ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী উদ্যানের উদ্বোধন

মহিউদ্দিন মিশু, ত্রিপুরা থেকে ফিরে
  প্রকাশিত : ১৭ ডিসেম্বর ২০১৭, ১৮:২৩
অ- অ+

ঘড়ির কাটা তখন দুপুর ১টা ছুঁই ছুঁই। স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রের শিল্পী মনোরঞ্জন ঘোষালের কন্ঠে পরিবেশিত হচ্ছে- ‘পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে রক্ত লাল, রক্ত লাল, রক্ত লাল। জোয়ার এসেছে জন-সমুদ্রে রক্ত লাল, রক্ত লাল, রক্ত লাল’-এরই মধ্যে হাজারো জনগণের ভালোবাসা ঠেলে মঞ্চে উঠেন ত্রিপুরা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার।

শনিবার বিজয় দিবসের দিন রাজ্যের দক্ষিণ ত্রিপুরার বিলোনীয়ার রাজনগর ব্লকের চোত্তাখোলায় আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন হলো বহু প্রতীক্ষিত ‘ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী উদ্যান’।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের স্মৃতিজড়িত ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী উদ্যান উদ্বোধন করেন ত্রিপুরা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার। মৈত্রী উদ্যানের উদ্বোধনকালে ভারত ও বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উপর গুরুত্বারোপ করে বক্তব্য দেন মুখ্যমন্ত্রী। মুক্তিযুদ্ধের প্রসঙ্গ থেকে শুরু করে দু’দেশের বাণিজ্য, এ অঞ্চলের দু’পারের মানুষের ভাষা, কৃষ্টি সংস্কৃতি এসব বিষয়ও মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারের বক্তব্যে উঠে আসে। বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারের মধ্যে দু’দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় যেমন উন্নতি ঘটবে, তেমনি সংস্কৃতির আদান-প্রদানেও দু’দেশের সুসম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হয়ে উঠবে বলে আশা প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ত্রিপুরার যোগাযোগের বিষয়টি ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে অসম্পূর্ণ অন্যান্য বিষয় যুক্ত করে ফেলে রাখা ঠিক হবে না। খুব দ্রুত চট্টগ্রামের সঙ্গে ত্রিপুরার যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপন করতে চায়।

বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে বাণিজ্যিক প্রসারের প্রবল সম্ভাবনার উল্লেখ করে মুখ্যমন্ত্রী দু’দেশের প্রধানমন্ত্রীকে উদ্যোগী হতে আহ্বান জানিয়েছেন।

মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার বলেন, ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের বিলোনীয়ার চোত্তাখোলায় নির্মিত এই উদ্যান একাত্তরে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বহন করছে।

শনিবার বিজয় দিবসের দিনে এই উদ্যান দু’দেশের মানুষের বন্ধুত্ব ও আত্মিক সম্পর্কে সমর্পিত করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। এসময় তিনি বলেন, ১২১ কানি জায়গার উপর গত ৭ বছরে ধীরে ধীরে গড়ে উঠেছে ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী উদ্যান। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পেক্ষাপট বর্ণনা করে ভারত তথা ত্রিপুরা রাজ্যের অবদানের কথা উল্লেখ করেন মুখ্যমন্ত্রী।

চোত্তাখোলায় মুক্তিবাহিনীর বেস ক্যাম্প থেকে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়া এবং রাজ্যের অন্যান্য বেস ক্যাম্পের কথাও প্রসঙ্গক্রমে তুলে ধরেন তিনি। বাংলাদেশ স্বাধীনতার জন্য তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান ভারতের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীসহ রাজ্যের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী শচীন্দ্রলাল সিং এবং রাজ্যবাসীর অবদানের কথাও স্মরণ করেন মুখ্যমন্ত্রী।

রাজ্য সরকার তার ভাষণের বেশির ভাগ সময় ছিল বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও শরণার্থীদের ভারত তথা ত্রিপুরার জনগণের সহযোগিতা নিয়ে। মুখ্যমন্ত্রী ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী চুক্তির মাঝে বাংলাদেশ নৌবন্দর ব্যবহার নিয়ে যেন অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিবেচনা করা হয় এই বিষয়ে উভয় দেশের প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে জোর দাবি করেন।

মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার বলেন, আখাউড়া-আগরতলা রেলপথ যোগাযোগ ব্যবস্থা এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে সাব্রুম দিয়ে মৈত্রী সেতুর কাজ হাতে নেয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরের কাছে ডাবল লেনের পর চার লেনের দাবি করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, সাব্রুম পর্যন্ত রেল পৌঁছে যাবে। আন্তর্জাতিক মানের রেল স্টেশন গড়ে উঠবে।

ওই অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী বাদল চৌধুরী তার বক্তব্যে বলেন, পূর্বোত্তর ভারতকে বাংলাদেশ দারুণভাবে সহযোগিতা করছে। বিশেষ করে এ রাজ্যের উগ্রবাদী সমস্যা নিয়ে বাংলাদেশে ঘাঁটিগুলো নষ্ট করে দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার।

২০১০ সালের ১১ নভেম্বর বাংলাদেশের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপুমনি চোত্তাখোলায় ‘ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী উদ্যান’র ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।

গত ৭ বছর এ উদ্যানের কাজ শেষে শনিবার বিজয় দিবসের দিন তা উদ্বোধন হয়।

মৈত্রী অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. মুনতাসির মামুন, মেজবাহ কামাল ছাড়াও ত্রিপুরা রাজ্যের বনমন্ত্রী নরেশ জামাতিয়ার সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন- রাজ্যের পর্যটনমন্ত্রী রতর ভৌমিক, সাংসদ জীতেন্দ্র চৌধুরী, শংকর প্রসাদ দত্ত, রাজ্যের সিপিআই (এম) নেতা গৌতম দাস, বিধায়ক সুধন দাস প্রমুখ।

(ঢাকাটাইমস/১৭ডিসেম্বর/প্রতিনিধি/এলএ)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর দৃষ্টিশক্তি উন্নত করার লক্ষ্যে ব্র্যাক ব্যাংক ও ভিশনস্প্রিং
ব্যাংককে মির্জা ফখরুলের চোখের অস্ত্রপাচার সম্পন্ন 
যাত্রাবাড়ীর দনিয়ায় ব্যবসায়ীর স্ত্রীকে তুলে নিল কারা?
সালথায় নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ নেতা গ্রেপ্তার
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা