সাধারণ শিল্পী কলাকুশলীদের অসম্মানই নাকি চলচ্চিত্রের ভাষা

নিথর মাহবুব
 | প্রকাশিত : ২১ জুলাই ২০২০, ১১:২২

বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শেষই বলা চলে। কাজ নাই বলে এখন আছে শুধু দলাদলি আর ফালাফালি। যখন কোনো স্থানে মেধার সংকট দেখাদেয় সেখানে আগাছাদের দাপট বেড়ে যায়, কাজ কমে যায়, অতিমাত্রায় দলাদলি কোন্দল দেখা দেয়, অযোগ্যরা বড় বড় পদের অধিকারী হয়। যেটা এখন আমাদের ফিল্ম ইন্ড্রাষ্টিতে বর্তমান।

এখন আমাদের চলচ্চিত্রের কিছু সুপার স্টার নায়ক-নায়িকাদের নাম শুনলেই মানুষ হাসাহাসি করে। আবার কিছু নায়ক-নায়িকা আছে যাদের দাম পাবলিকের কাছে টিভি নাটকের ছোট-খাট তারকারচেয়েও কম। আমাদের চলচ্চিত্র শিল্প আজকের এই অবস্থায় আসার মূল কারণ- সাধারণ শিল্পী আর কলাকুশলীদের অসম্মান।

এখানে হিরো হিরোইন বাদে নতুন কাউকে বা কম পেমেন্টের শিল্পীদের বা নেপথ্যের শিল্পীদের তুইতুকারি করা হয়, সামান্য কিছুর জন্য তাদের সঙ্গে বাজে ব্যবহার করা হয়, মা-বাবা তুলে গালি দেওয়া হয়। এটা নাকি আমাদের ঢালিউডের চলচ্চিত্রের ভাষা।

আমার ধারণা আমাদের চলচ্চিত্রের ইন্ডাস্ট্রিতে এই ভাষার প্রচলন থাকার কারণে মেধাবীরা এবং ভদ্র পরিবারের ছেলে-মেয়েরা দিনে দিনে এখানে আসা বন্ধ করেছেন। আর মেধাবীদের অভাবে পুরু ইন্ড্রাষ্ট্রি এখন ডুবতে বসেছে।

আমি অবাক হই ফিল্ম ইন্ডাষ্ট্রিতে যখন নায়ক মান্নার প্রশংসা করা হয়। আমাদের দেশে এখন খারাপগুলো ভাল, অনিয়মগুলো নিয়ম. তাই হয়ত এমন অবস্থা। আমার মতে মান্নার মতো মানুষদের চলচ্চিত্রে আগমন ঘটেছিল বলেই দিনে দিনে চলচ্চিত্রের অবস্থা খারাপ হয়েছে। ছবিতে খুব কুদাকুদি করত পারত বলে সে নাকি সুপার স্টার ছিল।

আজ থেকে ১৬-১৭ বছর আগে যখন সাংবাদিক ছিলাম না, তখন এফডিসিতে প্রথম কোন একটি সিনেমায় অভিনয় করতে গিয়েছিলাম। ওইদিন একটি গানের দৃশ্যে কাজ হচ্ছিল। দুইটা ছেলে মান্নাকে শিকলে বাঁধা অবস্থায় ধরে রেখে ছিল। নায়ক বলে তার বিশাল কদর চলছিল, কেউ একজন তাকে কমলা ছিলে মুখে তুলে দিচ্ছিল। এত মানুষের মধ্যে বিষয়টি খুবই অস্বাভাবিক মনে হচ্ছিল।

দৃশ্যধারণ শুরু হবার পর একটা ছেলের হাত থেকে হঠাৎ শিকল ছুটে যায়। মান্না ওই ছেলেটির কাছে গিয়ে ছেলেটির গালে প্রচন্ড জোরে একটা থাপ্পর দেয়। সেদিন খুবই মেজাজ খারাপ হয়েছিল ওই দৃশ্য দেখে। আজকের পজিশনে থাকলে মান্নার সঙ্গে ঠিকই এই নিয়ে তর্ক হত। তার পরেও আমি ওই ইউনিটের লোকদের কাছে প্রতিবাদ করেছিলাম। আমি প্রশ্ন করেছিলাম- আপনারা এখানে সবাইকে তুইতুকারি করছেন কেন?

অভিনয়টা মানুষের ভালবাসা, এখানে ডাক্তার ইঞ্জিনিয়রও ছোট চরিত্রে অভিনয় করতে আসতে পারে, কিন্তু আপনারা যেভাবে তুই-তুকারি, গালি-গালাজ, মার-ধর করেন তাতে মানুষকে অসম্মান করা হয়। যাদের আপনারা তাচ্ছিল্য করছেন; তাদের যোগ্যতা, পড়া-লেখা আপনাদেরচেয়ে অনেক বেশিও হতে পারে। কিন্তু সবাই আমার সঙ্গে সেদিন যুক্তি দেখায় এগুলো তাদের ফিল্মের ভাষা।

যাই হোক, এই ঘটনার পর আমি আর এই ছবির সঙ্গে থাকিনি, পরিবেশটা খুব বাজে নোংরা দেখে বাণিজ্যিক সিনেমার প্রতি রুচি নষ্ট হয়ে যায়। সেদিন দুপুরের খাবার খেয়ে চলে আসি। পরে যখন সাংবাদিকতায় আসলাম, মান্নার সঙ্গে অনেক বারই দেখা হয়েছে। কিন্তু তার সঙ্গে কখনোই কথা বলার রুচি হয়নি।

লেখক: সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক কর্মী

ঢাকাটাইমস/২১জুলাই/এসকেএস

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফেসবুক কর্নার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :