জেলা কমিটি কি কাউকে বহিষ্কার করার ক্ষমতা রাখে? কী বলেছেন আওয়ামী লীগ নেতারা

নৈতিক স্খলন, দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ কিংবা সংগঠনবিরোধী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে বিভিন্ন সময় আওয়ামী লীগের জেলা-উপজেলা তথা তৃণমূল পর্যায়ে কোনো নেতাকর্মীকে বহিষ্কারের খবর জানা যায়। গত বৃহস্পতিবার যেমন নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক ফেরদৌসী আলম নীলাকে আওয়ামী লীগের সব পদ থেকে বহিষ্কার (অব্যাহতি) করা হয়েছে।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই ও সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত মো. শহীদ বাদল স্বাক্ষরিত চিঠির মাধ্যমে নীলাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। তার বিরুদ্ধেও সংগঠনবিরোধী কার্যকলাপের অভিযোগ আনা হয়। এরপর বিষয়টি বিভিন্ন গণমাধ্যম ছড়িয়ে পড়ে।
এরপর প্রশ্ন ওঠে- জেলা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক আদৌ কি জেলার কোনো নেতাকে বহিষ্কার বা অব্যাহতি দিতে পারেন? জেলা কমিটি কি নেতাদের বহিষ্কার করার ক্ষমতা রাখে?
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত একাধিক কেন্দ্রীয় নেতার সঙ্গে ঢাকাটাইমসের আলাপ হয়। তারা গঠনতন্ত্রের বিভিন্ন ধারা-উপধারা উল্লেখ করে জানান, জেলার কোনো নেতা যদি দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ বা অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকেন তাহলে জেলা কমিটি দলের কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে তার শাস্তির সুপারিশ করতে পারে। কিন্তু সরাসরি বহিষ্কার করার ক্ষমতা দেওয়া হয়নি।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রের ৪৭(ঙ) ধারা বলছে, কেউ দলের আদর্শ, লক্ষ্য, উদ্দেশ্য, গঠনতন্ত্র, দলের স্বার্থের পরিপন্থী, দলের বিরুদ্ধে কোনো কাজ করলে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে দলের কার্যনির্বাহী সংসদ তার বিরুদ্ধে যেকোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে পারবে।
অর্থাৎ দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে কোনো নেতাকে বহিষ্কারের এখতিয়ার শুধু আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটি বা দলের সভাপতির। অন্য কারও নয়, জেলা কমিটিরও নেই।
নীলার বহিষ্কার বা দলের সব পদ থেকে তাকে অব্যাহতির বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকাটাইমসকে নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই বলেন, ‘নীলাকে দলের সব পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। চূড়ান্তভাবে বহিষ্কার করার মালিক হলেন দলের সভাপতি ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটি।’ নীলাকে বহিষ্কার বা অব্যাহতি দেওয়ার আগে কেন্দ্রীয় কমিটির কাছ থেকে অনুমতি নেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
সৈয়দা ফেরদৌসী আলম নীলার অব্যাহতির কারণ জানতে চাইলে আব্দুল হাই বলেন, ‘তার অনেক অপকর্ম আছে। এ নিয়ে বিভিন্ন পত্রিকায় লেখালেখি হয়েছে। বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকাণ্ড ও অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলার কারণে দল থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।’
এত দিন কেন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি সেই প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে। এ ছাড়া দলের মধ্যে গ্রুপিংয়ের কারণে নীলার বিরুদ্ধে এখন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এমন প্রচার আছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা সভাপতি বলেন, ‘না, গ্রুপিংয়ের কারণে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এর সঙ্গে আরও অনেকেই জড়িত রয়েছে।’
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য খায়রুজ্জামান লিটন ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘জেলা কমিটি জেলার কোনো নেতাকে বহিষ্কার করতে পারে না। কারও শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে তাকে অব্যাহতি দেওয়ার জন্য সুপারিশ করতে পারে। তবে দলের মধ্যে থেকে কেউ অপকর্ম করলে, বিশৃঙ্খলা করলে, দলের সুনাম নষ্ট করলে দলে থাকার কোনো সুযোগ নেই।’
তবে এ বিষয়ে (নীলার অব্যাহতি) অবহিত নন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম। বলেন, ‘এই বিষয়ে তো আমি অবহিত না। তাই কোনো কিছু বলতে পারব না।’
কাউকে বহিষ্কার করার ক্ষমতা জেলা কমিটির নেই জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক ফেরদৌসী আলম নীলাকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার নয় অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। জেলা কমিটি চাইলে কোনো নেতাকে তার পদ থেকে অব্যাহতি দিতে পরে, সেই ক্ষমতা আছে।’
আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রের কথা উল্লেখ করে দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘জেলা কমিটি কাউকে বহিষ্কার করতে পারে না, তবে বহিষ্কার করার জন্য কেন্দ্রে সুপারিশ করতে পারে। তাছাড়া হঠাৎ করে যদি কেউ অপরাধ করে এবং অপরাধের মাত্রা খুব গুরুতর হয়, তখন জেলা কমিটি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের সঙ্গে কথা বলে মৌখিক অনুমতি নিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে বহিষ্কার করতে পারে।’
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই ও সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত মো. শহীদ বাদলের স্বাক্ষরে নীলাকে দেওয়া অব্যাহতিপত্রে উল্লেখ রয়েছে, ‘দলের স্বার্থ, আদর্শ, শৃঙ্খলা ভঙ্গ তথা গঠনতন্ত্রের ৪৭-এর (ক) এবং ৪৭-এর (ঙ) ধারা মোতাবেক গঠনতন্ত্র পরিপন্থী কর্মকাণ্ডের জন্য সৈয়দা ফেরদৌসী আলম নীলাকে নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদকসহ নিম্নস্তরের সকল পদ থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হলো।’
সৈয়দা ফেরদৌসী আলম নীলা রূপগঞ্জ উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান। এ ছাড়া উপজেলার পূর্বাচলে নীলা মার্কেটের মালিক তিনি।
দলীয় সব পদ থেকে তাকে অব্যাহতি দেওয়ার বিষয়ে কথা বলার জন্য সৈয়দা ফেরদৌসী আলম নীলাকে একাধিকবার ফোন দিয়েও তার সাড়া পাওয়া যায়নি।
(ঢাকাটাইমস/৫আগস্ট/মোআ)

মন্তব্য করুন