যারা জীবনেও একসঙ্গে মরণেও একসঙ্গে

মো. মুন্না মিয়া, সিলেট
| আপডেট : ০৪ জুলাই ২০২২, ১৭:৫৪ | প্রকাশিত : ০৪ জুলাই ২০২২, ১৫:৫৬
মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত জালালাবাদ ক্যান্টনমেন্ট ইংলিশ স্কুল অ্যান্ড কলেজের ৩ শিক্ষার্থী

অমি, আজিম ও জসিম। তারা তিন বন্ধু। চলাফেরাও একসঙ্গে। একজন ছাড়া আরেকজন চলতে পারত না৷ এমন সম্পর্ক ছিল মেধাবি এই তিন শিক্ষার্থীর। তারা জালালাবাদ ক্যান্টনমেন্ট ইংলিশ স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণির ছাত্র।

রবিবার (৩ জুলাই) সকালে বিজ্ঞান বিভাগের এই তিন শিক্ষার্থী সিলেট শহরের শ্যামলী আবাসিক এলাকা থেকে মোটরসাইকেল যোগে জেলার জৈন্তাপুর উপজেলায় ঘুরতে যায়। ফেরার পথে বিকাল ৩টার দিকে সিলেট-তামাবিল মহাসড়কের চিকণাগুল সিলেট গ্যাস ফিল্ডের ৩ নম্বর গেইটের সামনে আসামাত্র বিপরীত দিক থেকে আসা বেপরোয়া ট্রাক তাদের বহনকারী মোটরসাইকেলে চাপা দেয়। এতে মোটরসাইকেলে থাকা তিন বন্ধু মাটিতে লুটে পড়েন এবং ঘটনাস্থলে আজিম উদ্দিন (১৬) নামের একজন মারা যান। এরপর হাসপাতালে নেয়ার পথে ফাহিম রহমান অমিও (১৬) শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। অমির পর সিওমেক এ চিকিৎসাধীন থাকা জসিম উদ্দিনও (১৬) দুই বন্ধুর মতো পরপারে পাড়ি জমান। সড়ক দুর্ঘটনায় তাদের জীবন বিপন্ন হওয়ায় সহপাঠী, আত্মীয়-স্বজন ও শুভানুধ্যায়ীদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

তাদের বন্ধু নাসির উদ্দিন। তিনিও জালালাবাদ ক্যান্টনমেন্ট ইংলিশ স্কুল এন্ড কলেজে দশম শ্রেণিতে পড়েন। অমিদের বাসায় এসেছেন তিনি। একপর্যায়ে কথা হয় এ প্রতিবেদকের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমি আজিম ও জসিমের সঙ্গে নার্সারি থেকে পড়ালেখা করে আসছি। আর অমির সঙ্গে পরিচয় ক্লাস সিক্সে। ওরা অত্যান্ত মেধাবী ছিল। আমরা একসঙ্গে স্কুলে যেতাম। একসঙ্গে চলাফেরাও করতাম। কিন্তু আকষ্মিক এক ঝরে আমাদের দূরত্ব সৃষ্টি করে দিল। আর একসঙ্গে স্কুলে যাওয়া হবে না। আড্ডাও দেয়া হবে না। এটা মেনে নিতে পারছি না। সত্যিই খুবই কষ্ট হচ্ছে।’

নাসির আরও বলেন, ‘এখন পর্যন্ত ঘাতক ড্রাইভার ও তার সহযোগীকে আটক করতে পারেনি পুলিশ; এটি দুঃখজনক। আমরা চাই আমাদের সহপাঠী ও বন্ধুদের যে ট্রাক চাপা দিয়ে মেরেছে তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি।’

“মেধাবী এ তিন শিক্ষার্থীকে চাপা দিয়ে হত্যা করা ঘাতক ড্রাইভার ও তার সহযোগীকে দ্রুত সময়ের মধ্যে আটক না করলে প্রতিবাদে নামতে পারেন ক্যান্টনমেন্ট ইংলিশ স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষার্থীরা। এমনটাই নাসিরের সঙ্গে কথা বলে ধারণা পাওয়া গেছে।”

ফাহিম আহমদ অমি সিলেট মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির সাবেক সদস্য সুবেদুর রহমান মুন্নার একমাত্র ছেলে। তারা এক ভাই ও এক বোন।

আজিম উদ্দিন মহানগরের শাহপরান থানার পীরেরবাজারের হাতুড়া গ্রামের ফিরোজ উদ্দিন মহরির ছেলে আর জসিম একই থানাধীন খাদিমপাড়া ইউনিয়নের আটগ্রাম খেওয়া এলাকার আব্দুল আহাদের ছেলে।

জানা যায়, রবিবার বিকাল ৩টার দিকে সিলেট-তামাবিল মহাসড়কের সিলেট গ্যাস ফিল্ডের সম্মুখে ট্রাক ও মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটে। এসময় স্থানীয়রা এসে আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে প্রেরণ করলেও আজিম উদ্দিন নামের একজন ঘটনাস্থলে মারা যান। খবর পেয়ে পুলিশও ঘটনাস্থলে আসে। পুলিশ এসে মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতাল মর্গে পাঠায় এবং দুর্ঘটনা কবলিত ট্রাক ও মোটরসাইকেল জব্দ করে। আর হাসপাতালে নেয়ার পথে অমির মৃত্যু হয় এবং চিকিৎসাধীন অবস্থায় জসিম মারা যান।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন সিলেট জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি ও মিডিয়া) মো. লুৎফর রহমান। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত কাউকে আটক করা যায়নি। তবে দুর্ঘটনা কবলিত ট্রাক ও মোটরসাইকেল জব্দ করা হয়েছে।

এ ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলেও জানান তিনি।

(ঢাকাটাইমস/৪জুলাই/এআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :