এক বনসাই গাছের দাম ১৬ লাখ টাকা!

শেখ সাইফ, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ২৩ জুন ২০২২, ০৯:২৭| আপডেট : ২৩ জুন ২০২২, ১৪:৫৮
অ- অ+

গাছ মানুষ ও প্রকৃতির পরম বন্ধু, অক্সিজেনের একমাত্র উৎস, যা ছাড়া বেঁচে থাকাটাই কল্পনাতীত। কিন্তু এই অমূল্য সম্পদের উৎসের দাম যদি হয় আকাশচুম্বি! হ্যাঁ বৃক্ষমেলায় একটি বনসাই গাছের এরকম আকাশ ছোঁয়া দামই হাঁকা হয়েছে। ১৬ লাখ টাকা দাম চাওয়া হয়েছে গাছটির, যার বয়স ৩৫ বছর।

কথায় আছে শখের তোলা আশি টাকা। কিন্তু শখের মূল্য লাখ টাকা হলেও এখনো এই দাম দিয়ে কেউ কেনেনি গাছটি। কংক্রিটের এই নাগরিক জীবনে সবুজের ছোঁয়া পেতে বারান্দায় টবে বা ছাদবাগান করার জন্য হয়ত কেউ কিনে নিয়ে যাবেন।

রাজধানীর আগারগাঁওয়ে শুরু হয়েছে মাসব্যাপী বৃক্ষমেলা। বৃক্ষমেলাকে ঘিরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের পাশে বিশাল মাঠে তৈরি হয়েছে ঘন সবুজের সমারহ। মেলায় স্থান পাওয়া নানা প্রজাতির গাছ, থোকায় থোকায় ধরে থাকা চেনা-অচেনা ফল, প্রস্ফুটিত ফুলের সৌন্দর্য্যে চোখ জুড়িয়ে যায়। বনজ, ফলদ, ওষুধি গাছ কিংবা ঘর সাজানোর অর্কিড, বনসাই-কী নেই মেলায়?

নানা বয়সী, শ্রেণি-পেশার ক্রেতাদের পদচারণায় বেশ জমে উঠেছে বৃক্ষমেলা। সকালের দিকে মেলায় ক্রেতা-দর্শনার্থীদের উপস্থিতি কম থাকলেও দুপুরের পর থেকেই ভিড় বাড়তে থাকে। এ সময় ক্রেতা-দর্শনার্থীরা মেলা থেকে যতটা না গাছ কিনছেন তার চেয়ে বেশি ঘুরে দেখছেন। কারো পছন্দ হলে গাছ কিনে খুশি মনে বাড়ি ফিরছেন।

সরজমিনে দেখা যায়, বৃক্ষমেলায় দর্শনার্থীরা ঘুরেঘুরে দেখছেন, ভিডিও করছেন, ছবি তুলছেন। সেলফি তো আছেই। বৃক্ষমেলার স্টলে গাছের পরিচর্যা করছেন কর্মীরা। মেলায় ঢুকতেই টুকরি হাতে দেখা যায় শিশুদের। তারা ক্রেতাদের কেনা গাছ গাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দিচ্ছে।

স্টলগুলোতে দেখা যায় অর্কিড, বনসাই, বীজ, সার, ছোট কৃষিযন্ত্রপাতি দিয়ে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। স্টলের সামনের জায়গায় থরে থরে সাজানো নানা প্রজাতির দেশি-বিদেশি গাছ। ফলের চারাগুলোতেও ধরেছে মৌসুমী ফল। বিশেষ করে গাছে ঝুলনো রসালো টসটেস আম চোখে পড়ার মতো।

মেলার প্রধান আকর্ষণ জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানের আনা ব্রাজিলিয়ান অ্যামাজন লিলি। যার আর একটি নাম ভিক্টোরিয়ান অ্যামাজন। এছাড়া রয়েছে পটুয়াখালী নার্সারির মরিয়ম খেজুরের গাছ, যার দাম দেড় লাখ টাকা। এই খেজুর গাছের চারার দাম দুই হাজার টাকা।

এগ ফ্রুট, যার দাম এক লাখ ২০ হাজার টাকা। কলম থেকে তৈরি চারা কিনলে ৬০ হাজার টাকা। বীজের চারা কিনলে দেড় হাজার টাকা। এছাড়াও আছে লাল রুবি রঙ্গন ফল। ৮০ হাজার টাকা। এর চারার দাম দুই হাজার থেকে ১২ হাজার টাকা পর্যন্ত।

এছাড়াও পাকা কাঁঠাল, জাম্বুরা, কমলা, বেদেনা, মাল্টার ঘ্রাণ বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে মেলায়। গোলাপ, গাঁদা, কনকচাঁপা, নয়নতারা, টুগর, জুঁই সম্ভাষণ জানাবে দর্শনার্থীদের। দমকা বাতাসের তালে পাতা, ফুল ও ফলের দুলে ওঠা যেকোনো বৃক্ষপ্রেমীর মনকেও দুলিয়ে যাবে। স্টলের ডিসপ্লেতে সাজানো ক্যাকটাস আর অর্কিডও নজর কেড়ে নেবে।

মেলা ঘুরে চেনা অচেনা নানা প্রজাতির ফুল ও ফলের গাছ দেখতে পাওয়া যাবে। এদের মধ্যে আছে-ডুরিয়ান, অলিভ, কাউ, পিচ, কিউই ফল, অ্যাভোকেডো, আলমন্ডা, ড্রাসিনা, চেরি ফল, পার্সিমন ফল, ড্রাগন, ট্যাং ফল, অ্যাপ্রিকট ফল, আদা জামির, স্ট্রবেরি পেয়ারা, বিলাতি গাব, রাম্বুটান, জয়ফল, সাদা নাশপতি, রাবাবা, মাল বেরি , লোকাট ফল, এবিউ ফল কালোজাম, সাতকরা, সফেদা, কদবেল, আতা, কুল, বড়ই, ডালিম, করমচা, বেল, জাম্বুরা, কাঁঠাল, লাল কাঁঠাল, চাম কাঠাল, ডুমুর, কাজু বাদাম, জবা ফুল, ম্যান্ডেভিলা ফুল, হাসনাহেনা, পলাশ, কনকচাঁপা, বাসন্তি, মালতী, নয়নতারা, আঁশফল, ঘৃতকুমারী, লটকনসহ নাম জানা-অজানা হাজারো ফল ও ফলের দেশি-বিদেশি গাছ।

স্টলে দায়িত্বপালনকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মেলায় দেশি-বিদেশি নানা প্রজাতির গাছের চারা পাওয়া যাচ্ছে। এগুলোর দাম প্রজাতি ভেদে ভিন্ন ভিন্ন। ২০ টাকা থেকে শুরু করে লাখ টাকার চারা এখানে স্থান পেয়েছে। এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দাম বনসাইয়ের। চায়না প্রজাতির কোনো কোনো বনসাইয়ের সর্বোচ্চ দাম ৫ থেকে ১৬ লাখ টাকা। এদের বয়স ৩০-৩৫ বছর। এরপর ফলদ উদ্ভিদের চারা, যেগুলোতে ফল ধরে আছে, সেগুলোর সর্বোচ্চ দাম ৫০ থেকে ৭০ হাজার টাকা, ফুলের চারা, ওষুধি গাছের চারা পাওয়া যাচ্ছে সর্বোচ্চ দেড় থেকে দুই হাজার টাকার মধ্যেই।

এছাড়া সবচেয়ে দামি আম মিয়াজাকি ও ব্রুনাই কিং আম গাছ, যার চারার দাম ৩০ হাজার টাকা। কলম চারা ৫০০ থেকে ১৫০০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।

নার্সারি মালিকরা জানান। একটি ড্রামে এই আম গাছ লাগালে বছরে ৩০ থেকে ৫০টি আম ধরবে।

মেলায় পাওয়া যাচ্ছে দেড় লাখ টাকা দামের আপেলসহ গাছ। গাছের চারার পাশাপাশি বৃক্ষমেলার বিভিন্ন স্টলে মিলছে জৈব সার। পাওয়া যাচ্ছে গাছের পরিচর্যার নানা সরঞ্জাম। এছাড়া পাখিদের জন্য পাখির বাসা। বাবুই পাখির বাসার আদলে তৈরি বাসা। যার দাম ২৫০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা। দৃষ্টিনন্দন হাতে তৈরি বাবুই পাখির বাসা নিয়ে এসেছে উদ্দীপন নার্সারি।

খান নার্সারির ম্যানেজার সোহেল শিকদার জানান, তাদের স্টলে সর্বনিম্ন ৩০ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৯০ হাজার টাকা দামের গাছের চারা আছে। তবে বেশি দামের চারা বিক্রি হয় কিছুটা কম।

মেলায় ছোট-বড়, নারী-পুরুষ, চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী, স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা সকলেই ঘুরতে এসেছেন।

নারায়ণগঞ্জ থেকে মেলায় গাছ কিনতে এসেছেন ব্যবসায়ী মোহাম্মদ ইউসুফ। তিনি বলেন, ‘বাগান করব বলে এখানে গাছ কিনতে এসেছি। এখানে এসে নানা প্রজাতির গাছ দেখতে পাচ্ছি। ভালো জাতের গাছ পেলে কিছু গাছ কিনে নিয়ে যাব।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী খায়রুল আমিন অভি বলেন, ‘গাছ আমাদের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়। এই মেলায় এলে আমরা নানা প্রজাতির গাছের সঙ্গে পরিচিত হতে পারি। তাই সময় পেলেই প্রতিবছরই বৃক্ষমেলায় আসি।’

বিসি নার্সারির দায়িত্বে থাকা মো. শাহিন বলেন, ‘বৃক্ষপ্রেমীরা বছরজুড়ে এই মেলার জন্য অপেক্ষা করে থাকে। এত বড় বৃক্ষমেলা আর কোথাও হয় না। বৃক্ষমেলা ঘুরে দেখতে অনেকেই দেশ বিদেশ থেকে আসেন। এবারের বিক্রি এখন পর্যন্ত ভালোই।’

মেলায় গাছের পাশাপাশি আরও পাওয়া যাচ্ছে মৃৎশিল্প ও বেতশিল্পের গৃহনন্দন টব ও সৌখিন গাছ রাখার পাত্র। বিভিন্ন আকৃতির গাছ। কোনোটি লাভ সিম্বলের। কোনোটি নৌকা, চেয়ার-টেবিল, গেইট আকৃতির।

মেলায় আছে কৃত্রিম পার্ক ও ঝর্ণা। পাশাপাশি ভেষজ ওষুধ, মধু ও খাবারের দোকান। আছে নামাজের জায়গাও। এক কথায় এখানে এসে সারা দিন কাটিয়ে গেলেও কোনো ক্লান্তি আসবে না। বরং ভালোলাগা থেকেই যাবে।

উল্লেখ্য, বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে মাসব্যাপী এই বৃক্ষমেলা চলবে আগামী ৪ জুলাই পর্যন্ত। মেলায় সরকারি ও ব্যক্তি পর্যায়ে মিলিয়ে ১১৭টি স্টল রয়েছে। প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের জন্য বৃক্ষমেলায় প্রবেশ একদম ফ্রি।

(ঢাকাটাইমস/২৩জুন/এসকেএস/এফএ)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
৫ অতিরিক্ত ডিআইজিসহ ১৬ পুলিশ কর্মকর্তাকে বদলি
ফরিদা পারভীনের সর্বোচ্চ চিকিৎসা নিশ্চিত করতে প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা মির্জা ফখরুলের 
ফুটবলার ঋতুপর্ণার ক্যান্সার আক্রান্ত মায়ের পাশে তারেক রহমান
ত্রিপুরায় রেড অ্যালার্ট, কুমিল্লায় আতঙ্কে বাড়ি ছাড়ছে গোমতীপারের মানুষ
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা