বঙ্গবন্ধুর শততম জন্মবার্ষিকীতে দ. কোরিয়ায় বর্ণিল আয়োজন

যথাযোগ্য মর্যাদা ও আনন্দমুখর পরিবেশে দক্ষিণ কোরিয়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস উদযাপিত হয়েছে। শেখ মুজিবের জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠান বড় পরিসরে করার পরিকল্পনা থাকলেও কোরিয়াতে করোনাভাইরাস ভয়াবহ প্রভাব বিস্তার করার কারণে ছোট পরিসরে আয়োজন করেছে বাংলাদেশ দূতাবাস। তবে নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি উপেক্ষা করে দূতাবাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পাশাপাশি স্বল্প সংখ্যক দক্ষিণ কোরিয়াস্থ প্রবাসী বাংলাদেশি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছে দূতাবাস।

মঙ্গলবার সকালে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের শুভসূচনা হয়। দূতাবাসের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপস্থিতিতে রাষ্ট্রদূত জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেন। এরপর বঙ্গবন্ধুর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে কিছুক্ষণ নীরবতা পালন করা হয়। পরে বঙ্গবন্ধুর কল্যাণ কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। পবিত্র ধর্মগ্রন্থসমূহ থেকে পাঠ করার পর দূতাবাসের কর্মকর্তাগণ দিবসটি উপলক্ষে প্রদত্ত রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বাণী পাঠ করেন।

শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে জাতিসংঘের প্রাক্তন মহাসচিব বান কি মুনও বাণী দেন। গতকালের অনুষ্ঠানে তার বাণীও পাঠ করা হয়। পরবর্তীতে, বাংলাদেশ দূতাবাস, সিউল ও কোরিয়া পোস্টের যৌথ উদ্যোগে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে প্রকাশিত একটি স্মারক ডাকটিকেট উন্মোচন করা হয়। পরের পর্বটি ছিল বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবসের গুরত্ব ও তাৎপর্যের উপর উন্মুক্ত আলোচনা। উন্মুক্ত আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন দূতাবাসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।

উন্মুক্ত আলোচনা পর্বে দক্ষিণ কোরিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আবিদা ইসলাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন এবং মুজিববর্ষের প্রাক্কালে মহান এই নেতার জীবন,বর্ণাঢ্য কর্মজীবন ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারনা লাভের জন্য উপস্থিত সকলকে উৎসাহ প্রদান করেন। পরে বঙ্গবন্ধুর জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ের আলোকচিত্র এবং তার জীবন ও কর্মের উপর লিখিত প্রায় শতাধিক বই নিয়ে একটি প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়।

এছাড়া দিবসটি উদযাপনের মাহেন্দ্রক্ষণে দক্ষিণ কোরিয়ার স্থানীয় ম্যাগাজিন ‍‘seoul city’ তে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রদূতের একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়।

বিকালে দ্বিতীয় পর্বের অনুষ্ঠান দূতাবাস পরিবারের শিশু-কিশোরগণ কর্তৃক সমবেত কন্ঠে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে আরম্ভ হয়। অনুষ্ঠান আরম্ভের পূর্বে দিবস উদযাপনের জন্য দূতাবাসের উদ্যোগে প্রস্তুতকৃত স্মারক ব্যাজ উপস্থিত সকলের মাঝে বিতরণ করা হয়। এরপর শিশু কিশোররা পবিত্র ধর্মগ্রন্থসমূহ হতে পাঠ করে এবং বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী থেকে কিছু অংশ পড়ে শোনায়। এরপর উপস্থিত শিশু-কিশোররা কবিতা পাঠ, নৃত্য ও সঙ্গীত পরিবেশন করে।

গত শুক্রবার শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে বাংলাদেশ দূতাবাস কর্তৃক আয়োজিত শিশু-কিশোরদের নিয়ে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। সেই প্রতিযোগিতায় আট থেকে দশজন শিশু-কিশোর অংশগ্রহণ করে। রং তুলির আঁচড়ে মনের মাধুরী মিশিয়ে অংকন করে বঙ্গবন্ধুর ছবি। প্রতিটি শিশু-কিশোরদের অংকনের প্রতিভায় ফুটে উঠেছে বঙ্গবন্ধুর প্রতি ভালোবাসা। এর মাধ্যমে নতুন প্রজন্ম মহান এ নেতা সম্পর্কে অনেক অজানা বিষয় জানতে পারবে বলে মনে করেন রাষ্ট্রদূত আবিদা ইসলাম।শিশুদের কাছে বঙ্গবন্ধু অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে বাংলাদেশ দূতাবাসের এই ভিন্ন আয়োজন।

রাষ্ট্রদূত প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী শিশু-কিশোরদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন। এছাড়া তিনি উপস্থিত শিশু-কিশোরদের সঙ্গে নিয়ে কেক কাটেন।

বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের ঐতিহাসিক ক্ষণটিকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য উপস্থিত সকল অতিথির আলোকচিত্র গ্রহণ এবং আগত অতিথিবৃন্দের মধ্যে ঐতিহ্যবাহী বাংলাদেশি খাবার পরিবেশন করা হয়।

উল্লেখ্য, স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টার জন্মশতবার্ষিকীর পুরো বছরটি সরকার ‘মুজিববর্ষ হিসেবে পালন করার ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

ঢাকাটাইমস/১৮মার্চ/প্রতিনিধি/এমআর