যত্রতত্র রাখা আমদানির কয়লায় ত্রাহি অবস্থা

বেনাপোল প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ০৯ ডিসেম্বর ২০১৯, ০৮:১২| আপডেট : ০৯ ডিসেম্বর ২০১৯, ১৩:০৬
অ- অ+

নিয়মনীতি না মেনে যত্রতত্র রাখা আমদানির কয়লার গ্যাসে ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা যশোরের অভয়নগর উপজেলার নওয়াপাড়া পৌরসভার বাসিন্দাদের। এখানকার মহাসড়ক, নদীর পাড় ও রেলপথের পাশে গড়ে তোলা হয়েছে কয়লার ড্যাম্প (কয়লার স্তুপ)। খোলা আকশের নিচে রাখা কয়লার ছড়ানো গ্যাসে স্থানীয় বাসিন্দারা পড়েছেন বিপাকে। পরিবেশের ক্ষতির পাশাপাশি গাছপালাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কয়লার বিষাক্ত ধোঁয়া ও গ্যাসে। এর ফলে ফুসফুস ও শ্বাসকষ্টজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, নওয়াপাড়ার রাজঘাট থেকে শুরু করে চেঙ্গুটিয়া বাজার পর্যন্ত আমদানি করা কয়লা স্তুপ করে রাখা হয়েছে। অনেক বসতবাড়ি ঘিরে ও কৃষি জমিতেও ড্যাম্প করে রাখা হয়েছে কয়লা। কয়েকশ মিটার পর পর চোখে পড়ে খোলা আকাশের নিচে একেকটি কয়লার স্তুপ, যা দেখতে ছোট কোনো পাহাড়ের মতো মনে হয়। দীর্ঘদিন ধরে স্তুপ করা এসব কয়লার বিষাক্ত ধোঁয়া ও তার গ্যাসে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন নওয়াপাড়াবাসী।

যদিও পরিবেশ অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী জনবসতির দেড় কিলোমিটারের মধ্যে কয়লার ডিপো করা সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ। তাছাড়া কয়লার স্তূপে উঁচু দেয়াল দিয়ে ঘিরে রাখার বিধানও রয়েছে।

নওয়াপাড়া বাজারের কয়লা ব্যবসায়ীদের দেয়া তথ্যে জানা যায়, ১৫টি প্রতিষ্ঠান এসব কয়লা আমদানি করে যত্রতত্র রেখে এখান থেকে পরে বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করে থাকে। এসব প্রতিষ্ঠানে মধ্যে রয়েছে মেসার্স উত্তরা ট্রেডার্স, মেসার্স নওয়াপাড়া ট্রেডার্স, মেসার্স শেখ ব্রাদার্স, মেসার্স মাহাবুব অ্যান্ড ব্রাদার্স, মেসার্স জয়েন্ট ট্রেডিং, সাহারা এন্টারপ্রাইজ, মোশারফ অ্যান্ড ব্রাদার্স, সরকার ট্রেডার্স।

প্রতিষ্ঠানগুলি আমদানি করা কয়লা প্রথমে জাহাজ থেকে নামিয়ে ভৈরব নদের পাশে রাখে। পরবর্তীতে মহাসড়ক, রেলপথ ও আবাসিক এলাকায় খোলা আকাশের নিচে ড্যাম্প করে রাখা হয়। তারপর পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা কয়লা কিনে তা ট্রাকে করে নিয়ে যান দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে।

স্থানীয়রা অভিযোগ করছেন, এভাবে উম্মুক্ত প্রক্রিয়ায় খোলা আকাশের নিচে রাসায়নিক এই কয়লা ড্যাম্প করায় ক্ষতি হচ্ছে পরিবেশের। গাছগুলো শুকিয়ে মারা পড়ছে। পৌরসভার আবাসিক এলাকা ও গ্রামের মধ্যে কয়লা রাখায় দিনরাত সবসময়ই বাতাসের মাধ্যমে ধুলা ও ধোঁয়া ছড়াচ্ছে প্রতিনিয়ত। কোনো কোনো এলাকা বসবাসেরও অযোগ্য হয়ে পড়েছে। কয়লার স্তুপের কারণে এখন বাড়িঘরে বসবাস করা কষ্টদায়ক হয়ে পড়েছে। প্রতিনিয়িত ঘরের দরজা-জানালা, আসবাবপত্র, পোশাক-পরিচ্ছদ কয়লার ধূলায় সয়লাব হয়ে পড়ছে। এমনকি বাতাসে বাহিত হয়ে খাবারের সঙ্গেও মিশে যাচ্ছে কয়লার ধূলা। এছাড়া শিশু, বয়স্কসহ অনেকেই ফুসফুসজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।

ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক সহিদ আকতার হুসাইন ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘হেভি মেটাল কয়লার মধ্যে এক ধরণের ডাস্ট বা ধূলিকনা থাকে যেটা স্বাস্থ্যের জন্য খুব ক্ষতিকর। কয়লায় যে ধূলিকনা থাকে এটা মূলত মানব শরীরের শ্বাসনালীতে প্রচুর প্রভাব ফেলে। বিশেষ করে এই ধরনের ধূলিকনা ফুসফুসের প্রচুর ক্ষতি করে এবং অ্যাজমা রোগীদের জন্য এটা বেশ ক্ষতিকর।’

এদিকে কয়লা ব্যবসায়ীরা প্রভাবশালী হওয়ায় সাধারণ মানুষ তাদের বিরুদ্ধে কথা বললেও এর কোনও পরিত্রাণ পাচ্ছেন না। না পেরে অনেকেই ঘরবাড়ি বিক্রি করে পরিবার নিয়ে অন্যত্র চলে যেতেও বাধ্য হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

স্থানীয় বাসিন্দা মো. তৌফিক আহম্মদ বলেন, ‘কয়লার ডিপো সরিয়ে দেয়ার দাবি জানিয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে বিভিন্ন সময় স্মারকলিপি, মানববন্ধনসহ প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। কিন্তু পরিবেশ অধিদপ্তর কিংবা প্রশাসন যথাযথ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।’

উপজেলার ভাঙ্গাগেট এলাকার বাসিন্দা মো. আজিম চৌধুরী জানান, রাসায়নিক এই কয়লার বিষাক্ত ধূলা ও ধোঁয়ায় তার পরিবারের প্রায় সবাই শ্বাস-প্রশ্বাস কষ্টজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েছে। তাছাড়া ঘরের মধ্যেও প্রতিনিয়ত নাকে মাক্স ব্যবহার করতে হচ্ছে।

অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মাহমুদুর রহমান রিজভী ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘কয়লার ধোঁয়া স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর। যত্রতত্রভাবে কয়লা রাখার জন্য প্রতিদিন শ্বাসকষ্ট, ফুসফুসজনিত সমস্যা নিয়ে এলাকার অনেকেই হাসপাতালে ভিড় করছেন।’

(ঢাকাটাইমস/০৯ডিসেম্বর/ডিএম)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মিথ্যাচারের প্রতিবাদে উত্তরায় বিএনপির বিক্ষোভ সমাবেশ 
সম্পূরক শুল্ক কমিয়ে আনতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনার করার ওপর গুরুত্বারোপ আমীর খসরুর
তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিষয়ে সংশোধনীকে শক্তিশালী করতে চায় বিএনপি: সালাহউদ্দিন  
বিমানবন্দরে চোরাচালানে ‘জিরো টলারেন্সে’ কাস্টমস
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা