ঢাবিতে দুই সহকারী প্রক্টরের উপস্থিতিতেই হামলা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) পরীক্ষা ছাড়া ভর্তি হওয়া ছাত্রলীগের সাবেক ও বর্তমান নেতাদের ছাত্রত্ব বাতিলের দাবিতে আন্দোলকারী শিক্ষার্থীদের কর্মসূচিতে ছাত্রলীগের হামলার সময় উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়টির দুই সহকারী প্রক্টর।
ব্যবসায় অনুষদের ডিন শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলামের কার্যালয়ের সামনে হামলা-মারপিটের ঘটনার সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন সহকারী প্রক্টর সীমা ইসলাম ও মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়াসহ প্রক্টরিয়াল টিমের অন্তত ছয়জন সদস্য।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বলছেন, পূর্বঘোষিত কোনও কর্মসূচি না থাকার পরও ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক ও ডাকসুর এজিএস সাদ্দাম হোসেনের অনুসারীরাই ‘সাধারণ শিক্ষার্থীবৃন্দ’ ব্যানারে এই হামলা চালায়। তারা নারী আন্দোলনকারীদের লাঞ্ছিতও করে।
অন্যদিকে সাদ্দাম এ ঘটনায় ছাত্রলীগের সম্পৃক্ততার অভিযোগ অস্বীকার করে বিষয়টিকে ‘দুইদল শিক্ষার্থীর মধ্যে অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা’ বলে দাবি করেছেন।
বুধবার দুপুরে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর ওই হামলার ঘটনায় আসিফ নামে আন্দোলনকারী এক শিক্ষার্থী আহত হন। পরে অন্য শিক্ষকদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়ে আসে।
পূর্বে কোনও ঘোষণা না থাকলেও হঠাৎ নিয়মিত শিক্ষার্থীদের স্বার্থ সংরক্ষণকারী সকল নিয়ম বহাল রাখার দাবিতে ডিন কার্যালয়ে স্বারকলিপি দিতে আসে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে ছাত্রলীগের একাংশ। ব্যবসা অনুষদের কয়েকজন শিক্ষকের সামনেই এসময় উভয় পক্ষ মুখোমুখি অবস্থান নেয়।
হঠাৎ এক পর্যায়ে ছাত্রলীগের একজন আন্দোলনকারীদের পিছন থেকে ধাক্কা দিলে তাদের মধ্যে প্রথমে বাকবিতন্ডা পরে মারামাররি হয়। এতে আন্দোলনকারী আসিফ মাহমুদ নামের ২য় বর্ষের এক শিক্ষার্থী আহত হয়। পরে তাকে রক্তাক্ত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যাওয়া হয়।
হামলার শিকার হয়ে আন্দোলনকারীরা ‘শিক্ষা,সন্ত্রাস একসাথে চলে না’, ‘ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা হুশিয়ার সাবধান’সহ বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে। ঘটনাস্থলে বাণিজ্য অনুষদের কয়েকজন শিক্ষক এবং প্রক্টররিয়াল টিম উপস্থিত থাকলেও তাদের নিরব ভূমিকায় দেখা যায়। এসময় ছাত্রলীগের এক নেতাকে একজন শিক্ষক বলেন, ‘তোমরা ডিন স্যারের অফিসের দুপাশে ভাগ হয়ে অবস্থান নাও।’
এর কিছুক্ষণ পর সহকারী প্রক্টর আব্দুর রহীম উপস্থিত হলে আবারো আন্দোলনকারীদের উপর হামলা করে মাইক ভাংচুর এবং নারী শিক্ষার্থীদের লাঞ্চনা করে ছাত্রলীগের কর্মীরা। এক আন্দোলনকারী এই ঘটনা ভিডিও করলে তাকেও মারধর করে তারা। ছাত্রলীগের হামলার এক পর্যায়ে আন্দোলনকারীরা ডিন কার্যালয় ত্যাগ করে প্রক্টরের অফিসের সামনে অবস্থান নেয়। আন্দোলনকারীরা চলে যাওয়ায় সহকারী প্রক্টর আব্দুর রহীম ছাত্রলীগের কর্মীদেরও ডিন কার্যালয় ত্যাগ করতে বললে তারা চলে যায়।
পরীক্ষা ছাড়া ভর্তি হওয়া ছাত্রলীগ নেতাদের ছাত্রত্ব বাতিলসহ তিন দফা দাবিতে কর্মসূচি পালন করে আসছে ঢাবির শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবির মধ্যে রয়েছে, বাণিজ্য অনুষদের ডিন শিবলী রুবায়াতুল ইসলাম এবং ঢাবি উপচার্য আখতারুজ্জামানের পদত্যাগ, জালিয়াতির মাধ্যমে ভর্তি হওয়া ডাকসু ও হল সংসদের নেতাদের অপসারণ এবং অভিযুক্তদের ছাত্রত্ব বাতিল, রোকেয়া হলে দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত হল প্রাধ্যক্ষ জিনাত হুদার পদত্যাগ এবং হল সংসদের ভিপি এবং জিএসকে অপসারণ।
আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, হাজী মুহাম্মদ মুহসিন হলের ছাত্রলীগের প্যানেল থেকে নির্বাচিত জিএস মেহেদি হাসান মিজানের নেতৃতে তাদের ওপর এ হামলা করা হয়েছে। তারা বলছেন, মেহেদি হাসান মিজান ডাকসুর সহ সাধারণ সম্পাদক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনের অনুসারী এবং তার নির্দেশেই এই হামলা হয়েছে। ঘটনাস্থলে হামলায় অংশ নেয়া বিভিন্ন হলের ছাত্রলীগ কর্মীরা সাদ্দামের অনুসারী।
আন্দোলনকারী এক শিক্ষার্থী ফারুক হাসান বলেন, ‘যতদিন পর্যন্ত আমাদের দাবি পূরণ না হয়, ততদিন আন্দোলন চালিয়ে যাব।’
এদিকে আন্দোলনকারীদের সাথে একাত্বতা পোষণ করে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুর। বলেন, ‘অবৈধভাবে ভর্তি হওয়া ছাত্রলীগ নেতাদের অপসারণ এবং তাদের ভর্তি হতে সহযোগিতাকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপচার্য এবং বাণিজ্য অনুষদের ডিন এর পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষার্থীরা এখানে এসেছিল।’
‘কিন্তু ডিন শিক্ষার্থীদের সাথে কথা না বলে ছাত্রলীগকে এনে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালিয়েছে। আমরা গত কয়েকবছর ধরে দেখেছি বিশ্ববদ্যিালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের নৈতিক এবং যৌক্তিক আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের মাধ্যমে হামলা চালায়।’
শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেয়ার আহবান জানিয়ে বাণিজ্য অনুষদের ডিনের পদত্যাগের দাবি জানান ডাকসু ভিপি নুর।
উল্লেখ্য, গত ৮ সেপ্টেম্বর একটি জাতীয় গণমাধ্যমে ‘পরীক্ষা ছাড়াই ভর্তি হয়ে ডাকসু নেতা’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। যেখানে বলা হয় গত ডাকসু নির্বাচনে অংশ নিতে ছাত্রলীগের ৩৪ সাবেক ও বর্তমান নেতা ছাত্রত্ব টিকিয়ে রাখতে ব্যাংকিং অ্যান্ড ইনস্যুরেন্স বিভাগের মাস্টার্স অব ট্যাক্স ম্যানেজমেন্ট প্রোগ্রামে ভর্তি হন।
তফসিল ঘোষণার পর তারা উপাচার্যের সই করা চিরকুট ও অনুষদের ডিনের সহায়তায় নিয়মবহির্ভূত উপায়ে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা ছাড়াই ভর্তি হন। নির্বাচন করতে আগ্রহী ৩৪ জনের মধ্যে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের সম্পাদক ও সদস্য পদে নির্বাচনে আটজন অংশ নেন, এর মধ্যে বিজয়ী হন সাতজন। এছাড়া দুটি হল সংসদের ভিপি পদে অংশ নেন দুজন। এর মধ্যে একজন নির্বাচিত হন, অন্যজন পরাজিত হন। আরেকজন ছিলেন ডাকসু নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য।
ঢাকাটাইমস/১৮সেপ্টেম্বর/এমআই/ডিএম

মন্তব্য করুন