কিশোর শ্রেণি ক্ষতিগ্রস্ত হলে দেশের ভবিষ্যৎ ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়

মমিনুল ইসলাম
  প্রকাশিত : ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১৫:১১
অ- অ+

সারা দেশে কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য বেড়ে গেছে। তার মানে আমাদের পরিবারগুলোর বন্ধন শিথিল হচ্ছে। আন্ডারওয়ার্ল্ডের গডফাদাররা মাথাচাড়া দিচ্ছে। এর মানে আমাদের চোখগুলো স্বপ্নহীন হয়ে পড়ছে।

আমাদের কৈশোরে ‘এইম ইন লাইফ’ শব্দটি বারবার সামনে এসে পড়তো। পরীক্ষায় এ বিষয়ে ‘রচনা’ লিখতে হতো। আমরাও ভবিষ্যতে কী হবো সে বিষয়ে চিন্তিত থাকতাম। এখন কোনো কিশোরেরই কোনো ‘এইম ইন লাইফ’ নেই। আমি ক্লাসে ছাত্রদের এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করি-তারা বোকার মতো তাকিয়ে থাকে, যেন এই শব্দটিই তারা শুনেনি। তারা এলোমেলো উত্তর দেয়; দেখা যাক, যা কপালে আছে তাই হবে।

মূল সমস্যাটা হচ্ছে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায়। এই শিক্ষাব্যবস্থা একজন কিশোর-তরুণের সামনে কোনো স্বপ্ন বা উদ্দেশ্য উপস্থাপন করতে পারছে না। জাতিকে দেশপ্রেম, দায়িত্ববোধ, নাগরিকজ্ঞান আর সামাজিক সচেতনতা শিখাতে ব্যর্থ হচ্ছে।

আমাদের রাজনীতি এখন নিজেদের সৃষ্ট পচা-কাদার চোরাবালিতে ডুবুডুবু, যে কারণে কিশোর-তরুণদের মধ্যে কোনো লিডারশিপ মানসিকতা তৈরি হচ্ছে না। তারা আত্মমর্যাদা প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে অহংকারী হয়ে উঠছে না। এ কারণে যাচ্ছেতাইভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

মাদক আমাদের শেষ করে দিচ্ছে। একটি কিশোর যখন প্রথম মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে, তখন সে নেশার প্রয়োজনে যেকোনো অপরাধমূলক পদক্ষেপে অংশ নেয়। নষ্ট রাজনীতির দুষ্ট থাবা তো আছেই। সেখানেও তারা সৈনিক হিসেবে বেপরোয়া হয়ে ওঠে। নিজেদের জীবন সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট কোনো ধারণা না থাকায় তারা জীবনের মূল্যও বুঝতে চায় না। তারা মারো অথবা মরো-এই সূত্রে নিজেদের ক্ষমতা প্রদর্শনের নেশায় উন্মত্ত হয়ে ওঠে।

পুরো জাতিকেই ভাবতে হবে- এই কিশোর, এরা কারা? এরাই আমাদের সন্তান, আমাদের উত্তরসূরি। এদের ওপরই নির্ভর করছে আমাদের ভবিষ্যৎ। এদের প্রতি উদাসীনতা আর অবহেলা আমাদের নিষ্ঠুর পরিণতির দিকে নিয়ে যাবে। আমরা যদি তাদের সামনে সুন্দরকে উপস্থাপন করতে না পারি, তারা তো অসুন্দরের দিকেই যাবে।

আইন বা বিচার কোনো সমাধান না। সমাধান নিশ্চিত করতে হবে জাতীয় দর্শনে। আমাদের সংস্কৃতির একটি ধারাবাহিক ঐতিহ্য আছে। এখানে নীতি-নৈতিকতা আর পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা ও সহযোগিতার ঐতিহ্যবাহী ধারা প্রবাহমান। সেই আলোকে শিক্ষাব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে। অসচেতন শিক্ষা নিকৃষ্ট মানুষ তৈরি করে। অমানবিক জ্ঞান অমানুষ তৈরি করে।

রাষ্ট্র যদি অবকাঠামোগতভাবে উন্নত হয়। অর্থনৈতিকভাবে ধনী হয় আর নাগরিকরা যদি অজ্ঞান-অসচেতন হয়, সে রাষ্ট্রের ভেঙে পড়া সময়ের ব্যাপার মাত্র।

একটি পরিবারে একটি কিশোর বিপথগামী হয়ে পড়া মানে একটি জাহান্নামের দরজা খুলে যাওয়া। একটি এলাকায় একটি কিশোর গ্যাং গড়ে ওঠা মানে ওই এলাকার সবার ঘুম হারাম হয়ে যাওয়া। একটি দেশে কিশোর শ্রেণি ক্ষতিগ্রস্ত হলে সেই দেশের ভবিষ্যৎ নিশ্চিতভাবে ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে।

আসুন আমরা আমাদের সন্তানদের সঠিক পথে ধরে রাখতে যার যার অবস্থান থেকে কাজ করি।

লেখক: শিক্ষক ও নাট্যনির্মাতা

ঢাকাটাইমস/৩০সেপ্টেম্বর/এসকেএস

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
প্রেমের টানে মালয়েশিয়ার তরুণী বদলগাছীতে, বসলেন বিয়ের পিঁড়িতে
মুন্সীগঞ্জে বাসের ধাক্কায় প্রাণ গেল ২ বন্ধুর  
চুয়াডাঙ্গায় তেলবাহী ট্রাপচাপায় ৩ জন নিহত
ক্যাসিনোকাণ্ড অভিযানের নেপথ্য কাহিনী জানলে চমকে যাবেন আপনিও
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা