খালের মাটি কেটে রাস্তা নির্মাণে জলাবদ্ধতা নিরসন

সুকুমল কুমার প্রামানিক, রাণীনগর (নওগাঁ)
 | প্রকাশিত : ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১৫:১৯

নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার মাধাইমুড়ি গ্রামে খাল কেটে রাস্তা নির্মাণ কাজ চলছে। দীর্ঘ বছর পর খাল খনন করে রাস্তাটি নির্মাণ করায় জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পেতে যাচ্ছে ওই এলাকার কয়েক গ্রামের মানুষ। এলাকাবাসীর সুবিধার্থে স্থানীয় গ্রামবাসী ও সরকারি অর্থায়নে এই রাস্তা নির্মাণ হচ্ছে।

এতে একদিকে যেমন রাস্তায় চলাচলে দুর্ভোগ লাঘব হবে। অন্যদিকে আগের চাইতে প্রায় এক হাজার হেক্টর জমিতে বেশি ফসল উৎপাদন হবে।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, পাকিস্তান আমলে এলাকার পানি নিষ্কাশন এবং রক্তদহ বিল এলাকা থেকে কৃষি উৎপাদিত ফসল বহন ও চলাচলের জন্য মাধাইমুড়ী গ্রামের মধ্য দিয়ে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার একটি খাল কাম রাস্তা নির্মাণ করা হয়। এরপর খাল ও রাস্তা সংস্কার না করায় একদিকে যেমন রাস্তা জমির সঙ্গে মিশে যায়। অন্যদিকে খাল ভরাট হয়ে পরায় এলাকার ফসলি জমির পানি নিষ্কাশন বন্ধ হয়ে পরে। ফলে বর্ষা মৌসুমে ভারী বর্ষণ ও বন্যার পানি জমিতে দীর্ঘ জলাবদ্ধা সৃষ্টি হলে ফসল উৎপাদন ব্যহত হতে থাকে। এছাড়া বিলের মধ্য থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে উৎপাদিত ফসল পরিবহণে চরম দুর্ভোগে পরে ওই এলাকার মাধাইমুড়ি, মধুপুর, ক্ষুদ্র বেলঘড়িয়া, আমগ্রামসহ প্রায় ৭/৮টি গ্রামের মানুষ।

দীর্ঘ ৩০ বছর আগে কোন মতে খাল খনন ও রাস্তা সংস্কার করলেও আবারো আগের মতোই অবস্থা সৃষ্টি হয়। পরে রাস্তা নির্মাণ ও খাল খননে বিভিন্ন দপ্তরে ধরনা দিয়েও এর কোন সুরাহা করতে পারেনি এলাকাবাসী। এক পর্যায়ে গত ২০১৯-২০ অর্থ বছরে কাবিটা প্রকল্প থেকে ২ লাখ ৬৮ হাজার টাকা বরাদ্দ নিয়ে রাস্তা নির্মাণের কাজ শুরু করা হয়। এতেও পুরো রাস্তা নির্মাণ না হওয়ায় মাধাইমুড়ী গ্রামের লোকজন বাধ্য হয়ে কিছুটা দুর্ভোগ লাঘব করতে গ্রাম থেকে প্রায় এক লাখ ৬০০০ টাকা উত্তোলন করে রাস্তা নির্মাণ ও খাল খনন কাজ শুরু করে।

এরপর স্থানীয় কালীগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম বাবলু মণ্ডল এগিয়ে এসে আরো এক দফা কাবিটা প্রকল্প থেকে আরো এক লাখ ৯৫ হাজার টাকা বরাদ্দ নিয়ে খাল থেকে মাটি কেটে রাস্তা নির্মাণ কাজ শুরু করেছেন।

মাধাইমুড়ি গ্রামের শফিকুল ইসলাম, নুরুল হক, আব্দুল হালিম শিশিরসহ আরো অনেকে জানান, রাস্তা না থাকায় ধান কাটা, মাড়াই ও পরিবহনে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হতো। এছাড়া খাল ভরাট হওয়ায় বর্ষা ও বন্যার পানি দীর্ঘ জলাবদ্ধতা থাকার কারণে কয়েক হাজার বিঘা জমিতে ফসল উৎপাদন ব্যহত হতো। কিন্তু এই খাল থেকে মাটি কেটে রাস্তা নির্মাণ করায় একদিকে যেমন পরিবহন দুর্ভোগ লাঘব হবে, অন্যদিকে পানি নিষ্কাশনে অধিক পরিমাণ জমিতে ফসল উৎপাদন হবে। এতে লাভবান হবে এলাকার লোকজন।

তবে এলাকাবাসী জানান, এখনো প্রায় দুই/আড়াই কিলোমিটার রাস্তার ও খাল খননের কাজ বাকি রয়েছে। এলাকাবাসীর দুর্ভোগ পুরোপুরি লাঘব করতে প্রকল্পের মাধ্যমে বাকি কাজ সম্পন্ন করতে সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আর্কষণ করেছেন তারা।

রাণীনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘খাল ভরাট হয়ে যাওয়ায় ওই এলাকার কয়েক হাজার বিঘা জমির ফসল জলাবদ্ধতায় নষ্ট হয়ে যেত। এছাড়া রাস্তা না থাকায় কৃষকদের ধান কাটা, মাড়াই ও কৃষিপণ্য পরিবহণে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় হতো। এজন্য গত বোরো মৌসুমে ওই এলাকার কৃষকদের সংগঠিত করেছিলাম। রাস্তা নির্মাণ এবং খাল খননের কাজে তারা সফল হয়েছে। ’

রাণীনগর উপজেলার কালীগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম বাবলু মণ্ডল জানান, বরাদ্দ অর্থ দিয়ে কাজ করার পরও আরও আড়াই কিলোমিটার রাস্তার কাজ বাকি থাকবে। তবে, যত দ্রুত সম্ভব প্রকল্পের মাধ্যমে বরাদ্দ নিয়ে অবশিষ্ট রাস্তা নির্মাণ ও নির্মাণকৃত রাস্তায় ইট সোলিংয়ের কাজ করা হবে। এতে রাস্তা এবং খাল দু’টিই সচল হবে।

(ঢাকাটাইমস/৭ফেব্রুয়ারি/পিএল)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :