২০ বছর পর ‘আপন ঠিকানা’ শাহনাজকে খুঁজে দিল পরিবার

ফরমান শেখ, ভূঞাপুর (টাঙ্গাইল)
  প্রকাশিত : ২৪ জুন ২০২১, ২০:৪৭
অ- অ+

মা-বাবার যখন বিচ্ছেদ ঘটে, তখন শাহনাজের বয়স পাঁচ বছর। সৎ মা রাখতে না চাইলে শাহনাজের বাবা, চাচা-চাচিরা তাকে লালন-পালন করার জন্য একটি পরিবারের কাছে রাখেন। সেই পরিবারের সঙ্গে একদিন ঢাকায় যান শাহনাজ। সেখানে গিয়ে তিনি হারিয়ে যান। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তাকে পায়নি তার পরিবার। পরে তার বাবা আবু সাঈদ ঢাকার তেজগাঁও থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে রাখেন।

এখন শাহনাজের বয়স ২৫। তিনি টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার জিগাতলা গ্রামের আবু সাঈদের মেয়ে। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে আর জে কিবরিয়ার ‘আপন ঠিকানা’ অনুষ্ঠানের ভিডিও ভাইরাল হলে শাহনাজের পরিবারের নজরে আসে বিষয়টি। পরে যোগাযোগ করে গত ১৯ জুন শাহনাজকে তার পরিবার ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আসে। দীর্ঘ ২০ বছর পর হারিয়ে যাওয়া সন্তানকে ফিরে পেয়ে খুব খুশি তার পরিবার।

এদিকে ছোট শাহনাজও এখন অনেক বড় হয়েছেন। করেছেন বিয়ে। করছেন স্বামীর সংসার। তিনি এখন এক পুত্র সন্তানের মা। পরিবারবিহীন জীবন থেকে চলে যাওয়া ২০টি বছরের কষ্ট এখন তিনি ভুলে গেছেন নিমেষে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, শাহনাজে তার দেড় বছরের সন্তান নিয়ে পরিবারের সঙ্গে বেশ আনন্দে সময় কাটাচ্ছেন। তার পরিবারও যে তাকে পেয়ে খুশি, তা সবার আদর-আপ্যায়নে বোঝা যায়। তার ফুটফুটে শিশু সন্তানকে আদর করছেন তার চাচা, ভাই ও ভাতিজারাসহ অনেকেই।

এদিকে, এত বছর পর বাড়িতে ফিরে আসায় তাকে দেখতে বাড়িতে ভিড় করছে গ্রামের মানুষ।

এ বিষয়ে শাহনাজের চাচাতো ভাই বলেন, আমরা যখন ছোট ছিলাম, তখন শাহনাজের সৎ মা তাকে নিয়ে যেতে চান। কিন্তু আমাদের পরিবারের কেউই রাজি ছিলাম না। পরে শাহনাজের বাবাকে রাজি করিয়ে একটি পরিবারের কাছে শাহনাজকে দেওয়া হয় লালন-পালন করার জন্য।

একদিন সেই পরিবারের সঙ্গে ঢাকায় বেড়াতে গিয়ে শাহনাজ হারিয়ে যায়। এরপর অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তাকে পাওয়া যায়নি। তখন ঢাকার তেজগাঁও থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন আমার চাচা আবু সাঈদ। তিনি বলেন, আমার মা শাহনাজের জন্য সব সময় কান্নাকাটি করতেন।

তিনি আরও বলেন, এখনো শাহনাজের ব্যবহৃত জামাকাপড়, জিনিসপত্র আমার মা যত্ন করে রেখে দিয়েছেন। এ জন্য কিছুদিন আগে আমি আমার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে শাহনাজের সন্ধান চেয়ে একটা পোস্ট করি। পরে সেই পোস্ট আমার বন্ধুবান্ধবসহ অনেকেই দেখেন।

রায়হান বলেন, কিছুদিন আগে জনপ্রিয় রেডিও উপস্থাপক আর জে কিবরিয়ার ‘আপন ঠিকানা’ নামের একটি অনুষ্ঠানে আমার বোনকে নিয়ে একটা প্রোগ্রাম করা হয়। সেই ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়।

পরে জিগাতলা গ্রামের এক সেনাবাহিনীর সদস্য জুয়েল বিদেশে বসে ভিডিওটি দেখে আমাকে খবর দেন। পরিচয় ও হারিয়ে যাওয়ার ঘটনা মিলে যাওয়ায় আমরা তাকে আনতে ঢাকা যাই। ১৯ জুন স্বামী-সন্তানসহ শাহনাজকে ফিরে পাই। তারপর তাদের বাড়িতে নিয়ে আসি।

পরিবার ফিরে পাওয়ার অনুভূতি জানিয়ে শাহনাজ বলেন, আমার মা-বাবার বিচ্ছেদের পর আমার বসয় যখন পাঁচ বছর, তখন টাঙ্গাইলের একটি পরিবারের কাছে আমাকে লালনপালন করার জন্য দেওয়া হয়। ওই পরিবার আমাকে ঢাকায় নিয়ে যায়।

তাদের বাসায় দুই বছর থাকার পর আমি একদিন হারিয়ে যাই। এরপর ঢাকার খিলগাঁও বাসাবোর কদমতলা এলাকার মাশুক আহমেদ আমাকে পেয়ে তার বাসায় নেন। সেখানেই আমি বড় হই। তারা আমাকে মেয়ের মতো করেই বড় করেছেন।

তিনি বলেন, তারা আমাকে নওগাঁ জেলার বাসিন্দা আব্দুর কাদেরের সঙ্গে বিয়ে দেন। আমার স্বামী বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার। টেক্সটাইলস কোম্পানিতে চাকরি করছেন। এদিকে আমার স্বামীও আমার পরিবারকে খুঁজে পাওয়ার বিষয়ে আন্তরিক ছিল। পরে ‘আপন ঠিকানা’ প্রোগ্রামের মাধ্যমে আমি আমার পরিবারকে খুঁজে পাই।

শাহনাজ বলেন, ২০ বছর পর পরিবারকে খুঁজে পাব, সেটা ভাবতে পারিনি। আল্লাহ আমাদের মিলিয়ে দিয়েছেন। আমার পরিবারকে খুঁজে পাওয়ার জন্য শুধু স্মৃতি ছাড়া আমার কাছে কিছু ছিল না। আমার স্বামীও সবকিছু জেনে শুনে আমাকে বিয়ে করেছে। আমার শ্বশুর-শাশুড়ি অনেক ভালো মনের মানুষ। তারা আমাকে নিজের মেয়ের মতোই আদর-যত্ন করেন।

শাহনাজের চাচা তোজাম্মেল হক বলেন, দীর্ঘ ২০ বছর পর শাহনাজ যেমন পরিবার পেয়ে খুশি, আমরাও তাকে পেয়ে অনেক খুশি।

(ঢাকাটাইমস/২৪জুন/এলএ)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
রাজনীতিতে অভিভাবক দল হিসেবে আমরা বারবার ধৈর্য ধরেছি: অধ্যক্ষ সেলিম ভুইয়া
এনবিআরের আরও ৬ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বরখাস্ত
প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতে শিক্ষা উপদেষ্টার আশ্বাস
তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তানের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে আরও একজন গ্রেপ্তার
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা