সড়ক ঘেঁষে মুরগির লিটারের স্তুপ, স্বাস্থ্যঝুঁকিতে জনসাধারণ

বদরুল ইসলাম বিপ্লব, ঠাকুরগাঁও
  প্রকাশিত : ৩০ অক্টোবর ২০২০, ১৪:৩৬
অ- অ+

ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলার নেকমরদ-চেকপোস্ট সড়ক ঘেঁষে শত শত বস্তা মুরগির লিটার স্তুপে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়েছেন স্থানীয়রা। এলাকাবাসী জানায়, এ বিষয়ে প্রশাসনের নিকট অভিযোগ করেও প্রতিকার পাচ্ছেন না তারা।

স্থানীয়রা জানান, কৃষকদের চাহিদার কথা ভেবে এলাকায় গড়ে উঠেছে মুরগির লিটার বিক্রির ব্যবসা। কিছু সংখ্যক ব্যক্তি দীর্ঘ চার পাঁচ বছর ধরে এসব লিটারের ব্যবসা করে আসছেন। এসব লিটার জমিতে জৈব সার হিসেবে প্রয়োগ করা হয়। উপজেলার নেকমরদ থেকে চেকপোস্ট সড়কে রাস্তার পাশে স্তুপ করে রাখা হয় হাজার হাজার লিটারের বস্তা।

তারা বলেন, ‘লিটারের দুর্গন্ধে স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছি। এসব বিষয়ে প্রতিবাদ করলে বিভিন্নভাবে হয়রানি করা হয়। র্দীঘদিন ধরে লিটারের কারণে এলাকার পরিবেশ বিপর্যয় হলেও আমরা উপজেলা প্রশাসনের তেমন কোন পদক্ষেপ দেখিনি।’

শুক্রবার নেকমরদ-চেকপোস্ট সড়ক এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, রাস্তার পাশে স্তুপ করে রাখা হয়েছে মুরগির লিটারের শতশত বস্তা। নেকমরদ থেকে মালিভিটা কাউন্সিল বাজারের আশপাশ গাজীগড়, ব্যাংকপুকুর এবং চেকপোস্ট বাজার পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে রাখা হয়েছে লিটারের মজুদ। অনেকে আবার রাস্তার পাশে স্থায়ী বা অস্থায়ী গোডাউন তৈরি করে রেখেছেন লিটার।

কাউন্সিল বাজারের চেকপোস্টমুখী সড়কে ওই এলাকার ইমরান সড়কের পাশে তার ব্যক্তি মালিকানার গোডাউনে এবং সড়ক ঘেষেঁই বস্তার খামাল করে রেখেছেন মুরগির লিটার। সেখানে আবার ১০ চাকার ট্রাক ভর্তি মুরগির লিটারের একটি গাড়ি দাঁড়িয়ে রয়েছে। মশামাছিগুলো লিটারের বস্তা ঘিরে ধরে ভন ভন করে ঊড়ছে। মাছিগুলো একবার লিটারের বস্তায় যাচ্ছে আবার সাধারণ মানুষের শরীরে বা আশপাশের দোকানের বিভিন্ন পণ্যের উপর বসছে।

ইমরানের কাছে এমন ভরা বাজারের সড়কের পাশে লিটার রাখার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সবাই রেখেছেন তাই আমিও রেখেছেন। কারো কিছু করার থাকলে করুক।’

তবে ইমরানের মুরগির লিটার সড়কের পাশ থেকে অপসারণ করা হয়েছে। সেইসঙ্গে পরিবেশ বিপর্যয়ের অভিযোগে ওই এলাকার বাসিন্দা ও ব্যবসায়ী আবু তালেব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘সড়কের সঙ্গে আমার বাড়ি, সেখান থেকে প্রায় ত্রিশ ফিট দূরেই ইমরান একটি গোডাউনে লিটার রেখেছে। আবার তার পাশেই খোলা আকাশের নিচে লিটারের বস্তা খামাল করে রেখেছে। বাড়িতে মশামাছির উপদ্রব বেড়ে গেছে, লিটারের বিষাক্ত গন্ধে আমার পরিবারের লোকজন প্রায় অসুস্থ হয়ে পড়ছে। এছাড়াও বিভিন্ন অসুখ-বিসুখে আক্রান্ত হচ্ছে। তাই আমি ইউএনও বরাবর একটি অভিযোগ দিয়েছি। তবে এখনো কোন প্রতিকার পাই নি।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক ব্যক্তি বলেন, ‘লিটারের কারণে আমাদের এলাকায় চরম পরিবেশের বিপর্যয় ঘটেছে। স্বাভাবিক জীবন-যাপন করা দুস্কর হয়ে পড়েছে। এক দিকে লিটারের বিষাক্ত দুর্গন্ধ অন্যদিকে বাসা বাড়ি হাট-বাজারে মশা-মাছির অবাধ বিচরণে আমরা বিভিন্ন ভাইরাসে সংক্রমিত হচ্ছি।’

ছোট শিশু থেকে শুরু করে সব বয়সের মানুষই বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।

তাই তারা অনতিবিলম্বে সড়কের পাশে কিংবা জনবহুল এলাকা বাসাবাড়ির সামনে থেকে বিষাক্ত মুরগির লিটার অপসারণের জন্য উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট জোর দাবি জানিয়েছেন।

ওই সড়কে চলাচলকারী আব্দুর রহিম নামে একজন পথচারী বলেন, ‘লিটারের দুর্গন্ধে রাস্তায় চলাচল করা যায় না। নাক চেপে ধরে একটি স্তুপ পার হতে না হতেই পড়ে আরেকটি লিটারের স্তুপ। লিটারের দুগর্ন্ধে স্কুলগামী ছাত্রছাত্রীরা অনেক সময় বমি করে।

শফিকুল ইসলাম নামে অপর এক পথচারী বলেন, ‘সরকারি দলের সঙ্গে জড়িত কিছুসংখ্যক ব্যক্তি লিটার বিক্রির ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। তাদের বিভিন্নভাবে বললেও তারা টাকার লোভে মানুষের কষ্টের কথা কানে নেন না।’

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ফিরোজ আলম জানান, লিটারের বস্তায় যে মাছি বসে, সে মাছি আবার বাসাবাড়ির বিভিন্ন খাবার বা প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বসে। এসব মশামাছি থেকে বিভিন্ন ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে। এতে মানুষজন বিভিন্ন রোগে সংক্রমিত হয়ে ডায়রিয়াসহ এলাকার মানুষ বিভিন্ন অসুখে পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন তিনি।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মৌসুমী আফরিদা জানান, অভিযোগের আলোকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

(ঢাকাটাইমস/৩০অক্টোবর/পিএল)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
রাজনীতিতে অভিভাবক দল হিসেবে আমরা বারবার ধৈর্য ধরেছি: অধ্যক্ষ সেলিম ভুইয়া
এনবিআরের আরও ৬ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বরখাস্ত
প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতে শিক্ষা উপদেষ্টার আশ্বাস
তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তানের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে আরও একজন গ্রেপ্তার
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা