এত রক্ত ঝরিয়ে পৃথিবীতে আর কোনো শিশুর জন্ম হয়নি

আনিসুর রহমান
  প্রকাশিত : ২০ জুলাই ২০২২, ২১:৩৮| আপডেট : ২২ জুলাই ২০২২, ১১:২৫
অ- অ+
সড়কে ট্রাকচাপায় মায়ের পেট ফেটে ভূমিষ্ঠ হওয়া শিশু। ছবি: সংগৃহীত

হালের সবচেয়ে আলোচিত ও অবাক করা ঘটনা হলো সড়ক পারাপারের সময় ট্রাকচাপায় মায়ের পেট চিরে ৮ মাসের সন্তান ভূমিষ্ট হওয়ায় ঘটনা। ঘটনাটি ময়মনসিংহের ত্রিশালের। এ ঘটনায় প্রাণ হারান নবজাতকের বাবা জাহাঙ্গীর আলম, মা রত্না ও ৬ বছর বয়সী বোন সানজিদা আক্তার। সবাই ট্রাকচাপায় পিষে মারা গেলেও অলৌকিকভাবে বেঁচে যায় পেট ফেটে ভূমিষ্ট হওয়া এই নবজাতক।

গত শনিবারের এই দুর্ঘটনায় জন্ম নেওয়া শিশুর হাত ভেঙে গেছে। সে এখন ময়মনসিংহ সদর হাসপাতালে চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে আছে। তার জন্ডিস ধরা পড়েছে। সেজন্য ৫ সদস্য বিশিষ্ট মেডিকেল বোর্ডও গঠন করা হয়েছে। নবজাতকের ভাঙা হাতে রয়েছে ব্যান্ডেজ। যা দেখে অনেকেই চোখের পানি ধরে রাখতে পারেন না। ডাক্তার বলেছেন শিশুটি এখন ঝুঁকিমুক্ত। বর্তমানে শিশুটি ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রয়েছে। অসহায় এ শিশুর দায়িত্ব নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে দেশের অগণিত মানুষ।

কিন্তু এমন ভয়াবহ দুর্ঘটনার মধ্য দিয়ে যে শিশুটির জন্ম হলো তাকে নানাজন নানা নামে ফেসবুকে লিখছে, নানাভাবে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছে। কেউ লিখছে অলৌকিক শিশু, কেউ লিখছে এন্জেল শিশু, কেউ লিখছে রাখে আল্লাহ মারে কে? কেউ লিখছে এত রক্ত ঝরিয়ে পৃথিবীতে আর কোনো শিশুর জন্ম হয়নি।

এত বিস্ময়ের কারণ একটাই। যে দুর্ঘটনায় মহাসড়কে ট্রাকের চাপায় সঙ্গে থাকা সবাই পিষ্ট হয়ে মারা গেল। বেঁচে থাকলো শুধু পেটে থাকা ৮ মাসের সন্তান। ট্রাকের চাপায় পিষ্ট মা তার পেটের অনাগত স্পপ্নকে দুনিয়ার বুকে নিরাপাদে রেখে তিনি চলে গেলেন পরপারে। ভাবতেই অবাক লাগে। নিজের অজান্তেই ভেতর থেকে বেরিয়ে আসে সুবহানাল্লাহ, আল্লাহু আকবার। সত্যি আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মহা কুদরতের মালিক।

এই শিশুর সন্তানের আপডেট তথ্য জানতে প্রতিদিনই কোটি মানুষ চোখ রাখছেন টিভির পর্দায়, খবরের কাগজে, নিউজ পোর্টালে, ইউটিউবে, ফেসবুকে। ইতোমধ্যে শিশুটির একটি ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। ছবিতে অনেকে তাদের আবেগ মেশানো ক্যাপশন দিচ্ছেন। লিখছেন, কত অভিমানে তাকিয়ে আছে শিশুটি। সত্যি ছবিতে তাকে খুব অভিমানী লাগছে। তার চেহারা ও চাহনিতে সেটিই ফুটে উঠছে। তার জন্য সবাই দোয়া করছেন। আল্লাহ যেন তাকে বাঁচিয়ে রাখেন। ভাঙা হাতটি যেন দ্রুত ভালো হয়ে যায়।

নবজাতকের পিতা জাহাঙ্গীর আলম, মা রত্না ও ৬ বছর বয়সী বোন সানজিদা আক্তারের নির্মম মৃত্যুতে ত্রিশালের রায়মনি গ্রাম যেন শোকে স্তব্ধ হয়ে আছে। ৫ দিনেও এই শোক কাটছে না। তার পরিবারে এখনো চলছে শোকের মাতম। মা-বাবা-ভাই হারোনার কষ্টের মাঝেও তার বড় দুই ভাই-বোন হাসপাতালের বেডে নবজাতক বোনটির দিকে অপলক চেয়ে থাকছে। ফুলের পাপড়ির মতো মিষ্টি ছোট বোনটির দিকে মুখের দিকে তাকিয়ে তারা সব হারোনার বেদনা-কষ্ট ভুলে থাকার চেষ্টা করছে।

অসহায় এ নবজাতকের সুরক্ষায় রাষ্ট্র নিজেই এগিয়ে এসেছে। ইতোমধ্যে ৫ লাখ টাকা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। ১৫ দিনের মধ্যে সড়ক পরিবহন আইনের অধীনে গঠিত ট্রাস্টিবোর্ডকে এ টাকা দিতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া নবজাতকটির দেখভাল ও সুরক্ষায় সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়কে একটি কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। নবজাতকটি সুস্থ হয়ে বেঁচে থাকুক এটাই দেশবাসীর কামনা।

লেখক: সাংবাদিক

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
দুদকের মামলায় জামিন পেলেন জুবাইদা রহমান
ঢাবি শিক্ষার্থী সাম্য হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার ৩
বেনাপোল কাস্টমসে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কলমবিরতি আমদানি-রপ্তানি ও পণ্য খালাস বন্ধ
কাশিয়ানীতে ছিনতাই হওয়া তেলবাহী ট্রাক উদ্ধার
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা