বিশ্বাসই হচ্ছে না বেঁচে আছি: খুশি

নাট্য অভিনেত্রী শাহনাজ খুশির ফেসবুক থেকে
‘চার মাস পর করোনার মধ্যে প্রথম শুটিং এ যাচ্ছি, খারাপ লাগা নিয়ে পরশু এমন একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। নাহ, আমাকে অদৃশ্য করোনা এখনো ছোঁয়নি, আমাকে মৃত্যুর দুয়ারে নিয়েছিল! গাড়ির মধ্যে আমি ছিলাম। একেবারেই অলৌকিক কিছু না হলে আমার বাঁচার কথা নয়! আমার এখনো বিশ্বাসই হচ্ছে না যে আমি বেঁচে আছি, ভালো আছি! কত বড় অরাজকতার মধ্যে আমরা বাস করছি, তা ভুক্তভোগী সবাই জানি।’
‘আজ স্বাস্থ্যখাত সামনে এসেছে বলে সাহেদদের মত অসংখ্য অসংখ্য কালপিট সামনে আসছে, পরিবহন খাতটা দীর্ঘকাল ধরে এমনই! প্রতিদিন এমন অসংখ্য দুর্ঘটনায় শেষ হচ্ছে হাজারো পরিবার, খালি হচ্ছে মায়ের কোল, সন্তানের বুক! কিন্তু কোনও প্রতিকার নেই। স্বাস্থ্যখাতের চেয়ে আরও দুর্গম/অন্ধকার/অন্যায়ে ঠাসা এ পরিবহনখাত!’
‘ছবিতে যে বিশাল আকারের কার্গো, এটিই গাড়ীর উপর ওঠেছে, ঠেলে নিয়ে পেছনে থামা ট্রাকের সাথে চেপে ধরছে, সেটি চালাচ্ছিল হেলপার, বয়স ১৬/১৭। ড্রাইভার যিনি, উনিও তাই। গুরুত্বপূর্ণ কথা হল, উনার কোনও লাইসেন্স নাই! এমন নাকি চলে, কোনও সমস্যা হয় না!’
‘আমি আসলে পুরা সেন্সে ছিলাম না, কিছু কিছু কথা আমি ভুলতে পারছি না! পুবাইল পুলিশ/আমার শুটিং এর ছেলেরা/ আমার বাসার মানুষ সবাই চলে এসেছে। আমি তখন থর কম্প একটা মাংস পিণ্ড কেবল। কেউ একজন ক্ষতিপূরনের কথা বলায় ড্রাইভার বলছে, ‘মানুষ মাইরালায় ট্যাহা লাগে না, বাঁইচ্যা আছে, তাও ট্যাহা লাগবো! সামনের টেম্পোর ছয়জনরে বাঁচান্যার লাই দুইজনরে মাইরা দেয়া কুনু বিষয় না!’ এমন অসংলগ্ন কথা বার্তা।’
‘মীরের বাজার পুলিশ বক্সে দায়িত্বে থাকা পুলিশ এবং থানা পুলিশ ভাইয়েরা যা করেছেন আমার জন্য, তা সারাজীবন কোনওদিন ভুলবো না। সেই সাথে জেনে এসেছি তাদের নেতৃস্থানীয়দের এবং পরিবহন লিডার বলয়ের কাছে অসহায়ত্বের কথা!’
‘আমি কাল থেকে অপ্রকৃতস্থ প্রায়! খেতে পারছি না, চোখ বন্ধ করতে পারছি না, আমার ছেলে দুইটা এ ভয়াবহতায় এলোমেলো, বাচ্চা ছেলেটা রাতে ঘুমের ঔষধ খেয়ে ঘুমিয়েছে! আমি কিছু বুঝতে চাই না, আমি আমার দেশের প্রতি/আইনের প্রতি শতভাগ শ্রদ্ধা এবং দায়িত্ববান। আমার এবং আমার পরিবারের দ্বারা দেশের বিন্দু পরিমাণ সম্মান ক্ষুন্ন হয় নাই। বরং দেশের মর্যাদা রক্ষায় আমরা বদ্ধ পরিকর।’
‘আমি শুধু আমার জীবনের নিরাপত্তা চাই মাননীয়! জীবনের এত যুদ্ধ, এত শিক্ষার পর, একজন অশিক্ষিত নেশাগ্রস্ত লাইসেন্সবিহীন ড্রাইভারের হাতে জীবন দিতে রাজি নই। দয়া করে আইন সংশোধন করে, আমাদের জীবনকে নিরাপদ করুন। আমি আমার সন্তানকে দায়িত্বপূর্ন নাগরিক করবার দায়িত্বভার নিষ্ঠার সাথে পালন করছি। আপনারা আমাদের জীবন/পথকে নিরাপদ করুন মহামান্য।’
প্রসঙ্গত, গেল বৃহস্পতিবার ঈদের নাটক ‘নসু ভিলেন’-এর শুটিংয়ে পুবাইল যাওয়ার পথে এই দুর্ঘটনা ঘটে। মাজুখান বাজারের কাছে তখন গাড়িতে অভিনেত্রী খুশি একাই ছিলেন। তিনি শারীরিকভাবে সুস্থ থাকলেও মানসিকভাবে দারুণ বিপর্যস্ত। অনেকটাই যেন কোমার মধ্যে রয়েছেন। তাকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় বিপর্যস্ত তার স্বামী নাট্যকার-অভিনেতা বৃন্দাবন দাস ও দুই ছেলে।
ঢাকাটাইমস/১৬জুলাই/এএইচ

মন্তব্য করুন