নুসরাত ফারিয়া কাশিমপুর কারগারে সাধারণ বন্দির সেলে

‘আসলে ভাগ্য মানুষকে কোথায় কখন নিয়ে যায়, তা কি আমরা কেউ বলতে পারি? পারি না। আমরা সবাই জানি, জন্ম-মৃত্যু-বিয়ে এসব মানুষের হাতে নেই। ভাগ্যে থাকলে আমাদের বিয়ে হবেই।’
২০২২ সালে প্রেমিক রনি রিয়াদ রশিদের সঙ্গে বিয়ে প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেছিলেন আলোচিত-সমালোচিত চিত্রনায়িকা নুসরাত ফারিয়া। দীর্ঘ সাত বছর গোপনে প্রেমের পর ২০২০ সালের মার্চে রনির সঙ্গে বাগদান হলেও শেষ পর্যন্ত ভাগ্য সহায় হয়নি নুসরাত ফারিয়ার। অদৃশ্য কারণে বিয়ে পর্যন্ত গড়ায়নি তাদের সম্পর্ক।
ভাগ্যের কাছে আবারও হারলেন ঢাকাই সিনেমার এই নায়িকা। আগের আপায়নমেন্ট অনুযায়ী চিকিৎসার জন্য রবিবার সকালে থাইল্যান্ড যাচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু বিমানে ওঠার বদলে তাকে উঠতে হলো পুলিশের গাড়িতে। শেষ গন্তব্য কাশিমপুর কারাগার। সাধারণ বন্দির সুবিধায় গণরুমে স্থান হলো কারা হেফাজতে।
এর আগে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে আটক হন নায়িকা। চেকপোস্টে যেতেই ইমিগ্রেশন পুলিশের জেরার মুখে পড়েন তিনি। সেখানে জিজ্ঞাসাবাদের পর দুপুরে তাকে হস্তান্তর করা হয় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের কাছে। এরপর মিন্টো রোডে আরেক দফা জিজ্ঞাসাবাদ শেষে রাজধানীর ভাটারা থানায় নায়িকার বিরুদ্ধে থাকা হত্যাচেষ্টা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয় তাকে। এরপর রাতভর ডিবি হেফাজতে রাখার পর সোমবার সকাল ৯টার দিকে সিএমএম আদালতে নেওয়া হয় নুসরাত ফারিয়াকে।
এদিন বেলা ১০টার পর তাকে আদালতের হাজির করে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা।
অন্যদিকে নুসরাত ফারিয়ার জামিন চেয়ে আবেদন করেন তার আইনজীবীরা। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সারাহ ফারজানা হক। একই সঙ্গে তার জামিন বিষয়ে শুনানির জন্য আগামী ২২ মে দিন ধার্য করেন।
এরপর দুপুরেই প্রিজনভ্যানে করে কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারে নেওয়া হয় ‘পর্দার শেখ হাসিনা’কে।
এদিন বিকালে কারা অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা ঢাকা টাইমসকে জানান, কারা অধিদপ্তরের নিয়ম অনুযায়ী সেখানেই থাকবেন নায়িকা। থাকবেন সাধারণ বন্দিদের সঙ্গে। সেখানে অন্য বন্দীদের যেসব সুযোগ-সুবিধা রয়েছে তাই পাবেন তিনি।
যে মামলায় গ্রেপ্তার নুসরাত ফারিয়া
পুলিশ ও আদালত সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪ সালের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালীন রাজধানীর ভাটারা থানায় একটি হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি ফারিয়া। অর্থের জোগানদাতা হিসেবে নায়িকার নাম উল্লেখ করা আছে মামলার এজাহারে। সেই মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও ছিল অভিনেত্রীর বিরুদ্ধে। একই মামলায় অপু বিশ্বাস, জায়েদ খান, জ্যোতিকা জ্যোতি, নিপুণ আক্তারসহ শোবিজের আরও ১৭ জন এজাহারনামীয় আসামি।
গ্রেপ্তার ইস্যুতে নানা প্রতিক্রিয়া
রবিবার বিমানবন্দরে নুসরাত ফারিয়াকে আটকের পরপরই এ নিয়ে বিভিন্ন ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখা যায় সমাজমাধ্যমে। অনেকেই তার আটকের সমালোচনা করেছেন। কেউ কেউ সামাজিক মাধ্যমে ‘শেখ মুজিব’ বায়োপিকে তার অভিনয়ের প্রসঙ্গ তুলে সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর স্ত্রী নুসরাত ইমরোজ তিশার নাম ওঠান, যিনি ওই বায়োপিকে শেখ হাসিনার মায়ের ভূমিকায় অভিনয় করেন।
অবশ্য সংস্কৃতি উপদেষ্টা তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পাতায় লিখেছেন, "... ফারিয়ার বিরুদ্ধে এই মামলা তো অনেক দিন ধরেই ছিল। সরকারের পক্ষ থেকে তদন্ত শেষ হওয়ার আগে গ্রেপ্তারের কোনো উদ্যোগ নেয়ার বিষয় আমার নজরে আসেনি।''
''কিন্তু এয়ারপোর্টে যাওয়ার পরেই এই ঘটনাটা ঘটে। আওয়ামী লীগের সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের বিদেশ গমনকে কেন্দ্র করে ক্ষোভের পর ওভার নারভাসনেস থেকেই হয়তোবা এইসব ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। কয়দিন আগে ব্যারিস্টার আন্দালিব পার্থের স্ত্রীর সঙ্গেও এরকম একটা ঘটনা ঘটেছে। এইসব ঘটনা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য না। আমি বিশ্বাস করি ফারিয়া আইনি প্রতিকার পাবে।’
এছাড়া সংস্কৃতি অঙ্গনের অনেকেই নুসরাত ফারিয়ার গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ করে তার মুক্তি দাবি করেছেন।
অভিনেত্রী আজমেরি হক বাধন লিখেছেন, "এই মেয়েটির কোনো দোষ নেই। সে মোটেই দায়ী নয়। যারা ফ্যাসিবাদী শাসন চালিয়ে সাধারণ মানুষের ওপর অত্যাচার করেছে তাদের সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই। বর্তমান পরিস্থিতি এবং ব্যবস্থা নিয়ে আমি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। আমরা এমন দেশে বাস করি না, যেখানে ন্যায়বিচার সাধারণভাবে প্রচলিত। তবে এবারের ঘটনাটি একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়।"
পরিচালক শিহাব শাহীন লিখেছেন, "অবিশ্বাস্য আর আজগুবি অভিযোগে নুসরাত ফারিয়ার গ্রেপ্তার হয়রানিমূলক!’
সরাসরি না লিখলেও নুসরাত ফারিয়া ইস্যুতে
কৌশলী পোস্ট দিয়েছেন চিত্রনায়িকা পরীমনি লিখেছেন, কথা হচ্ছে, কোনো কালেই কথা বলতে পারবা না মনু। ঘুমাও ঘুমাও। ঘুমই উত্তম। এছাড়া অপর এক পোস্টে মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী দেওয়া এক বক্তব্যে ক্ষোভও প্রকাশ করেছেন তিনি।
জাতীয় নাগরিক পার্টির দক্ষিণাঞ্চলীয় সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ তার ভেরিফায়েড পাতায় লিখেছেন: "… ৬২৬ জনকে নিরাপদে বের করে দিয়ে এখন নুসরাত ফারিয়াকে হত্যা মামলায় গ্রেফতার করে বোঝাতে চাচ্ছেন আপনারা খুব বিচার করছেন? এগুলো বিচার নয়, এগুলো হাসিনা স্টাইলে মনোযোগ ডাইভারশন।"
(ঢাকাটাইমস/১৯মে/এলএম/এমজেড)

মন্তব্য করুন