মায়ের কথা বলে কাঁদলেন প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ০৯ ডিসেম্বর ২০১৭, ১৩:৩০

বেগম রোকেয়া দিবসে সরকারি আনুষ্ঠানিকতায় নারীর অবদান তুলে ধরতে মা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের প্রসঙ্গ তুলে ধরেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এক পর্যায়ে আসল ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের প্রসঙ্গ। খুনিরা সেদিন বেগম মুজিবকে তাদের সাথে যাওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল বলে জানান তার মেয়ে। আর সেই স্মৃতিচারণ করার সময় গলার স্বর ভেঙে আসে তার। পরে চোখ মুছে তিনি শুরু করেন তার বক্তব্য।

শনিবার রাজধানীতে রোকেয়া পদক বিতরণ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছিলেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় নারীর উন্নয়নে তার নেয়া নানা পদক্ষেপের পাশাপাশি তার বাবা-মায়ের চেষ্টার কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ধানমন্ডি ৩২ নম্বর বাড়িতে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার কথাও উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা। সে রাতে তিনি ও তার ছোট বোন শেখ রেহানা বিদেশে থাকায় বেঁচে যান।

শেখ হাসিনা বলেন, “যখন আমার বাবাকে হত্যা করল, হত্যার পর খুনিরা আমার মাকে বলেছিল, ‘আমাদের সাথে চলেন’। আমার মা বলেছিলেন, ‘আমি কোথাও যাব না। তোমরা ওনাকে গুলি করে মেরেছ, আমাকেও গুলি করে মার। আমি এখান থেকে এক পা নড়ব না।’

‘এখানে যদি অন্য কোনো সাধারণ মানুষ হতো, নিজের জীবন ভিক্ষা চাইত। অথবা নিজের জীবন বাঁচাবার চেষ্টা করত। আমার মা তা করেনি।’ এ কথা বলার সময় শেখ হাসিনার গলার স্বরে ছিল কান্নার ঢেউ। তার চোখ ভিজে আসে জলে। সে সময় দর্শক সারিতে উপস্থিত ছিলেন তার ছোট বোন শেখ রেহানাও। দুই বোনই একসঙ্গে চোখের পানি ফেলেন। আর দর্শক সারিতে নেমে আসে নীরবতা।

কিছুক্ষণ চুপচাপ থেকে নিজেকে সামলে নিয়ে আবার বক্তব্য শুরু করেন প্রধানমন্ত্রী। কথা প্রসঙ্গ বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে পাকিস্তান সরকারের করা আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, ৭ মার্চের ভাষণ প্রসঙ্গ, মুক্তিযুদ্ধে নজিরবিহীন ধর্ষণ, নির্যাতন, যুদ্ধের পর নির্যাতিতা নারীদের জন্য বঙ্গবন্ধু এবং বেগম মুজিবের নানা প্রসঙ্গ উঠে আসে।

প্রধানমন্ত্রী জানান, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা চলাকালে বঙ্গবন্ধুকে প্যারোলে মুক্তি দেয়ার প্রস্তাব নিয়ে সে সময় তার মায়ের কাছে এসেছিলেন কয়েকজন। বলেছিলেন, বিধবা হতে না চাইলে যেন বঙ্গবন্ধুকে তিনি বুঝান। কিন্তু সে প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিলেন বেগম মুজিব। বলেছিলেন, আরও যারা আসামি আছেন, তাদের স্ত্রীর যে পরিণতি হবে, তারও তাই হবে। তিনি এতে পরোয়া করেন না।

৭ মার্চের ভাষণের আগে বঙ্গবন্ধুর কাছে অনেকেই নানা প্রসঙ্গ নিয়ে এসে সেগুলো তুলে ধরার প্রস্তাব দেয়ার সময়ও বেগম মুজিব তার সঙ্গে কথা বলেন। স্বামীকে তিনি কারও কথা না শুনে নিজের মতো করে বলার পরামর্শ দেন। আর বঙ্গবন্ধু তাই করেছিলেন বলে জানান শেখ হাসিনা।

বিজয়ের পর যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, সাধারণ মানুষ, নির্যাতিতা নারীর চিকিৎসায় বিভিন্ন দেশ থেকে চিকিৎসক ও নার্স নিয়ে আসা এবং তাদের পুনর্বাসনে বঙ্গবন্ধুর উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। জানান, তার মাও নিজে এসব উদ্যোগে অংশ নিয়েছেন।

‘আমার মা কিন্তু কোথাও যেতেন না, কোনো জায়গায়, কখনও তাকে পাবেন না, কিন্তু এই একটা কাজে (নির্যাতিতা নারীদের পুনর্বাসন) তিনি সব সময় এগিয়ে এসেছেন। বিভিন্ন জায়গায় মেয়েদেরকে নিজে দেখতে গেছেন। তিনি নিজে দাঁড়িয়ে থেকে তাদের বিয়ে দেয়া শুরু করলেন। তাদের পরিবারকে বোঝান, নিজে গহনা কিনে প্রত্যেকটা মেয়েকে সহযোগিতা দিয়ে বিয়ে দেয়া থেকে শুরু করে তাদের পুনর্বাসনের কাজ যেন সুষ্ঠুভাবে হয়, সে খবর সব সময় তিনি রাখতেন।’

ঢাকাটাইমস/০৯ডিসেম্বর/ডব্লিউবি

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

জাতীয় এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :