মাঠ ছেড়ে সংবিধান নিষিদ্ধ জুয়ায় ভর

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ২২:০৯
অ- অ+

শারীরিক কসরত আর খেলাধুলাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল ক্লাবগুলো। রাজধানীকেন্দ্রিক এসব ক্লাব বিশেষ করে ফুটবল, ক্রিকেট টুর্নামেন্টের মাধ্যমে দেশজুড়ে পরিচিত। তাদের রয়েছে অসংখ্য সমর্থক। এখন জানা যাচ্ছে মাঠের খেলায় আর মন নেই ঢাকার ক্লাবগুলোর। প্রায় সব কটি পরিণত হয়েছে সংবিধান নিষিদ্ধ জুয়ার আধারে। ক্যাসিনোতে।

এসব ক্লাবে অবৈধ জুয়ার আসর বসানোর অভিযোগ নতুন নয়। বিভিন্ন সময়ে সংবাদমাধ্যমে খবরও এসেছে। মামলা হয়েছে আদালতে। তবে বাংলাদেশেও যে স্লট মেশিন, রুলেট টেবিলের মতো সরঞ্জাম নিয়ে পুরোদস্তুর ক্যাসিনো চলে, র‌্যাবের অভিযানে উঠে আসা এই খবর সাধারণ মানুষের কাছে একেবারেই নতুন। র‌্যাবের অভিযানে থলের বেড়াল বেরিয়ে পড়েছে কথিত ক্রীড়াসংগঠকদের। টক অব দ্য কান্ট্রি এখন ক্লাবগলোর ক্যাসিনো-জুয়া।

আজ রবিবার পুলিশ ঢাকার মতিঝিল এলাকার আরামবাগ ক্রীড়া সংঘ, দিলকুশা স্পোর্টিং ক্লাব, ভিক্টোরিয়া স্পোর্টিং ক্লাব ও মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবে অভিযান চালিয়ে উদ্ধার করেছে ক্যাসিনোর সরঞ্জাম, মদ আর নগদ টাকা।

ভিক্টোরিয়া ক্লাব থেকে জব্দ করা হয় বিভিন্ন ধরনের জুয়া খেলার নয়টি বোর্ড, এক লাখ টাকা, বিপুল পরিমাণ তাস, জুয়ায় ব্যবহৃত চিপস ও মদ। মোহামেডানে পাওয়া গেছে দুটো রুলেট টেবিল, নয়টি বোর্ড, বিপুল পরিমাণ কার্ড, ১১টি ওয়্যারলেস সেট ও ১০টি বিভিন্ন ধরনের চাকু।

আরামবাগ ও দিলকুশা ক্লাবেও বাকারা ও রুলেট টেবিলসহ বিভিন্ন জুয়ার সরঞ্জাম পেয়েছে পুলিশ। তবে সবগুলো ক্লাবই বন্ধ ছিল বলে পুলিশ জানিয়েছে।

পুলিশের নাকের ডগায় কীভাবে এসব ক্যাসিনো এতদিন চলে আসছে এমন প্রশ্নের জবাবে পুলিশের মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘যখনই আমাদের কাছে তথ্য এসেছে, তখনই আমরা অভিযান চালিয়েছি। এর আগেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অবৈধ জুয়ার বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েছে।’

গেল বুধবার ফকিরাপুলের ইয়ংমেনস ক্লাবে র‌্যাবের অভিযান দিয়ে শুরু। ওই ক্লাবে বিদেশি মদ, টাকাসহ ক্যাসিনোর বিপুল আয়োজন পাওয়া যায়। গ্রেপ্তার হন ক্লাবের সভাপতি যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া।

ওইদিনই ফকিরাপুল এলাকার ওয়ান্ডারার্স ক্লাব, বঙ্গবন্ধু এভিনিউর মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়াচক্র এবং বনানীর আহমেদ টাওয়ারে র‌্যাবের অভিযান চলে। এসব অভিযানে মোট ১৮২ জনকে গ্রেপ্তার করে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়।

সংবিধানের ১৮ (২) অনুচ্ছেদে নৈতিকতা রক্ষায় রাষ্ট্রের দায়িত্ব সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘গণিকাবৃত্তি ও জুয়াখেলা নিরোধের জন্য রাষ্ট্র কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন।’ আর ১৮৬৭ সাল থেকে চালু ‘প্রকাশ্য জুয়া আইন’ বলছে, কেউ টাকার বিনিময়ে বাজি বা জুয়ার আসর বসালে এবং কেউ তাতে অংশ নিলে তা হবে দণ্ডনীয় অপরাধ।

এই দণ্ডনীয় অপরাধই এতদিন ধরে চলে আসছিল রাজধানীর ‘জনপ্রিয়’ ক্রীড়া সংগঠনের ক্লাবে। প্রতিদিন কোটি কোটি টাকা অবৈধ লেনদেন। সেই টাকার ভাগ চলে যেত জায়গায় জায়গায়। গ্রেপ্তারের পর যুবলীগ নেতা খালেদ ভূঁইয়া এমন তথ্য দিয়েছেন বলে ভাষ্য র‌্যাবের।

এই অভিযান শুরুর পরের দিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, ‘আমরা অনেক দিন ধরেই শুনছিলাম ঢাকা শহরে এই অবৈধ ব্যবসায় লুকিয়ে লুকিয়ে অনেকে জড়িয়ে যাচ্ছে। আমি প্রথম যখন শুনেছি তখন এগুলো ডেস্ট্রয় করে দেওয়া হয়েছিল।’

‘এখন এক দেড় বছরে মাথা চাড়া দিয়েছে, এমনটা আমাদের গোয়েন্দারা রিপোর্ট করেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের স্পষ্ট বলে দিয়েছেন, কেউ কোনো অবৈধ ব্যবসা করতে পারবে না। তারই ফলে এই অভিযান চলছে।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা মহানগর পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদের ছত্রছায়ায় দীর্ঘদিন আগেই ঢাকায় ক্যাসিনো গড়ে উঠেছে।’

‘প্রধানমন্ত্রী এখন এ নিয়ে কথা বলায় সবাই তৎপর হয়েছে। ক্যাসিনোগুলোতে জুয়া খেলার যেসব সরঞ্জাম রয়েছে তা অবৈধ পন্থায় বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়েছে এবং এর সঙ্গে সরকারি কর্মকর্তারাও জড়িত।’

গত সপ্তাহে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে যুবলীগ নেতাদের নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন দলীয় সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর ঢাকায় যুবলীগ নেতাদের ‘৬০টি ক্যাসিনো চালানোর’ খবর আসে সংবাদমাধ্যমে।

তারপরই এ বিষয়ে সক্রিয়তা বাড়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। অভিযানে নামে এলিট ফোর্স র‌্যাব। এবার বিশেষায়িত এই ইউনিটের সঙ্গে জুয়ার আসর বন্ধে মাঠে নেমেছে পুলিশ। তালিকা করেই এই অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

চলমান অভিযানের মধ্যে গত শুক্রবার ঢাকার কলাবাগান ক্রীড়াচক্র ও ধানমণ্ডি ক্লাবেও অভিযান চালায় র‌্যাব। কলাবাগান ক্রীড়াচক্র থেকে ক্লাব সভাপতি কৃষক লীগ নেতা সফিকুল আলম ফিরোজসহ পাঁচজনকে অস্ত্র-গুলি ও ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার করা হয়। আর ধানমণ্ডি ক্লাবের বারে কী পরিমাণ মদের মজুদ আছে, সেই হিসাব জমা দিতে বলা হয়। ঢাকার পাশাপাশি গত শনিবার চট্টগ্রামের পাঁচটি ক্লাবে একযোগে অভিযানে তিনটি ক্লাবে জুয়ার আসরের সন্ধান পায় র‌্যাব।

(ঢাকাটাইমস/২২সেপ্টেম্বর/ডিএম/মোআ)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
টয়োটার ব্যবসা হারাচ্ছে নাভানা?
সারজিস বনাম নওশাদ: ভোটে কার পাল্লা ভারি?
মনোহরদীতে চাঁদাবাজি করতে গিয়ে ছাত্রদল নেতা গণধোলাইয়ের শিকার
গণভবন জয় করেছি, এবার জাতীয় সংসদও জয় করব: নাহিদ
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা