সড়ক অব্যবস্থাপনায় জড়িতদের ব্যঙ্গচিত্র দেখালেন শিক্ষার্থীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ০৫ ডিসেম্বর ২০২১, ১৩:১৪

নিরাপদ সড়কের দাবি ও সড়কে অব্যবস্থাপনার প্রতিবাদে এর সঙ্গে জড়িতদের প্রতি ব্যঙ্গচিত্র দেখিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। রবিবার দুপুর সোয়া ১২টা থেকে শিক্ষার্থীরা রামপুরা ব্রিজের হাতিরঝিল অংশের ফুটপাতে ব্যঙ্গচিত্র নিয়ে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন। এ সময় তাদের হাতে ছিল নানা ধরনের ব্যঙ্গচিত্র।

মানববন্ধনে রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন তারা।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের পক্ষে সোহাগী সামিয়া জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, ‘সড়কে দুর্ঘটনায় পুরো সিস্টেম জড়িত। আমরা ব্যঙ্গচিত্রের মাধ্যমে আজ প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’

গত কয়েক দিন ধরে শিক্ষার্থীরা রামপুরা ব্রিজে নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন করছেন। সবশেষ গতকাল শনিবার তারা সড়কের অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে লাল কার্ড দেখান। আর রবিবার সড়কের অব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িতদের প্রতি ব্যঙ্গচিত্র দেখানোর কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার কারণে গত ৭ নভেম্বর থেকে ঢাকাসহ সারা দেশে বাসের ভাড়া গড়ে ২৭ শতাংশ বাড়ানো হয়। শিক্ষার্থীদের জন্য গণপরিবহনে অর্ধেক ভাড়া নিশ্চিত করতে ১১ নভেম্বর বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষকে (বিআরটিএ) একটি স্মারকলিপি দেন নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের (নিসআ) সঙ্গে যুক্ত শিক্ষার্থীরা। সেদিন থেকেই অর্ধেক ভাড়ার দাবিতে সড়কে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন শুরু হয়।

আন্দোলন চলাকালে ২৪ নভেম্বর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ময়লার গাড়ির চাপায় নটর ডেম কলেজের শিক্ষার্থী নাঈম হাসান নিহত হলে অর্ধেক ভাড়ার সঙ্গে আন্দোলনে নিরাপদ সড়কের দাবি যুক্ত হয়। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে গত রাজধানী ঢাকা ও বন্দরনগরী চট্টগ্রামে বাসে অর্ধেক ভাড়া নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি।

শিক্ষার্থীদের ১১ দফা

এদিকে গত বুধবার (১ ডিসেম্বর) শিক্ষার্থীরা নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করতে ১১ দফা দাবি পেশ করে। সেই দাবিগুলো হলো-

১. সড়কে নির্মম কাঠামোগত হত্যার শিকার নাঈম ও মাঈনউদ্দিনের হত্যার বিচার করতে হবে। তাদের পরিবারকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। গুলিস্তান ও রামপুরা ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় পথচারী পারাপারের জন্য ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করতে হবে।

২. সারা দেশে সব গণপরিবহনে শিক্ষার্থীদের হাফ পাস সরকারি প্রজ্ঞাপন দিয়ে নিশ্চিত করতে হবে। হাফ পাসের জন্য কোনো সময় বা দিন নির্ধারণ করে দেওয়া যাবে না। বর্ধিত বাস ভাড়া প্রত্যাহার করতে হবে। সব রুটে বিআরটিসির বাসের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হবে।

৩. গণপরিবহনে ছাত্র-ছাত্রী এবং নারীদের অবাধ যাত্রা ও সৌজন্যমূলক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।

৪. ফিটনেস ও লাইসেন্সবিহীন গাড়ি এবং লাইসেন্স বিহীন চালককে নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। গাড়ি ও ড্রাইভিং লাইসেন্স নিয়ে বিআরটিএ’র দুর্নীতির বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।

৫. সব রাস্তায় ট্রাফিক লাইট, জেব্রা ক্রসিং নিশ্চিত করাসহ জনবহুল রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশের সংখ্যা বাড়াতে হবে। ট্রাফিক পুলিশের ঘুষ-দুর্নীতির বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।

৬. বাসগুলোর মধ্যে বেপরোয়া প্রতিযোগিতা বন্ধে এক রুটে এক বাস এবং দৈনিক আয় সব পরিবহন মালিকের মধ্যে তাদের অংশ অনুযায়ী সমানভাবে বণ্টন করার নিয়ম চালু করতে হবে।

৭. শ্রমিকদের নিয়োগপত্র-পরিচয়পত্র নিশ্চিত করতে হবে। চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করতে হবে। চুক্তিভিত্তিক বাস দেওয়ার বদলে টিকেট ও কাউন্টারের ভিত্তিতে গোটা পরিবহন ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে। শ্রমিকদের জন্য বিশ্রামাগার ও টয়লেটের ব্যবস্থা করতে হবে।

৮. গাড়ি চালকের কর্মঘণ্টা একনাগাড়ে ছয় ঘণ্টার বেশি হওয়া যাবে না। প্রতিটি বাসে দুইজন চালক ও দুইজন সহকারী রাখতে হবে। পর্যাপ্ত বাস টার্মিনাল নির্মাণ করতে হবে। পরিবহন শ্রমিকদের যথাযথ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।

৯. যাত্রী-পরিবহন শ্রমিক ও সরকারের প্রতিনিধিদের মতামত নিয়ে সড়ক পরিবহন আইন সংস্কার করতে হবে এবং বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে।

১০. ট্রাক, ময়লার গাড়িসহ অন্য ভারী যানবাহন চলাচলের জন্য রাত ১২টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত সময় নির্ধারিত করে দিতে হবে।

১১. মাদকাসক্ত নিরসনে গোটা সমাজে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। চালক-সহকারীদের জন্য নিয়মিত ডোপ টেস্টের ও কাউন্সিলিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে।

(ঢাকাটাইমস/০৫ডিসেম্বর/কেআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

শিক্ষা বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :