করোনাযুদ্ধে নারায়ণগঞ্জের টিম খোরশেদের এক বছর

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ০৭ মার্চ ২০২১, ১৭:৫২
অ- অ+

দেশের প্রথম করোনা শনাক্ত হয়েছিল শিল্প ও বাণিজ্যের নগরী নারায়ণগঞ্জে। করোনার শুরু থেকেই নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ নেমেছিলেন জীবনের মায়া ত্যাগ করে। এই কাজে প্রথমে তিনি একা থাকলেও অনেকেই তার পাশে এসে দাঁড়ানোর পরে গঠন করা হয়েছে টিম খোরশেদ।

করোনায় নারায়ণগঞ্জে যখন মৃত্যুর মিছিল শুরু হলো তখন সাধারণ মানুষের আপনজনে পরিণত হয়েছিল টিম খোরশেদ। সেই টিম খোরশেদের কার্যক্রমের এক বছর পূর্ণ হতে যাচ্ছে আগামীকাল ৯ মার্চ।

২০২০ সালের ৮ মার্চ প্রথম নারায়ণগঞ্জে করোনা রোগী শনাক্ত হয়। পরদিন ৯ মার্চ থেকে করোনা যুদ্ধে সম্মুখসারির যোদ্ধা হিসেবে মাঠে নেমেছিলেন কাউন্সিলর খোরশেদ। পরবর্তীতে তার সহযোদ্ধা হিসেবে সম্পৃক্ত হন একঝাঁক অকুতোভয় যোদ্ধা। যারা গত এক বছরে করোনায় আক্রান্ত ১৫৩ জনকে দাফন-সৎকার করেছেন। এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জ ছাড়াও রাজধানী ঢাকা, গাজীপুর, মুন্সীগঞ্জ, কুমিল্লা, কিশোরগঞ্জ ও সূদূর কক্সবাজারেও দাফন কাজে অংশ নিয়েছে টিম খোরশেদ।

করোনার শুরুতে মৃতদের লাশ দাফন কিংবা সৎকারতো দূরের কথা আপনজন লাশ স্পর্শও করতো না। তখন সেই মৃতদের আপনজন হিসেবে আবির্ভূত হতো টিম খোরশেদ। করোনার শুরুতে জনসচেতনতামূলক ২০ হাজার সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণের পাশাপাশি যখন দেশজুড়ে হ্যান্ড স্যানিটাইজারের সঙ্কট তখন নিজেদের তৈরি ৫০ এমএল এর ৬০ হাজার বোতল হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিনামূল্যে বিতরণ করে টিম খোরশেদ। পাশাপাশি লিকুইড সাবান তৈরি ও বিতরণ করা হয়। বিভিন্ন স্থানে হ্যান্ড ওয়াশের বেসিন স্থাপন করা হয়।

করোনাকালীন লকডাউনে ঘরে ঘরে খাদ্য বিতরণ, সরকারি ও নিজস্ব উদ্যেগে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ, বিনামূল্যে সবজি বিতরণ, ভর্তুকি মূল্যে ডিম ও খাদ্যসামগ্রী বিক্রির কার্যক্রম ছিল উল্লেখযোগ্য। পাশাপাশি টিম খোরশেদ চিকিৎসা সেবাতেও রেখেছেন নানা অবদান। এর মধ্যে টেলিমেডিসিন সেবা, বিনামূল্যে ১৯২ জনকে অক্সিজেন সাপোর্ট, ৮৯ জনকে মডেল গ্রুপের সহায়তায় ফ্রি অ্যাম্বুলেন্স সাপোর্ট, ১০৪ জন করোনা আক্রান্ত ব্যক্তিকে বিনামূল্যে প্লাজমা ডোনেশনসহ নানা কার্যক্রম ছিলো দেশজুড়ে আলোচিত।

‘টাইম টু গিভ’ ও ‘নুর সুফিয়া ফাউন্ডেশন’-এর সহায়তায় করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৩৭ জনকে শিক্ষা সহায়তা প্রদান, করোনায় কর্মহীন হয়ে পড়া ২০ পরিবারকে ‘টাইম টু গিভ’ ও ‘প্রিসিলা ফাউন্ডেশন’, ‘কুইক রেসপন্স ১২’, ‘হেল্প দ্যা ওয়ান’স ইন নিড’ ও ‘ইপিলিয়ন ফাউন্ডেশন’-এর সহায়তায় সেলাই মেশিন দেয়া ও ১০ যুবককে ফুড রাইডিংয়ের জন্য বাইসাইকেল দেয়া হয়।

মানুষের সেবায় নিয়োজিত থাকতে গিয়ে টিম খোরশেদের প্রধান কাউন্সিলর খোরশেদ, তার স্ত্রী এবং টিমের কয়েকজন সদস্য করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তবুও টিম খোরশেদের করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ থেমে যায়নি বরং সুস্থ হয়ে নিজেরাই প্লাজমা দিয়েছেন এবং পুরোদমে আবারো কাজ করেছেন। খোরশেদ নিজেও তিনবার প্লাজমা দিয়েছেন।

টিম খোরশেদের দাফন টিমে খোরশেদ ছাড়াও ছিলেন হাফেজ শিব্বির, আশরাফুজ্জামান হিরাশিকো, হাফেজ রিয়াদুর রহমান, আনোয়ার হোসেন, সুমন দেওয়ান, মো. জুনায়েদ, আক্তার শাহ, আয়ান আহমেদ রাফি, আল-আমিন খান, রফিক হাওলাদার, মাসুদ আহম্মেদ, আফতাব, মেহেদী রাজু, লিটন মিয়া, শফিউল্লাহ রনি, নাঈম মোল্লা, সেলিম মোল্লা, শহীদ ও রানা মুন্সী, ত্রাণ টিমে জয়নাল আবেদীন, আনোয়ার মাহমুদ বকুল, নাজমুল কবীর নাহিদ, আওলাদ হোসেন,রিটন দে, শওকত খন্দকার, রানা মুজিব, মাসুদ রানা, নারী টিমে তার স্ত্রী আফরোজা খন্দকার লুনা, মেম্বার রোজিনা আক্তার, উম্মে সালমা জান্নাত, শিল্পী আক্তার, রাণী আক্তার, দিলারা মাসুদ, রহিমা শরীফ, প্লাজমা টিমে খন্দকার নাঈমুল আলম, আরাফাত খান নয়ন, ইসতিয়াক সাইফি, শাহেদ আহমেদ, রিজন আহমেদ, অক্সিজেন টিমে এসএম কামরুজ্জামান, টেলি মেডিসিন টিমে ডা. ফরহাদ জেনিথ, ডা. ফায়জানা ইয়াসমিন স্নিগ্ধা, ডা. আরিফুর রহমান, ডা. খাদিজাসহ ১০ জন চিকিৎসক।

পুরো টিমের সচিবের দায়িত্ব পালন করেছেন কাউন্সিলরের সচিব আলী সাবাব টিপু। বিভিন্ন টিমে সর্বমোট ৬০ জন স্বেচ্ছাসেবক দিন-রাত কাজ করেছেন। বর্তমানেও টিম খোরশেদ বিনামূল্যে দাফন-সৎকার, অক্সিজেন সাপোর্ট, প্লাজমা সাপোর্ট, অ্যাম্বুলেন্স সাপোর্ট, ভ্যাকসিন রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম চলমান।

টিম লিডার কাউন্সিলর খোরশেদ জানান, এ লড়াইটা মানবিকতাকে টিকিয়ে রাখতে। প্রথমদিকে এমন একটা সময় ছিল যখন বাবা মারা গেলে সন্তান ভয়ে সে ঘরেও যেতো না। লাশ আমরা আনতে গেলে ঘরের চাদরসহ আমাদের দিয়ে দিতো। তখন এই মানবিক সংকট কাটাতে আমরা মাঠে নামি। ধীরে ধীরে ভয় কাটে মানুষ এগিয়ে আসে। এখন সেই আগের অবস্থা নেই।

তিনি বলেন, আমাদের লড়াইতে সবাইকে বাঁচাতে না পারলেও যে কয়জন প্রাণে বেঁচেছেন তাতেই আমাদের পাওয়া। আমরা চাই মানবিকতা টিকে থাকুক, সতকর্তায় করোনা মোকাবেলা হোক। যতদিন প্রয়োজন আমরা ততদিন মাঠে থাকবো ইনশাল্লাহ। তাদেরকে খাদ্য সামগ্রী, নিরাপত্তা সরঞ্জাম, অ্যাম্বুলেন্স, চিকিৎসা সামগ্রী দিয়ে সহযোগিতা করায় অনুদান দাতাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন কাউন্সিলর খোরশেদ।

(ঢাকাটাইমস/৭মার্চ/কেএম)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
ফিরে দেখা ৪ জুলাই: সারাদেশে ছাত্র ধর্মঘটের ডাক, উত্তাল সব বিশ্ববিদ্যালয়
এবার স্থানীয় সরকার নির্বাচন থেকেও ইভিএম বাদ
আগামী কয়েক দিন ভারি বৃষ্টির সম্ভাবনা, পাউবো কর্মচারীদের কর্মস্থলে থাকার নির্দেশ
নির্বাচন ভবনে রোপণ করা গাছ থেকে সরানো হলো আউয়াল কমিশনের নামফলক
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা