বইমেলা: পাঠকের চোখে জনপ্রিয় লেখক কারা, জানেন কি?

ওমর ফারুক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৪:০৫ | প্রকাশিত : ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০৭:৫৫

করোনা পরিস্থিতির কারণে নির্ধারিত সময়ের দুই সপ্তা পর এবার দুয়ার খুলেছে অমর একুশে বইমেলার। শুরুতে কিছুটা এলোমেলো থাকলেও ধীরে ধীরে প্রাণ ফিরে পেতে শুরু করছে বাঙালির প্রাণের মেলার। লেখক-পাঠক ও দর্শনার্থীদের ভিড় বাড়ছে। সঙ্গে বাড়ছে বই বিক্রিও। সুযোগ পেলেই ঢুঁ মারছেন বইমেলায়। কিনে নিচ্ছেন পছন্দের লেখক-কবির বই।

মেলায় আসা দর্শনার্থী ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অন্য বছরের মতো এবারও হুমায়ূন আহমেদ, জাফর ইকবালসহ বেশ কয়েকজন লেখকের বই বিক্রি বেশি হচ্ছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নতুন নতুন লেখক জায়গা করে নিচ্ছেন পাঠকদেরও মনে।নতুনদের লেখা বইমেলায় বেশ সাড়াও ফেলেছে।

প্রতি বছর ফেব্রুয়ারির প্রথম দিন থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা একাডেমিতে শুরু হয় বইমেলা।তবে করোনার কারণে নানা শঙ্কা মাথায় নিয়ে এবার শুরু হয়েছে ১৫ ফেব্রুয়ারি। এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে মেলা চলার কথা বলা হলেও ১৭ মার্চ পর্যন্ত চলতে পারে মেলা। উদ্বোধনের দিনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৭ মার্চ পর্যন্ত মেলা চালিয়ে নেওয়ার ইচ্ছা ব্যক্ত করেছেন। কারণ ওইদিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন।

বরাবরের মতো এবারও বাংলা একাডেমি ও ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে চলছে বইমেলা। ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন দুপুর ২টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মেলা চলে।তবে রাত সাড়ে আটটার পর আর প্রবেশ করা যাবে না।

এবারের মেলায় অংশ নিয়েছে ৫৩৪টি প্রতিষ্ঠান। মোট স্টল রয়েছে ৭৭৬টি। এরমধ্যে একাডেমি চত্বরে ১০২টি প্রতিষ্ঠানের ১৪২টি স্টল। আর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ৪৩২টি প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হয়েছে ৬৩৪টি স্টল। গত বছর স্বাধীনতা স্তম্ভের সামনে পর্যন্ত স্টল থাকলেও এবার উদ্যানের লেকের আশপাশে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া এবার লিটল ম্যাগাজিনের চত্বর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে উন্মুক্ত মঞ্চের পূর্ব দিকের খোলা জায়গায়।

তবে করোনার কারণে এবার নেই শিশু প্রহর। শিশু চত্বরও করা হয়নি আলাদা করে।

পাঠকের চোখে জনপ্রিয় লেখক কারা?

প্রতি বছর মেলাকে ঘিরে দেশের স্বনামধন্য লেখক-কবিদের নতুন নতুন বই প্রকাশিত হয়। এবছরও এসেছে নতুন অনেক বই। প্রতিদিন মোড়ক উন্মোচন হচ্ছে নতুন বইয়ের।পাশাপাশি পুরোনো বইও শোভা পাচ্ছে মেলার স্টলে স্টলে। ঢাকা টাইমস জানার চেষ্টা করেছে এবারের মেলায় কোন লেখকরা আছেন দর্শনার্থীদের পছন্দের শীর্ষে। কোন লেখকের কোন ধরনের বই বেশি কিনছেন বইপ্রেমীরা, একইসঙ্গে কোন বয়সী পাঠক বই কেনায় বেশি আগ্রহী এসবের উত্তর জানতে।

সরেজমিন দেখা গেছে, মেলায় আসা দর্শনার্থীরা অনেকে দলবেঁধে ঘুরছেন, ফাঁকে পছন্দের স্টলে ঢুঁ মারছেন। প্রিয় লেখকের বইটি সংগ্রহ করে অন্যত্র ছুঁটছেন। এদেরই একজন আশফাক হোসেন। ঢাকা টাইমসকে আশফাক বলেন, ‘সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে উপন্যাস আর ভ্রমণকাহিনি পড়তে। মেলায় প্রতি বছর বই কেনা হয়। সাদাত হোসাইনের লেখা বই আমার সবচেয়ে প্রিয়।’

আশফাকের যখন পছন্দের শীর্ষে তরুণ লেখক তখন মধ্যবয়সী ডেমরার আবদুল মালেকের পছন্দ সৈয়দ মুজতবা আলীকে। তিনি বলেন, ‘পছন্দের লেখক সৈয়দ মুজতবা আলী। আর ভালোলাগার বই কবিতা আর রম্যরচনা।’

তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রাইনার ভালো লাগে প্রয়াত হুমায়ূন আহমদের বই। তার লেখা পড়ে খুঁজে পান ভিন্নরকম অনুভূতি। ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘হুমায়ূন আহমদের বইয়ের পাশাপাশি নতুনদের বইও পড়ি। কিন্তু হুমায়ূন আহমেদই আমার কাছে সেরা।’

তবে যাদের সঙ্গে কথা হয়েছে তাদের অনেকের পছন্দের তালিকায় অধ্যাপক মুহাম্মদ জাফর ইকবাল, ইমদাদুল হক মিলনের নাম উঠে এসেছে। যদিও তাদের লেখা বই খুব একটা পড়া হয়নি বলে দাবি এসব দর্শনার্থীর।

মেলায় ঘুরতে আসা ইডেন কলেজের চার শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা হয় সোহরাওয়ার্দী উদ্যান চত্বরে।পছন্দের লেখক এবং বইয়ের কথা জানতে চাইলে অনেকটা সমস্বরে বলে ওঠেন, বেশি বই পড়া হয় সমরেশ মজুমদার, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের। তবে জাফর ইকবালও তাদের পছন্দের লেখক। আর ধানমন্ডি থেকে আসা ছোট্ট মুনতাহার ভাবনাটা সবার থেকে আলাদা। পছন্দের বইয়ের কথা জিজ্ঞেস করতেই তার উত্তর, কমিকস, ছড়ার বই খুবই প্রিয়।

এর বাইরেও মেলায় আসা দর্শনার্থীদের সঙ্গে আলাপে রবিন জামান খান, মৌরি মরিয়মের নামও বলেছেন অনেকে। সমসাময়িক লেখক হিসেবে তাদের বই পাঠকদের চাহিদার মধ্যে রয়েছে বলে জানা গেছে। কী বলছেন প্রকাশকরা

দর্শনার্থীদের মতো প্রকাশকদের মুখেও জনপ্রিয় লেখক ও তাদের বই নিয়ে ভিন্নভিন্ন নাম উঠে এসেছে। তবে হুমায়ূন আহমেদ, অধ্যাপক জাফর ইকবাল, কথা-সাহিত্যিক ও সাংবাদিক আনিসুল হকের বই বেশি চাহিদা বলে জানিয়েছেন। অন্যপ্রকাশের কর্ণধার মাজহারুল ইসলাম ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘অন্য সময়ের মতো এবারও হুমায়ূন আহমেদের বই চাহিদার শীর্ষে। পাঠককরা আগ্রহ নিয়ে তার বই কিনছেন। অনেকে তার একাধিক বইও সংগ্রহ করছেন।’

অনন্যা প্রকাশনীর স্টলে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা জানান, হুমায়ূন আহমেদের পাশাপাশি মুহাম্মদ জাফর ইকবাল, আনিসুল হকের বইয়ের চাহিদা বেশি।

আর অন্যধারা প্রকাশনীর দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা জানান, সাদাত হোসেইনের নতুন বই ‘ইতি স্মৃতিগন্ধা’ বেশি চাহিদা। এই বইটি লেখকের আগের বই ‘স্মৃতিগন্ধ্যার’ সিক্যুয়েল।

(ঢাকাটাইমস/২০ফেব্রুয়ারি/বিইউ/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :