জলে থৈ থৈ সুনামগঞ্জ

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ১২ জুলাই ২০১৯, ১৩:১৬| আপডেট : ১২ জুলাই ২০১৯, ১৩:২৯
অ- অ+

কয়েক দিনের টানা বৃষ্টির সঙ্গে পাহাড় থেকে নেমে আসা ঢলে সুনামগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতির দিকে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে তাহিরপুর উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের শতাধিক গ্রামে বন্যার পানি ঢুকেছে। তলিয়ে গেছে অনেক রাস্তা। তলিয়েছে ক্ষেতের ফসল। পানি ঢুকেছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও। এতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে হাজার হাজার মানুষকে। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে বন্যা পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

জানা গেছে, সাত দিন ধরে বৃষ্টির কারণে জেলা শহরের সঙ্গে উপজেলার সড়কসহ অভ্যন্তরীণ সড়ক যোগাযোগ পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। উপজেলার ৭২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকেছে। ২০টিরও বেশি হাটবাজার পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। বন্যা আর দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে হাওরপাড়ের খেটে খাওয়া মানুষগুলোকে কষ্টে দিন পার করতে হচ্ছে।

তাহিরপুর উপজেলা প্রশাসন জানিয়েছে, পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় তাহিরপুর-সুনামগঞ্জ সড়ক পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। এছাড়া তাহিরপুর-বাদাঘাট সড়ক, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, আনোয়ারপুর-ফতেহপুর, বাদাঘাট-সোহালা সড়কসহ মেঘালয় পাহাড় থেকে নেমে আসা ঢলের পানির চাপে উপজেলার অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন সড়কে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ঢেউয়ের আঘাতে হাওর পাড় এলাকার অনেক বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যার পানিতে উপজেলার ২৪ শতাধিক ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

পানি ঢুকেছে উপজেলার ৬০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এছাড়া মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের ১২টি প্রতিষ্ঠানের ভেতরও পানি প্রবেশ করেছে। এসব প্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পানি প্রবেশ করেছে।

পানিবন্দি হওয়া শতাধিক গ্রামগুলোর মধ্যে রয়েছে বালিজুরী, বড়খলা, আনোয়ারপুর, সোহালা, মাহতাবপুর, পিরিজপুর, দক্ষিণকূল, চিকসা, চানপুর, মাহরাম, নোয়াহাট, পাতারগাঁও, ধরুন্দ, ইউনুছপুর, লক্ষ্মীপুর, চিকসা প্রমুখ।

মাটিয়ান হাওরপাড়ের ছিলানী তাহিরপুর গ্রামের জেলে শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘মাছ ধরেই কোনো রখমে পরিবার নিয়ে খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকার চেষ্টায় থাকি। কিন্তু পানি বেড়ে যাওয়া ও আবহাওয়ার খারাপ থাকার কারণে মাছ ধরতে যেতে পারছি না। এতে করে পরিবার নিয়ে কষ্টে আছি।’

ফাজিলপুর গ্রামের সাজিদুর রহমান জানান, ঘরের ভেতর পানি, বাইরে পানি। পানির কারণে নদীতে বালু তুলতে পারছি না। সে কারণে টাকা উপার্জন করতে না পারায় এখন ঋণ করে পরিবার চালাতে হচ্ছে।

বালিজুরী ইউপি প্যানেল চেয়ারম্যান ও দক্ষিণকূল গ্রামের বাসিন্দা বাবুল মিয়া বলেন, ‘হঠাৎ করে রাতের বেলা বাড়িঘরে পানি ঢুকে পড়েছে। এখন পানির মধ্যেই আতঙ্কে দিনরাত কাটাতে হচ্ছে। এছাড়া অনেক বাড়ি পানিতে তলিয়ে গেছে’।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচও) ইকবাল হোসেন জানান, ‘স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভেতরে পানি প্রবেশ করেছে। পানির কারণে জরুরি বিভাগ দ্বিতীয় তলাতে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। হাসপাতালে আসা রোগীদের আমরা সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিচ্ছি’।

উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান করুণা সিন্ধু চৌধুরী বাবুল বলেন, বন্যার কারণে চরম দুর্ভোগে পড়েছে হাওরবাসী। প্রতিদিনেই সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নৌকা করে স্বেচ্ছাসেবী কর্মীদের নিয়ে বন্যা আক্রান্ত হাওরপাড় ও মেঘালয় সীমান্তের বন্যায় আক্রান্ত ক্ষতিগ্রস্ত শতাধিক পরিবারের মধ্যে চিড়া, গুড় ও পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণ করা হচ্ছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

ঢাকাটাইমস/১২জুলাই/প্রতিনিধি/এমআর

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
মানিকগঞ্জে মেয়েকে ধর্ষণের দায়ে বাবার মৃত্যুদণ্ড
নদীতে গোসল করতে গিয়ে নিখোঁজ স্কুলছাত্রের মরদেহ উদ্ধার 
হামদর্দ বাংলাদেশের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সভা অনুষ্ঠিত
পাবনা-ঢাকা সরাসরি এক্সপ্রেস ট্রেন চালুর দাবিতে মানববন্ধন
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা