২৫০ টাকায় বিখ্যাত ‘মামা হালিম’

ওমর ফারুক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০৮ এপ্রিল ২০২২, ১৮:০১ | প্রকাশিত : ০৮ এপ্রিল ২০২২, ১৭:৩৯

পাঁচ দশক ধরে রাজধানীবাসীর কাছে হালিমের জন্য বেশ পরিচিত একটি নাম ‘মামা হালিম’। ১৯৭২ সালে কলাবাগান খেলার মাঠের বিপরীত পাশে এ হালিমের দোকান চালু করেন দীন মোহাম্মদ। রাজধানী ছাড়িয়ে মামা হালিমের নাম এখন ঢাকার বাইরেও। দূর দূরান্ত থেকে মানুষ আসেন মুখরোচক এই হালিমের স্বাদ নিতে। বিশেষ করে রমজানে এর চাহিদা বেড়ে যায় বহুগুণে।

স্বাধীনতার আগে দীন মোহাম্মদ কাজ করতেন একটি খাবারের দোকানে। সেখানে এক বিহারী ওস্তাদের কাছ থেকে হালিম রান্নার কৌশল শিখেন তিনি। এরপর নিজেই হালিম বিক্রি শুরু করেন। হালিমটি বেশ মুখরোচক হওয়ার তার দোকানের পরিচিতি ছড়াতে থাকে। ক্রেতাদের কাছে দীন মোহাম্মদ পরিচিত হন ‘মামা’ নামে, ফলাফল স্বরূপ দোকানের নামটিও হয়ে গেছে ’মামা হালিম’।

সুস্বাদু এই হালিমটির কাটতি রয়েছে সারাবছরই। তবে রমজান এলে এর চাহিদাটা বেড়ে যায় কয়েকগুন। এমনটাই বললেন দোকানের দায়িত্বে থাকা মোহম্মদ খোকন।তিনি বলেন, প্রথম দশ রোজায় ক্রেতাদের চাপ সবচেয়ে বেশি থাকে। দম ফেলার ফুরসত থাকে না।

সারাদিন রোজা শেষে এক বাটি পুষ্টিকর হালিম যেন ইফতারিতে পূর্ণতা আনে। তাই দূর দূরান্ত থেকে জ্যাম পার করে হলেও ত্রেতারা চলে আসেন হালিম কিনতে। মিরপুর ১২ নম্বরে থাকেন বেসরকারি চাকরিজীবী সজিবুল হাসান। কথা হয় ঢাকাটাইমসের সঙ্গে। তিনি বলেন, এলাকায় ভালো হালিম থাকা সত্বেও মামার হালিমের জন্য কলাবাগানেই চলে আসি। হালিমের মানটা এখনো ধরে রেখেছেন তিনি।

সজিবুল ইসলামের মতো একই কথা বললেন অন্যান্য ক্রেতারাও। সিটি কলেজের শিক্ষার্থী রেদওয়ান আহমেদ বলেন, মামা হালিমের সবচেয়ে ভালো বিষয় হলো এর স্বাদ এখনো বজায় রয়েছে। সময়ের ব্যবধানে দাম কিছুটা বাড়লেও স্বাদ ও মান মোটামুটি একই।

অন্য সব হালিমে আদা কুচি, বেরেস্তা, মশলা, মরিচ কুচি এসব ব্যবহার করা হলেও মামার হালিমে বিশেষ এক ধরনের তেতুঁলের টক ব্যবহার করা হয়। যার ফলে এর স্বাদ বেড়ে যায় কয়েকগুন, এমনটাই মতামত ব্যাংক কর্মচারী ফিরোজ আহমেদের।

৫-৬ রকমের ডাল, ঘি, সয়াবিন তেল, ডালডা, সর্ষের তেল, পুদিনা, ধনে পাতা, পেঁয়াজ-রসুন-আদা সহ প্রায় শ খানেক উপাদান দ্বারা তৈরি হয় মামা হালিম। প্রতিদিন বড় আকারের দুই ডেকচি হালিম রান্না হয়।মাটির পাত্র করে বিক্রি করা হয় হালিমটি।মামার হালিমে তিন ধরনের হালিম বিক্রি হয়ে থাকে। গরু, মুরগি এবং খাসির। গরুর হালিমের সবচেয়ে ছোট পাত্রের দাম ২৫০ টাকা, খাসির ৩০০, আর মুরগির ২৫০ টাকা। বড় এক পাত্র গরুর হালিমের দাম ২ হাজার টাকা, খাসির ২ হজার ২০০ টাকা এবং মুরগির ২০০০ টাকা।

দোকানে আগের চাইতে সময় দেয়াটা কমিয়ে দিয়েছেন দ্বীন মোহাম্মদ। তবে হালিম রান্নার কাজটা নিজ হাতেই করেন এখনো।

হালিমের উৎপত্তি

হালিম নামের উৎপত্তি আরবি ‘হারিস’ থেকে। এর অর্থ হচ্ছে পিষে ফেলা।

তুরস্ক, ইরান, মধ্য এশিয়া, আরব, আর্মেনিয়াসহ বিভিন্ন জায়গায় এই খাবারের তুতো ভাইবোনদের দেখা মেলে। যার মূল উপাদান, মাংস, ডাল, গম বা বার্লি আর মসলা। এই মসলা অঞ্চল ভেদে হালিমের স্বাদে এনেছে ভিন্নতা।

বাংলাদেশে যেমন ডাল, চাল, গম ও অন্য উপকরণের ঘন ঝোলের মধ্যে মাংসের টুকরো পাওয়া যায়, তেমনি আবার অনেক জায়গার হালিমে আস্ত মাংসের টুকরা খুঁজেই পাওয়া যাবে না। সেখানে মাংস পিষে বাকি উপাদানের সঙ্গে মিশিয়ে ঘন তরল একটা খাবার তৈরি করা হয়, যেটা স্যুপের কাছাকাছি কিছু।

প্রথম লিখিত আকারে হালিম, বলা ভালো হারিসের যে রন্ধনপ্রণালীর সন্ধান পাওয়া যায়, সেটা দশম শতাব্দীর। আরব লিপিকার আবু মোহাম্মদ আল-মুজাফফর ইবনে সায়রারের ‘কিতাব আল-তাবিখ’-এ হারিসের কথা জানা যায়।

আরব সাম্রাজ্যের বিস্তারের হাত ধরেই এই খাদ্য দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়ে, আর যেতে যেতে রূপ বদলায়।

খাদ্য সংস্কৃতির সুলুক সন্ধান যারা করেন, তাদের অনেকের মতে, হায়দ্রাবাদের নিজামের সেনাবাহিনীতে থাকা আরবীয় সৈনিকদের মাধ্যমে খাবারটি ভারতীয় উপমহাদেশে জনপ্রিয়তা পায়। অনেকে আবার মনে করেন, মুঘলদের হেঁশেলেও এই পদ রান্না হত। তাদের মাধ্যমেই এটা ভারতবর্ষের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে।

তুরস্ক, ইরান, মধ্য এশিয়ায় প্রচলিত ‘কেসকেক’; আর্মেনিয়ার হারিসা, পাকিস্তানের খিচড়া আর বাংলাদেশ ও ভারতের হালিম একই পরিবারের সদস্য।

আগে এই হালিম রান্না হত ঢিমে আঁচে, বড় পাত্র এবং চুলায়। সময় লাগত ৭ থেকে ১২ ঘণ্টা। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে রান্নার কৌশলে নানা পরিবর্তন এসেছে। স্থানীয় মসলা যোগ হওয়ায় স্বাদে এসেছে বৈচিত্র্য।

মাংস পিষে অন্য উপাদানের সাথে মিশিয়ে ফেলার চল বাংলাদেশের হালিমে খুব একটা দেখা যায় না। এখানে ঘন হালিমের মাঝে পর্যাপ্ত মাংসের টুকরো না মিললে ভোজনরসিক ধরে নেন, বিক্রেতা ঠকিয়েছে!

(ঢাকাটাইমস/৭এপ্রিল/ওএফ/ইএস)

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজধানী বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :