন করেন ইরি’র দক্ষিণ এশীয় প্রতিনিধি ড. নাফিস মিয়া। এছাড়া বাংলাদেশ-ইরি পঞ্চবার্ষিক (২০১৮-২৩) কর্মপরিকল্পনা কার্যক্রম বাস্তবায়নের মাধ্যমে পরিবর্তন আনয়ন’ শীর্ষক পত্র উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনিস্টিটিউটের (ব্রি) এর মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবীর। তিনি বলেন, কৃষিক্ষেত্রে গবেষণায় বরাদ্দ আরও বাড়ানো প্রয়োজন। কারণ, প্রতিটি সেক্টরের সঙ্গে কৃষি সেক্টর ওতপ্রোতভাবে জড়িত।

(ঢাকাটাইমস/১০অক্টোবর/জেআর/এআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

অর্থনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

অর্থনীতি এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :