দিনাজপুর মাইন বিস্ফোরণ দিবস আজ

নিজস্ব প্রতিবেদক, দিনাজপুর
  প্রকাশিত : ০৬ জানুয়ারি ২০১৯, ০৯:২০
অ- অ+

দিনাজপুরের মহারাজা বিদ্যালয় মাইন বিস্ফোরণ ট্রাজেডি দিবস আজ। ১৯৭২ সালের এই দিনে বিদ্যালয়টিতে মুক্তিযোদ্ধা ট্রানজিট ক্যাম্পে এক আকস্মিক মাইন বিস্ফোরণে একসঙ্গে প্রায় পাঁচ শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা শহিদ হন। আহত হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করেন অনেকেই। ইতিহাসের পাতায় এটি একটি শোকাবহ দিন।

১৯৭২ সালের জানুয়ারি মাস। দীর্ঘ নয় মাস জীবনের মায়া ত্যাগ করে পাকসেনাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে মুক্তিযোদ্ধারা লাল সবুজের পতাকা ও একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র জাতিকে উপহার দিয়েছিলেন। সে সময় তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে আনন্দ উৎসব করার কথা। কিন্তু তারা মনে করেছিলেন, দেশ স্বাধীন হলেও দেশবাসী এখনো শঙ্কামুক্ত নন। এ জন্য তারা দেশবাসীর নিরাপদে চলাফেরা নিশ্চিত করতে দেশের বিভিন্ন স্থানে পুতে রাখা মাইন অপসারণের কাজে নেমেছিলেন।

দিনাজপুর শহরের উত্তর বালুবাড়িস্থ মহারাজা বিদ্যালয়ে স্থাপন করা হয়েছিল মুক্তিযোদ্ধা ট্রানজিট ক্যাম্প। এখানে অবস্থান নিয়ে প্রায় আটশত মুক্তিযোদ্ধা উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন স্থান থেকে মাইন অপসারণ করে জড়ো করছিলেন এই ক্যাম্পে। ১৯৭২ সালের ৬ জানুয়ারি মাগরিবের নামাজের পর দুটি ট্রাক থেকে মাইন নামানোর সময় হঠাৎ এক মুক্তিযোদ্ধার হাত থেকে একটি মাইন ফঁসকে পড়ে যায় জড়ো করা মাইনের উপর। সঙ্গে সঙ্গেই বিস্ফোরণ। কেঁপে উঠে গোটা দিনাজপুর। প্রাণ হারান সেখানে অবস্থান নেওয়া প্রায় পাঁচ শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা। আহত হন শত শত। মুক্তিযোদ্ধাদের শরীরের ছিন্নভিন্ন অংশ ছিটকে গিয়ে পড়ে আশপাশে ও গাছের ডালে। সেসব ছিন্নভিন্ন অংশ জড়ো করে সমাহিত করা হয় সদর উপজেলার চেহেলগাজী মাজারে। সেখানে তাদেরকে গণকবর দেওয়া হয়।

বিস্ফোরণে সেদিন বিদ্যালয়ের ভবনটিও ধ্বংস হয়ে যায়। সেদিনের বিস্ফোরণে কতজন নিহত হয়েছিল তার কোনো সঠিক হিসাব নেই। তবে এই সংখ্যা পাঁচ শতাধিক বলে জানান মুক্তিযুদ্ধের সংগঠকরা। সেই থেকে ৬ জানুয়ারি দিবসটি পালন করে আসছে স্মৃতি পরিষদসহ বেশ কয়েকটি সংগঠন।

দিনাজপুর সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের আহবায়ক আবুল কালাম আজাদ জানান, নতুন প্রজন্মকে জানানোর জন্য ঘটনাটি পাঠ্যপুস্তকে অর্ন্তভুক্ত করার দাবি জানিয়ে আসছে ৬ জানুয়ারি স্মৃতি পরিষদ। কিন্তু ঘটনার ৪৬ বছর পেরিয়ে গেলেও তাদের দাবি বাস্তবায়িত হয়নি। পাশাপাশি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শহীদদের স্মৃতি বাস্তবায়নে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিলেও তা এখনও উপেক্ষিত।

অন্যদিকে ৬ জানুয়ারি স্মৃতি পরিষদের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা শফিকুল হক ছুটু জানিয়েছেন, স্বাধীনতার পর একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রে একসঙ্গে এত সংখ্যক মুক্তিযোদ্ধা নিহতের ঘটনা দেশে আর কোথাও ঘটেনি। তাই এই স্মৃতি ধরে রাখার জন্য সরকারিভাবে উদ্যোগ নেওয়ার দাবি সকলের। সেদিনের সাক্ষী যে মহারাজা বিদ্যালয়, সেখানকার সব স্মৃতি নতুন প্রজন্ম ও দেশবাসীকে জানানোর জন্য একটি জাদুঘর নির্মাণেরও দাবি মুক্তিযুদ্ধের স্বাধীনচেতা মানুষেদের।

ঢাকা টাইমস/৬ জানুয়ারি/প্রতিবেদক/এএইচ

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
ফিরে দেখা ৪ জুলাই: সারাদেশে ছাত্র ধর্মঘটের ডাক, উত্তাল সব বিশ্ববিদ্যালয়
এবার স্থানীয় সরকার নির্বাচন থেকেও ইভিএম বাদ
আগামী কয়েক দিন ভারি বৃষ্টির সম্ভাবনা, পাউবো কর্মচারীদের কর্মস্থলে থাকার নির্দেশ
নির্বাচন ভবনে রোপণ করা গাছ থেকে সরানো হলো আউয়াল কমিশনের নামফলক
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা