মাঝরাতে রোগীদের পরামর্শ দেওয়াতেও ‍তৃপ্তি আছে

ডা. তানজিমুল ইসলাম
  প্রকাশিত : ০৪ জুন ২০২০, ১৯:৫৯
অ- অ+

গত বছরের শেষদিকে প্রথমে চীনে শনাক্ত হওয়া করোনাভাইরাস তিন মাসেরও কম সময়ে এখন বিশ্ব মহামারিতে রূপ নিয়েছে। ইতিমধ্যে প্রায় দুইশোর মতো দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনা। আক্রান্ত দেশের তালিকা থেকে বাদ যায়নি প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশও। দিনদিন করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা যেমনি বাড়ছে, তেমনিভাবে মৃত্যুর হারও বাড়ছে দেশে। এরমধ্যেও নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন সম্মুখযোদ্ধাখ্যাত চিকিৎসকরা।

করোনাভাইরাসের পরীক্ষা এখনো সহযলভ্য না হওয়ার ইমার্জেন্সি চিকিৎসা ছাড়া সাধারণ চিকিৎসা হাসপাতালগুলোতে দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। বিশেষ করে ডেন্টাল সার্জন হিসেবে রোগীদের এই সমস্যা অনুভব করছি।

ভয়াবহ এই করোনাভাইরাসকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকারি বিধিনিষেধের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই দাঁতের সমস্যায় থাকা রোগীদের সেবা দিতে ভিন্নধর্মী চিন্তা করা হয় শুরুর দিকে। একাধিক প্লাটফর্ম থেকে অতি জরুরি বা ইমার্জেন্সি অবস্থা ছাড়া ঘরে বসেই টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে সাময়িক সমাধান নিতে উৎসাহিত করেন ডেন্টাল চিকিৎসকরা। যা অন্যান্য বিভাগের চিকিৎসকরাও করছেন। এটা বেশ সাড়াও ফেলেছে।

তবে একটি বিষয় খুবই স্পষ্ট যে, স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে চেম্বারে গিয়ে পরামর্শ ফি দিয়ে চিকিৎসা নিতে হত সবাইকে। তবে দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে পুরোপুরি বিনামূল্যেই ডেন্টাল চিকিৎসকদের কাছ থেকে প্রতিদিন অগণিত রোগী টেলিচিকিৎসা নিচ্ছেন। অন্যান্য বিভাগের চিকিৎসাও বিনামূল্যে পাচ্ছেন রোগীরা।

এতে করে কোনো না কোনোভাবে অসুস্থ মানুষের একটি বড় অংশকে ঘরের বাইরে যেতে হচ্ছে না। ফলে করোনা ছড়ানোর ঝুঁকি কিছুটা কমছে। কারণ রোগীর সমস্যা সমাধান না হলে তারা বাইরে বের হতে বাধ্য হতো। যার কারণে আমার মতো অনেক ডেন্টাল সার্জন তাদের নিজেদের মোবাইল নম্বর রোগীদের জন্য উম্মুক্ত করে দিয়েছেন। নিদিষ্ট সময়ে ফোন করে সেবা নিচ্ছেন অনেকে।

তবে আমার ফোন নম্বরটি ২৪ ঘণ্টাই উন্মুক্ত থাকায় দিন-রাত নেই যখন খুশি ফোন করছেন রোগীরা। শুরুতে কিছুটা বিড়ম্বনা মনে হলো ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে গেছে সব। কারণ দেখা গেছে, রাতে সবার মতো আমিও হয়তো গভীর ঘুমে কিন্তু হঠাৎ অপরিচিত ফোনে ঘুমটা ভেঙে যায়। ফোন রিসিভ করতেই দাঁতে ব্যথায় কাতরানোর শব্দে নিমিষেই চলে যায় বিরক্তিভাগ। পরিস্থিতি সব শুনে পরামর্শ দিয়ে আবার ঘুমিয়ে পড়ি। এমন ঘটনা একাধিকবার ঘটেছে। তবে ভেবে দেখেছি, আরামের ঘুম নষ্ট হলেও একজন নিরূপায় মানুষকে সেবা দিতে পারলাম সেটাও কম কিসে। এতে আলাদা একটি তৃপ্তি আছে। এই সুযোগ হয়তো কখনো নাও আসতে পারে।

করোনাকালে জনপ্রিয়তা পাওয়া টেলিমেডিসিন দেয়ার সুবিধা হলো চিকিৎসক যেখানেই থাকেন রোগীর কাছ থেকে সার্বিক অবস্থা শুনে পরামর্শ দিতে পারেন। আর রোগীও ঘরে বসেই দ্রুত সময়ের মধ্যে অন্তত জরুরি সেবাটা পেতে পারেন। তবে সঠিকভাবে সমস্যা বলতে না পারলে অনেক সময় সঠিক পরামর্শ নাও পাওয়া যেতে পারে। এজন্য উভয়কেই সচেতন থাকতে হয়। কারণ এমনটা হলে হিতে বিপরীত হওয়ার সুযোগ থাকে। যা কারো জন্যই কাম্য নয়।

এবার আসি চিকিৎসককে পরামর্শের জন্য যারা ফোন করবেন তাদেরও একটি বিষয় মাথায় রাখা উচিত। তা হলো- কখন ফোন করা উচিত বা নির্ধারিত সময় অনুযায়ী ফোন করলে ভালো হয়। কারণ চিকিৎসকেরও ব্যক্তিগত জীবন আছে, পরিবার আছে। তাদের সময় দিতে হয়। অবশ্য রোগীর সমস্যা রাত-দিন ভেবে দেখা দেয় না এটাও ঠিক। কারণ দেখা গেল হঠাৎ করে দাঁত বা মুখে কেউ আঘাত পেল। অথবা অন্য কোনো সমস্যা দেখা দিল। তাৎক্ষণিকভাবে যদি তিনি কোন BDS ডিগ্রিধারী ডেন্টাল সার্জনের সঙ্গে পরামর্শ করতে পারেন তাহলে অন্তত জরুরি পরিস্থিতিতে কিছুটা হলেও উপকৃত হবেন।

এই চিন্তা থেকেই মহামারি করোনার সময় টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে রোগীকে সেবা দেয়ার প্রক্রিয়ায় নিজেকে যুক্ত করেছি। নিজের নম্বরটিও সার্বক্ষণিক ফোন করার জন্য উম্মুক্ত করে রেখেছি। আমার মনে হয়েছে- জাতীয় সমস্যার সময়ে এই সেবা দেয়াটা আমার দায়িত্ব।

লেখক: বিডিএস(আরইউ), পিজিটি (ওএমএস), ট্রেইনড ইন এস্থেটিক ডেন্ট্রিটি (ভারত), ওরাল অ্যান্ড ডেন্টাল সার্জন।

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
মাহমুদুর রহমানের মায়ের ইন্তেকালে সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের শোক প্রকাশ
অনুমোদনহীন সংগঠন গঠনের বিষয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের সতর্ক করেছে বিএনপি
সংস্কার বিষয়ে বিএনপির আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই: মির্জা ফখরুল
মসজিদের দোতলা থেকে শিশুর রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার 
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা