আবজাল কি অস্ট্রেলিয়ায়?

হাবিবুল্লাহ ফাহাদ ও আশিক আহমেদ
 | প্রকাশিত : ১৭ জুন ২০১৯, ০৯:১৭

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা আবজাল হোসেন কি অস্ট্রেলিয়ায়? স্ত্রী রুবিনা খানমকে সঙ্গে নিয়ে মাস দেড়েক আগেই তিনি ঢাকা ত্যাগ করেন বলে নিশ্চিত তথ্য পাওয়া গেছে। অস্ট্র্রেলিয়াতেও বিলাসী জীবনযাপন করছেন আবজাল। সেখান থেকে ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় টেলিফোনে এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যোগাযোগ করছেন।

চতুর্থ শ্রেণির চাকরি করে বিস্ময় জাগানিয়া সম্পদের তথ্য পাওয়ার পর আবজালের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গণমাধ্যমে যেসব সম্পদের তথ্য গণমাধ্যমে এসেছে, সেগুলো জব্দও হয়েছে আদালতের নির্দেশে। কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যেই তিনি সস্ত্রীক কীভাবে দেশের বাইরে গেলেন, সেটা শুনে বিস্মিত খোদ দুদকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।

আবজালের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরুর পর দুদকের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সংস্থাটির উপপরিচালক সামসুল আলম অভিযুক্ত ও তার স্ত্রীর বিদেশ যাওয়ায় নিষেধাজ্ঞা আরোপের আবেদন করেন। পুলিশের বিশেষ শাখার ইমিগ্রেশন বিভাগে ওই আবেদন করলে তা গৃহীত হয়। কিন্তু তারপরও আবজাল ও স্ত্রী রুবিনা খানম কী করে দেশ ছাড়লেন তা নিয়ে দেখা দিয়েছে বড় প্রশ্ন।

রবিবার সন্ধ্যায় দুদকের উপ-পরিচালক সামসুল আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমি তো তাদের দেশ ছাড়ার নিষেধাজ্ঞা চেয়ে এসবির ইমিগ্রেশনে আবেদন করেছিলাম। তারা আবেদন আমলেও নিয়েছিল, কিন্তু কী করে তারা দেশ ছাড়লেন, আমি বলতে পারব না। তাছাড়া আবজাল এবং তার স্ত্রীর সম্পদের অনুসন্ধান এখন আমি করছি না। দুদকের আরেকজন উপপরিচালক তৌফিকুল ইসলাম অনুসন্ধান করছেন।’

নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত দুদক কর্মকর্তা অবশ্য জানেন না আবজাল ও তার স্ত্রী কোথায় আছেন। ঢাকা টাইমসকে তিনি বলেন, ‘ইমিগ্রেশনের তথ্য অনুযায়ী তাদের দেশ ছাড়ার কোনো খবর আমার কাছে জানা নেই।’

অনুসন্ধানের অগ্রগতি জানতে চাইলে ‘চলছে’ বলে সংক্ষেপে জবাব দেন তৌফিক।

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, আবজাল ও তার স্ত্রী কোনো ধরনের জটিলতা ছাড়াই সন্তর্পণে দেশ ছেড়েছেন। অস্ট্রেলিয়াতে তারা বাড়ি কিনেছেন। এ ছাড়া সেখানে ব্যবসা-বাণিজ্যেও বিনিয়োগ করেছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বরখাস্ত হওয়া চতুর্থ শ্রেণির একই কর্মচারী।

পাসপোর্টসহ আনুষঙ্গিক নথিপত্র সূত্রে জানা গেছে, কেবল ২০১৮ সালে বিশে^র বিভিন্ন দেশে ২৮ বারের বেশি সময় সফর করেছেন আবজাল ও তার স্ত্রী। এর মধ্যে অস্ট্রেলিয়াতে গেছেন একাধিকবার।

অবৈধভাবে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে যাওয়ার অভিযোগ ওঠা, দুদকের অনুসন্ধান এবং জিজ্ঞাসাবাদের পর গত ১৪ জানুয়ারি আবজাল হোসেনকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

দুদকের অভিযোগ থেকে জানা যায়, আবজাল দম্পতির নামে রাজধানীর উত্তরায় ১৩ নম্বর সেক্টরের ১১ নম্বর রোডে তিনটি পাঁচতলা বাড়ি রয়েছে। বাড়ি নম্বর ৪৭, ৬২ ও ৬৬। ১৬ নম্বর রোডে রয়েছে পাঁচতলা বাড়ি। বাড়ি নম্বর ১৬। উত্তরার ১১ নম্বর রোডে রয়েছে একটি প্লট। প্লট নম্বর ৪৯। এ ছাড়া রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ও ফরিদপুরের বিভিন্ন জায়গায় রয়েছে তাদের অঢেল সম্পদ। অস্ট্রেলিয়ায় রয়েছে তাদের বাড়ি। দুদক সেই বাড়ির সন্ধানও পেয়েছে বলে জানা গেছে।

আবজালের স্ত্রী রুবিনা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য জনশক্তি উন্নয়ন শাখায় স্টেনোগ্রাফার হিসেবে চাকরি করতেন। তবে বিপুল বিত্তবৈভব হওয়ার পর চাকরি ছেড়ে ব্যবসা করছেন। প্রচার আছে পোশাকশিল্প গড়েছেন।

দুদকের সূত্র জানায়, জিজ্ঞাসাবাদে আবজাল জানিয়েছেন, স্ত্রীর নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও লাইসেন্স তৈরি করে টেন্ডার-বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়েন তিনি। প্রতি বছরই বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালের জন্য শতকোটি টাকার কেনাকাটা হয়। হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা হওয়ায় তার পক্ষে টেন্ডার-বাণিজ্য করা কঠিন কিছু ছিল না। ২০ বছর ধরে এই কাজ করে বিপুল সম্পদ গড়েছেন তিনি। যে তথ্য আছে তাতে এই সম্পদ ১০০ কোটি টাকারও বেশি।

গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, স্বাস্থ্য বিভাগের কেনাকাটায় দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন আবজাল দম্পতি। এই কাজ তার একার পক্ষে করা সম্ভব নয়, সেটা সহজেই অনুমেয়। আর প্রভাবশালী কারো নাম সামনে আসার ভয়ে তাকে দেশ ছাড়তে দেওয়া হয়েছে কি না, এ নিয়েও আছে প্রশ্ন।

সাবেক পুলিশপ্রধান নুরুল হুদা ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘যাদের বিরুদ্ধে মামলা থাকে বা আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকে, তাদের ইমিগ্রেশনে আটকানো হয়। এখন আবজালের ব্যাপারে কী আদেশ ছিল তা আমি জানি না। তবে দুদকের পক্ষে তাকে আটকানোর সুযোগ নেই।’

ঢাকাটাইমস/১৭জুন/এএ/এইচএফ

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :