ছাত্রাবাসে ঢুকে শ্রমিকদের হামলা

দিনভর উত্তাল বরিশাল

বরিশাল ব্যুরো প্রধান, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ২০:২৭ | প্রকাশিত : ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ২০:১৫

কাউন্টারে দ্বন্দ্বের জেরে মেসে ঢুকে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) শিক্ষার্থীদের উপর শ্রমিকদের হামলার ঘটনায় দিনভর উত্তাল রয়েছে জেলা সদর। মঙ্গলবার দুপুর থেকে শুরু হওয়া দ্বন্দ্ব-সংঘাতের রেশ বুধবার বিকাল পর্যন্ত গড়িয়েছে। দুই পক্ষের দ্বন্দ্ব-সংঘাতে পুড়েছে একটি বাস। দিনভর ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম গুরুত্বর্পূণ বরিশাল-পটুয়াখালী-ভোলা মহাসড়কের যাত্রীদের ও পণ্যবাহী চালকদের। আহত হয়ে শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ববির ১৩ শিক্ষার্থী। আহতদের মধ্যে মৃত্তিকা ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের নুরুল্লাহ সিদ্দিকী, রসায়ন বিভাগের এস এম সোহানুর রহমান, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের আহসানুজ্জামান, গণিত বিভাগের ফজলুল হক রাজীব, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের আলীম সালেহী, বোটানি ও ক্রপ সাইন্সের আলী হাসান, বাংলা বিভাগের মো. রাজন হোসেন এবং মার্কেটিং বিভাগের মাহবুবুর রহমান, মাহাদী হাসান ইমন, মিরাজ হাওলাদার ও সজীব শেখ চিকিৎসাধীন রয়েছেন। অন্য দুই জন চিকিৎসা নিয়ে ফিরে গেছেন।

ঘটনার শুরু হয় যেভাবে: মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টায় ববির অর্থনীতি বিভাগের দুই শিক্ষার্থী তৌফিকুল সজল ও ফারজানা আক্তার যশোরে নিজেদের বাড়ি যেতে বিআরটিসি বাস কাউন্টারে যান। এ সময় কাউন্টারের কর্মচারী রফিকের সঙ্গে তাদের কথা কাটাকাটি হয়। এর জের ধরে সজলকে ছুরিকাঘাত করেন রফিক। এছাড়া ফারজানাকে লাঞ্ছিত করা হয়। এ সংবাদ ববির শিক্ষার্থীদের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে। বিক্ষুদ্ধ শিক্ষার্থীরা দেড়টার দিকে ঘটনাস্থলে হাজির হন। দুপুর ২টা থেকে সড়কের উপর টায়ারে অগ্নিসংযোগ ও বিক্ষোভ শুরু করেন। এ সময় তারা বাস কাউন্টারে ভাঙচুর করেন। তবে এর আগে কাউন্টার ছেড়ে পালিয়ে যান শ্রমিক রফিক। পরে পুলিশ রফিককে আটক করে। পুলিশ তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাসের দুই ঘণ্টা পর সড়ক অবরোধ প্রত্যাহার করে নেন শিক্ষার্থীরা। পুলিশের উদ্যোগে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। কিন্তু এ পরিস্থিতি রাত পার করতে পারেনি। গভীর রাতে নগরীর রুপাতলী হাউজিং এলাকার ববি শিক্ষার্থীদের মেসে বাস শ্রমিকদের স্বশস্ত্র হামলায় পরিস্থিতি আবারো বৈরি হয়। বাস শ্রমিকদের হামলায় ববির ১৩ শিক্ষার্থী আহত হন। এর মধ্যে গুরুতর ১১ জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।

গভীর রাতে যা ঘটে: নগরীর রুপাতলী হাউজিং এলাকার বিভিন্ন বাসায় ভাড়া হিসেবে থাকে ববিল শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার ববি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে নেতৃত্ব দেয়া মাহমুদুল হাসান রুপাতলী হাউজিং এলাকায় বাস করেন। শিক্ষার্থীদের দাবি, মাহমুদুল হাসান তমালের মেসে আক্রমণ করেন কতিপয় পরিবহন শ্রমিকরা। এ সময় দুইজন শিক্ষার্থীকে মারধর করে ডোবায় ফেলে দেয় হামলাকারীরা। ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। তখন তমালকে উদ্ধারে এগিয়ে আসেন পাশের বিভিন্ন মেসের শিক্ষার্থীরা। এ সময় ৬০ থেকে ৭০ জন পরিবহন শ্রমিক ধারালো অস্ত্র ও লাঠিসোঁটা নিয়ে শিক্ষার্থীদের উপর হামলা চালান। রাত দুইটার দিকে অতিরিক্ত পুলিশ গিয়ে ঘটনা নিয়ন্ত্রণে আনে।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ বরিশাল-পটুয়াখালী মিনিবাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কাউসার হোসেন শিপনের নেতৃত্বে একদল পরিবহন শ্রমিক লাঠিসোঁটা নিয়ে ওই হামলা চালিয়েছেন।

বরিশাল-পটুয়াখালী ও বরিশাল-ভোলা সড়ক অবরোধ: ওই ঘটনার পর রাতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে সড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। সেখানে তারা আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন। ভোরের দিকে শিক্ষার্থীরা ফিরে যান। বুধবার সকালে আবার ফিরে এসে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে অবস্থান নিয়ে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষাভ শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। ফলে ওই সড়কে সকাল থেকেই যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে সড়কের দুই প্রান্তে যানবাহনের দীর্ঘ লাইন পড়ে যায়। রূপাতলী থেকে নথুল্লাবাদ এবং অপরপ্রান্ত দপদপিয়া জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার জুড়ে যানজটের সৃষ্টি হয়।

বাসে অগ্নিসংযোগ: সকাল ৮টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা অতিক্রমকালে ঢাকা-কুয়াকাটার রুটের যাত্রীবাহী কুয়াকাটা এক্সপ্রেস বাসে ইটপাটকেল নিক্ষেপসহ ভাঙচুর করেন শিক্ষার্থীরা। এরপর সকাল সোয়া ১১টার দিকে ওই বাসে পেট্রোল দিয়ে অগ্নিসংযোগ করা হয়। সড়কে দীর্ঘ যানজট থাকায় বাসটির আগুন নিয়ন্ত্রণে নিতে ফায়ার সার্ভিস সেখানে পৌঁছুতে পারেনি। বাসে আগুন জ্বলতে জ্বলতে এক সময় নিভে যায়। এছাড়াও কয়েকটি আলফা মাহেন্দ্রা টেম্পু ভাঙচুর করেন শিক্ষার্থীরা।

বাস মালিক সমিতির বক্তব্য: বরিশাল-পটুয়াখালী মিনি বাস মালিক সমিতির সভাপতি কাউছার হোসেন শিপন বলেন, এ অঞ্চলে চলাচলরত বিআরটিসি কর্তৃপক্ষের সাথে রুপাতলী বাস মালিক সমিতির সম্পর্ক ভালো নয়। যা সবার কাছে স্পষ্ট।

ববি শিক্ষার্থীদের সাথে ঝামেলা হয়েছে বিআরটিসি স্টাফদের সাথে। এ ঘটনায় তাদের কোনো রকম সম্পৃক্ততার সুযোগ নেই। এরপরেও শিক্ষার্থীরা তাদের বাসে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। একই অভিযোগ করেছেন বরিশার জেলা বাস-মিনিবাস, পরিবহন ও মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাহী সম্পাদক মো. মানিক।

এদিকে খবর পেয়ে সকাল থেকেই মহানগর পুলিশ এবং র‌্যাব সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে দীর্ঘ চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। এ বিষয়ে বন্দর থানার ওসি আনোয়ার হোসেন বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে বাড়তি পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

কোতয়ালী মডেল থানার ওসি (তদন্ত) আসাদুজ্জামান বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের উপর হামলার ঘটনার জের ধরে সড়ক অবরোধ এবং একটি গাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। তাদের আন্দোলনের ফলে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়েছিল। পরে অবরোধ তুলে দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনার সাথে জড়িতদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

ধর্মঘট প্রত্যাহার: বিকাল চারটার দিকে ববি ভিসি অধ্যাপক ড. মো. ছাদেকুল আরেফিন, জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসনের যৌথ সভা হয়। সভায় পর্যায়ক্রমে শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ প্রত্যাহার করেছেন।

এ বিষয়ে ববি শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি আল-আমিন জানান, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের উপর হামলার ঘটনায় মামলা করা ও ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আসামিদের গ্রেপ্তারের দাবি মেনে নেবে বলে জানিয়েছেন। তাই সড়ক অবরোধ প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

ঢাকাটাইমস/১৭ফেব্রুয়ারি/ইএস

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :