কাঁচা বয়সে মা চরিত্র-শয্যাদৃশ্য, রিমার জীবনই এক সিনেমা

বিনোদন ডেস্ক
| আপডেট : ৩০ মে ২০২০, ১৩:৩৩ | প্রকাশিত : ৩০ মে ২০২০, ১২:৩৩

বলিউড ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি থেকে অকালে ঝরে পড়া এক নক্ষত্র অভিনেত্রী রিমা লাগু। মাত্র ৩০ বছর বয়স থেকে মায়ের চরিত্রে অভিনয় করা রিমার নামই হয়ে গিয়েছিল ‘বলিউডের মা’। তার চার দশকের কেরিয়ার যেন এক রঙিন অধ্যায়। শুটিং করতে করতেই হার্ট অ্যাটাক, অভিনেতা কুলভূষণ খারবান্দার সঙ্গে অন্তরঙ্গ শয্যাদৃশ্য, বয়সে এক বছরের ছোট সঞ্জয় দত্তের মায়ের চরিত্র- সব মিলিয়ে রুপালি পর্দার মতো রিমার ব্যক্তিগত জীবনও ছিল বর্ণময়।

রিমার প্রকৃত নাম নয়ন ভাড়গড়ে। জন্ম ১৯৫৮ সালের ২১ জুন মহারাষ্ট্রে। তার মা ছিলেন মারাঠি সিনেমা এবং নাট্য জগতের পরিচিত মুখ। তাই রিমার অভিনয়ে আসার ইচ্ছা ছিল ছোট থেকেই। খুব ছোববেলায় অভিনয় শুরুও করেন। আশির দশকে নাটকের মাধ্যমে তার অভিনয়ে হাতেখড়ি হয়েছিল। কিন্তু সিনেমা তখন দূর অস্ত। নাটকে যা আয় হচ্ছিল তাতে জীবনে সচ্ছলতা আসছিল না। তাই অভিনয়ের পাশাপাশি ব্যাংকে চাকরি নেন রিমা।

ঠিক সেই সময়েই সহকর্মী বিবেক লাগুর সঙ্গে তার পরিচয় হয়। বিবেকও নাটকের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। নাটকের প্রতি প্রেমই কাছাকাছি নিয়ে এসেছিল দুজনকে। দুই বছর প্রেম করার পর ১৯৭৮ সালে তারা বিয়ে করেন। রিমার ফিল্মি কেরিয়ার শুরু হয় বিয়ের পরেই। বিয়ের ঠিক এক বছর পর মারাঠি ছবি ‘সিংহাসন’-এ সুযোগ মেলে রিমার। অভিনয় প্রশংসিত হলেও খ্যাতি তখনও অনেক দূরে।

ছবিতে সুযোগ পেলেও রিমার থিয়েটারের প্রতি ভালোবাসা এতটুকুও কমেনি। কারণ, এই থিয়েটারই তাকে বলিউডে বড় সুযোগ এনে দিয়েছিল। মুম্বাইয়ের পৃথ্বী থিয়েটারে লেখক পিএল দেশপাণ্ডের ‘মাই ফেয়ার লেডি’ নাটকে অভিনয় করছিলেন রিমা। পৃথ্বীর মালিক ছিলেন বিখ্যাত অভিনেতা শশী কাপুর। রিমার অভিনয় নজর কাড়ে তার।

পরবর্তীতে শশী কাপুরের হাত ধরেই ‘কলিযুগ’ ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ ব্রেক মেলে রিমার। যদিও সেই ছবিতে বিশেষ কিছুই করার ছিল না তার। ওই একই সময়ে পরিচালক গোবিন্দ নিহলানিরও পছন্দ হয়ে যায় রিমার অভিনয়। নিজের ছবি ‘আক্রোশ’-এ তাকে অভিনয়ের সুযোগ করে দেন গোবিন্দ। তবে মায়ের নয়, নর্তকীর চরিত্রে।

সেই ছবিতেই কুলভূষণ খারবান্দার সঙ্গে রিমাকে একটি শয্যাদৃশ্যে অভিনয় করতে হয়েছিল। ওই রকম ঘনিষ্ঠ দৃশ্যে এর আগে কোনো দিনও করেননি তিনি। সে সময় রিমা বিবাহিত। তাই অসুবিধার সঙ্গে অস্বস্তিও হয়েছিল তার। সে কথা বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে জানান অভিনেত্রী। কিন্তু সমস্ত অসুবিধা উপেক্ষা করে সেই দৃশ্যে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে অভিনয় করেছিলেন রিমা।

হিন্দি ছবিতে হাতেখড়ি তো হয়ে গিয়েছিল, কিন্তু তখনও রিমার খ্যাতি ছিল অধরা। ১৯৮৮ সাল। ওই বছর বলিউডে অভিষেক হয় ‘মিস্টার পারফেকশনিস্ট’ আমির খানের। ছবির নাম ‘কায়ামত সে কায়ামত তক’। নায়িকা ছিলেন জুহি চাওলা। সেই ছবিতে রিমাকে জুহির মায়ের চরিত্রে অভিনয় করার প্রস্তাব দেয়া হয়। রিমার বয়স তখন মাত্র ৩০।

রাজি হয়ে যান রিমা। অভিনয় করেন জুহির মায়ের চরিত্রে। মাত্র ৩০ বছরেও মধ্যবয়স্ক এক মায়ের চরিত্রে অভিনয় করতে কোনো অসুবিধাই হয়নি তার। তবে রিমা অভিযোগ করেন, ওই ছবিতে তার অনেক অংশ কেটে বাদ দেয়া হয়। অভিমানি রিমা ঠিক করেন, হিন্দি ছবি ছেড়ে দিয়ে মারাঠি ছবি আর থিয়েটারে ফিরে যাবেন।

কিন্তু সে সময় হঠাৎ তার কাছে সালমান খান অভিনীত ‘ম্যায়নে প্যায়ার কিয়া’ ছবির অফার আসে। এখানেও সেই মায়ের চরিত্র। অনস্ক্রিন ছেলে সালমান তার থেকে মাত্র সাত বছরের ছোট। একটু অনিচ্ছা নিয়েই সেই ছবিতে অভিনয় করেন রিমা। ব্যাস, এরপর আর তাকে পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি।

তার কেরিয়ারগ্রাফ ক্রমশ উপরে উঠতে থাকে। বক্সঅফিসে অভাবনীয় সাফল্য পায় ‘ম্যায়নে প্যায়ার কিয়া ছবিটি। পরবর্তীতে ‘কুছ কুছ হোতা হ্যায়’ ও ‘কাল হো না হো ছবি দুটিতে শাহরুখ খানের মায়ের চরিত্রেও অভিনয় করেন রিমা। নতুন মা পেয়ে যায় বলিউড। এরপর থেকে মা মানেই রিমা লাগু। মাত্র এক বছরের ছোট সঞ্জয় দত্তের মায়ের ভূমিকায়ও দেখা গেছে তাকে।

কিন্তু কেরিয়ারের মধ্য গগণে ৫৯ বছর বয়সে না ফেরার দেশে চলে যান রিমা। ২০১৭ সালের ১৭ মে। মহেশ ভাট্টের ধারাবাহিক ‘নামকরণ’-এর জন্য শুটিং করছিলেন রিমা। হঠাৎই তার বুকে ব্যথা হয়। সবাই ভেবেছিল অ্যাসিডিটি। কিন্তু অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে ভর্তি করা হয় মুম্বাইয়ের এক বেসরকারি হাসপাতালে। জানানো য়য়, তার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। সেই রাতে মারা যান রিমা।

বলিউডের মায়ের মৃত্যুতে শোকে পাথর হয়ে গিয়েছিল ইন্ডাস্ট্রি। রিমার মৃত্যুতে সঞ্জয় দত্ত লিখেছিলেন, আরেকবার মাকে হারালাম। শোক প্রকাশ করেছিলেন সালমান-শাহরুখরাও। স্নেহময়ী মায়ের চরিত্রে রিমা যে মাইলস্টোন তৈরি করেছিলেন, তা আজও সিনেমাপ্রেমীদের মনে ভাস্বর।

ঢাকাটাইমস/৩০মে/এএইচ

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিনোদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :