বিএমডিএর ১২ প্রকৌশলীর ‘অনিয়ম’

বদলি করলেন চেয়ারম্যান, স্থগিত করল ‘ওপর মহল’

ব্যুরো প্রধান, রাজশাহী
| আপডেট : ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১৯:০৬ | প্রকাশিত : ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১৮:৫১

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কর্মকর্তাদের অভিযানে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) ১২ জন প্রকৌশলীর নানা অনিয়ম-দুর্নীতি নজরে আসার পর ১২ জন কর্মকর্তাকে তাৎক্ষণিক বদলির নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান। কিন্তু তা কার্যকর হওয়ার আগেই ‘ওপর মহল’-এর আদেশে তা স্থগিত হয়ে গেছে।

জানা যায়, বিএমডিএর কর্মকর্তাদের দুর্নীতির বিষয়ে সম্প্রতি দুদকের প্রধান কার্যালয়ে অভিযোগ জমা পড়ে। এর পরিপ্রেক্ষিতে দুদকের উপপরিচালক (এনফোর্সমেন্ট) মাসুদুর রহমান গত বুধবার এক আদেশে সংস্থাটির সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালককে তদন্ত করে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে প্রতিবেদন পাঠাতে নির্দেশ দেন। পরদিন বৃহস্পতিবার দুদকের দুই কর্মকর্তা বিএমডিএতে অনুসন্ধানে যান।

অনুসন্ধান শেষে দলের প্রধান দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আলমগীর হোসেন বলেন, পদোন্নতি, কোটেশনের মাধ্যমে কেনাকাটা এবং আমবাগান ইজারাসহ আরও কয়েকটি খাতে সাত কোটি টাকার দুর্নীতির প্রমাণ পেয়েছেন তারা। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দুদকের প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হবে।

সূত্র জানায়, দুদকের এই অভিযানের দিনই বিএমডিএর চেয়ারম্যান ড. আকরাম হোসেন চৌধুরী আটজন প্রকৌশলীকে দুর্নীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগে তাৎক্ষণিক বদলির আদেশ দেন। তাদের আজ রবিবারের মধ্যে নিজ নিজ দপ্তর ত্যাগ করতে বলা হয়। এরপর রবিবার সকালে একই কারণে আরও চার কর্মকর্তাকে বদলির আদেশ দেন চেয়ারম্যান।

তার নির্দেশে বিএমডিএ সচিব আশরাফুল ইসলাম প্রথম আটজনের বদলির আদেশে স্বাক্ষর করেন। আর তার অনুপস্থিতিতে পরের চারজনের বদলির আদেশে স্বাক্ষর করেন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আবদুর রশীদ। কিন্তু রবিবার বিকেলে আবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে সব বদলির আদেশ স্থগিত করা হয়।

গত বৃহস্পতিবার যেসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল তারা হলেন- প্রধান কার্যালয়ের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শামসুল হোদা ও ড. আবুল কাশেম; নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল লতিফ ও তরিকুল ইসলাম; ঠাকুরগাঁও সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম খান, জয়পুরহাট রিজিয়নের নির্বাহী প্রকৌশলী সুমন্ত কুমার বসাক, রাজশাহীর পবা জোনের উপ-সহকারী প্রকৌশলী রাহাত পারভেজ এবং দুর্গাপুর জোনের উপ-সহকারী প্রকৌশলী শামসুল আলম।

আর রবিবার যাদের বদলি করা হয়েছিল তারা হলেন- বিএমডিএর প্রধান কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী (চলতি দায়িত্ব) এনামুল কাদির ও নির্বাহী প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান; রংপুর জোনের নির্বাহী প্রকৌশলী নূর ইসলাম এবং নওগাঁ জোনের প্রকৌশলী আবদুল মালেক। তাদের মধ্যে মাহফুজুর রহমানকে রংপুরে পাঠানো হচ্ছিল। আর আবদুল মালেক ও নূর ইসলামকে প্রধান কার্যালয়ে আনা হচ্ছিল।

এই বদলি কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নয় বলে দাবি করেন বিএমডিএর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আবদুর রশীদ। তিনি বলেন, ‘এগুলো স্ট্যান্ড রিলিজ নয়। বিভিন্ন পদে রদবদল করা হচ্ছিল। চেয়ারম্যানের নির্দেশে সচিব ও আমি বদলির আদেশ দিয়েছিলাম। কিন্তু ওপর মহলের নির্দেশে তা স্থগিত করা হয়েছে।’

‘ওপর মহল’ কে তা জানতে চাইলে আবদুর রশীদ বলেন, ‘সেইভাবে কারও নাম বলা যাবে না।’

বিএমডিএর সচিব আশরাফুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ‘আমি ঢাকায়। বদলির আদেশের বিষয়টি জানি। কিন্তু আদেশ স্থগিতের বিষয়টি জানা নেই।’

এসব বিষয়ে কথা বলতে বিএমডিএর চেয়ারম্যান ড. আকরাম হোসেন চৌধুরীকে ফোন করা হয়। কিন্তু তিনি ফোন না ধরায় তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীন বিএমডিএ একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। এর কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগগুলোর মধ্যে রয়েছে- ২০১২ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত অডিট আপত্তি, কোটি টাকা ব্যয়ে সরকারি প্রকৌশলী ভবন নির্মাণ করেও সেখানে না থাকা, পিপিআর অমান্য করে খণ্ড খণ্ড আকারে প্রয়োজনীয় সরঞ্জমাদি ক্রয়ের মাধ্যমে সরকারি অর্থের ক্ষতি, গোদাগাড়ীতে প্রায় ৫০ লাখ টাকার হিসাব জালিয়াতি, চলমান প্রকল্পে অনিয়ম, সরকারি পরিপত্র অমান্য করে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বেতন স্কেল প্রদান ও পল্লী বিদ্যুতের অবৈধ ব্যবহার।

গেল বৃহস্পতিবার দুদকের অনুসন্ধানকারী দল এসব অনিয়ম দেখতে পায়। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আলমগীর হোসেন বলেন, ‘আমার অফিসপ্রধান ও আমি ছুটিতে আছি। ছুটি শেষ হলেই তদন্ত প্রতিবেদন ঢাকায় পাঠিয়ে দেওয়া হবে। এরপর সেখান থেকে যা নির্দেশনা আসবে সেভাবে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

(ঢাকাটাইমস/৭সেপ্টেম্বর/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :