২৫০ টাকায় বিখ্যাত ‘মামা হালিম’

পাঁচ দশক ধরে রাজধানীবাসীর কাছে হালিমের জন্য বেশ পরিচিত একটি নাম ‘মামা হালিম’। ১৯৭২ সালে কলাবাগান খেলার মাঠের বিপরীত পাশে এ হালিমের দোকান চালু করেন দীন মোহাম্মদ। রাজধানী ছাড়িয়ে মামা হালিমের নাম এখন ঢাকার বাইরেও। দূর দূরান্ত থেকে মানুষ আসেন মুখরোচক এই হালিমের স্বাদ নিতে। বিশেষ করে রমজানে এর চাহিদা বেড়ে যায় বহুগুণে।
স্বাধীনতার আগে দীন মোহাম্মদ কাজ করতেন একটি খাবারের দোকানে। সেখানে এক বিহারী ওস্তাদের কাছ থেকে হালিম রান্নার কৌশল শিখেন তিনি। এরপর নিজেই হালিম বিক্রি শুরু করেন। হালিমটি বেশ মুখরোচক হওয়ার তার দোকানের পরিচিতি ছড়াতে থাকে। ক্রেতাদের কাছে দীন মোহাম্মদ পরিচিত হন ‘মামা’ নামে, ফলাফল স্বরূপ দোকানের নামটিও হয়ে গেছে ’মামা হালিম’।
সুস্বাদু এই হালিমটির কাটতি রয়েছে সারাবছরই। তবে রমজান এলে এর চাহিদাটা বেড়ে যায় কয়েকগুন। এমনটাই বললেন দোকানের দায়িত্বে থাকা মোহম্মদ খোকন।তিনি বলেন, প্রথম দশ রোজায় ক্রেতাদের চাপ সবচেয়ে বেশি থাকে। দম ফেলার ফুরসত থাকে না।
সারাদিন রোজা শেষে এক বাটি পুষ্টিকর হালিম যেন ইফতারিতে পূর্ণতা আনে। তাই দূর দূরান্ত থেকে জ্যাম পার করে হলেও ত্রেতারা চলে আসেন হালিম কিনতে। মিরপুর ১২ নম্বরে থাকেন বেসরকারি চাকরিজীবী সজিবুল হাসান। কথা হয় ঢাকাটাইমসের সঙ্গে। তিনি বলেন, এলাকায় ভালো হালিম থাকা সত্বেও মামার হালিমের জন্য কলাবাগানেই চলে আসি। হালিমের মানটা এখনো ধরে রেখেছেন তিনি।
সজিবুল ইসলামের মতো একই কথা বললেন অন্যান্য ক্রেতারাও। সিটি কলেজের শিক্ষার্থী রেদওয়ান আহমেদ বলেন, মামা হালিমের সবচেয়ে ভালো বিষয় হলো এর স্বাদ এখনো বজায় রয়েছে। সময়ের ব্যবধানে দাম কিছুটা বাড়লেও স্বাদ ও মান মোটামুটি একই।
অন্য সব হালিমে আদা কুচি, বেরেস্তা, মশলা, মরিচ কুচি এসব ব্যবহার করা হলেও মামার হালিমে বিশেষ এক ধরনের তেতুঁলের টক ব্যবহার করা হয়। যার ফলে এর স্বাদ বেড়ে যায় কয়েকগুন, এমনটাই মতামত ব্যাংক কর্মচারী ফিরোজ আহমেদের।
৫-৬ রকমের ডাল, ঘি, সয়াবিন তেল, ডালডা, সর্ষের তেল, পুদিনা, ধনে পাতা, পেঁয়াজ-রসুন-আদা সহ প্রায় শ খানেক উপাদান দ্বারা তৈরি হয় মামা হালিম। প্রতিদিন বড় আকারের দুই ডেকচি হালিম রান্না হয়।মাটির পাত্র করে বিক্রি করা হয় হালিমটি।মামার হালিমে তিন ধরনের হালিম বিক্রি হয়ে থাকে। গরু, মুরগি এবং খাসির। গরুর হালিমের সবচেয়ে ছোট পাত্রের দাম ২৫০ টাকা, খাসির ৩০০, আর মুরগির ২৫০ টাকা। বড় এক পাত্র গরুর হালিমের দাম ২ হাজার টাকা, খাসির ২ হজার ২০০ টাকা এবং মুরগির ২০০০ টাকা।
দোকানে আগের চাইতে সময় দেয়াটা কমিয়ে দিয়েছেন দ্বীন মোহাম্মদ। তবে হালিম রান্নার কাজটা নিজ হাতেই করেন এখনো।