কলার খোসা ফেলবেন না, খেলে কী উপকার জানেন?

সাইখ আল তমাল, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ১১ আগস্ট ২০২২, ১৬:০৯

বিশ্বব্যাপী বেশ জনপ্রিয় ফলের মধ্যে কলার নাম প্রথম দিকে থাকবে। খাবার হিসেবে কলার রয়েছে অধিক পুষ্টিগুণ। বলতে গেলে পুষ্টির আধার হলো কলা। এতে রয়েছে দৃঢ় টিস্যু গঠনকারী উপদান যথা আমিষ, ভিটামিন এবং খনিজ, এছাড়াও এটি ক্যালরির ভাল উৎস। একটি বড় মাপের কলাতে ১০০ ক্যালরির বেশি শক্তি পাওয়া যায়।

গবেষকরা দেখেছেন, একটি কলায় প্রায় ৫০০ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম থাকে। আর মানবদেহে প্রতিদিন ১৬০০ মিলিগ্রাম পটাশিয়ামের যোগান দেওয়া গেলেই স্ট্রোকের হাত থেকে বছরে বেঁচে যেতে পারে ১০ লক্ষ মানুষ। কলার গুণের কোনো শেষ নেই। কলার গাছ থেকে শুরু করে ফল পর্যন্ত প্রতিটা বস্তুই বেশ উপকারি।

খনার বচনে পাওয়া যায়, কলা রুয়ো না কেটো পাত, তাতেই কাপড়, তাতেই ভাত। অর্থাৎ কলাগাছের ফলন শেষে কৃষকদের গাছের গোড়া না কাটতে বলা হয়েছে। এতে কলার ফলন ভালো হবে। আর ভাল ফলন হলে কৃষকের ঘরে সারা বছর ভাত-কাপড় জুটবে।

খনার বচনে আরো রয়েছে, ‘ডাক ছেড়ে বলে রাবণ, কলা রোবে আষাঢ় শ্রাবণ। তিন শত ঝাড় কলা রুয়ে, থাক গৃহী ঘরে শুয়ে।’ কলা চাষ এই উপমহাদেশে অত্যন্ত প্রাচীন এবং সমৃদ্ধ। তবে শুধু কলা ফল হিসবেই নয়, এর খোসারও রয়েছে বেশ স্বাস্থ্যগত উপকারিতা। অনেকেই কলা খাওয়ার পর খোসা ছুড়ে ফেলি। কিন্তু এর উপকারিতা জানলে অবাক হতে হয়।

বিজনেস ইনসাইডার, বিটজজিভেগান, মেট্রো ওয়েবসাইট থেকে কলার খোসা খাওয়ার কিছু বৈজ্ঞানিক উপকারিতা সম্পর্কে জানা গেছে।

কলার খোসায় ট্রাইপটোফেন রয়েছে যা একটি প্রয়োজনীয় অ্যামাইনো এসিড। এটি মস্তিষ্কের সুখী হরমোন বাড়াতে সাহায্য করে।

কলার খোসার মধ্যে রয়েছে দ্রবণীয় এবং অদ্রবণীয় আঁশ। দ্রবণীয় আঁশ শরীরের লো-ডেনসিটি লাইপোপ্রোটিন, অর্থাৎ বাজে কোলেস্টেরলকে কমাতে সাহায্য করে। এর মধ্যে থাকা আঁশ হজমে সাহায্য করে, ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায় এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।

কলার খোসায় থাকা ভিটামিন সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। আর পটাশিয়াম যা শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে এবং আছে দেহে শক্তি যোগানকারী ম্যাগনেশিয়াম।

এছাড়াও কলার খোসায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, লুটেইনের মতো উপাদান যেগুলো কোষের ক্ষতি প্রতিরোধ এবং চোখের ছানি প্রতিরোধ করে।

খাওয়া ছাড়াও করার খোসার অন্যান্য ব্যবহার রয়েছে।

ঝকঝকে সাদা দাঁতের জন্য

প্রাকৃতিক উপায়ে ঝকঝকে সাদা দাঁত পেতে কলার খোসা ব্যভহার করা যেতে পারে। কলার খোসার ভেতরের দিকটা দাঁতে কিছুক্ষণ ঘষলে হলদে ভাব দূর হয়। এছাড়াও পাকা কলার খোসা প্রতিদিন ঘষে টানা এক সপ্তাহ ব্যবহার করলে দাঁতের ব্যথা উপশম হয়।

ব্রণ এবং মুখের দাগ দূর করতে

মুখের ব্রণ দূর করতে কলার খোসা উপকারি। এর মাধ্যমে একবার সেরে গেলে ব্রণ আর ফিরে আসে না। মুখে ভালো করে ঘষে সারারাত রেখে দিলে ব্রণের সমস্যা কাটবে। পাশাপাশি মধুর সঙ্গে কলার খোসা মিশিয়ে মুখে ভালো করে ঘষলে মুখের দাগ দূর হয়। কলার খোসায় ভিটামিন এ, বি, সি, ই, পটাসিয়াম, জিংক, আয়রন এবং ম্যাঙ্গানিজ আছে। যা পুরোনো ব্রণের দাগও কমাতে পারে।

চোখের সুরক্ষা

চোখে ছানি পড়ার সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে কলার খোসা। চুলকানি ও চোখের অবসাদ দূর করতে চোখের ওপর কলার খোসা মেখে নিলে তা ভাল কাজে দেয়। কেননা এতে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট লুটিন অতিবেগুনি রশ্মির ছোবল থেকে চোখকে বাঁচায়।

বলিরেখা দূর এবং মসৃণ ত্বক

কলার খোসায় অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে যা বলিরেখা দূর করে ত্বক সজীব রাখে। এছাড়াও কলার খোসার ভেতরের অংশ মুখে লাগিয়ে কিছুক্ষণ পর ধুয়ে ফেললে মুখমণ্ডলের শুষ্ক আর খসখসে ভাব দূর হয়।

দাদ এবং খোসপাঁচড়ার ওষুধ

কলার খোসা দাদ এবং খোসপাঁচড়ার ওষুধ হিসেবে কাজ করে। দাদযুক্ত অংশে খোসা লাগালে চুলকানি বন্ধ হয় এবং দ্রুত দাদ সেরে যায়। ত্বকে কোথাও পাঁচড়া-জাতীয় কিছু হলে সেই জায়গায় কলার খোসা মাখলে অথবা কলার খোসা সেদ্ধ করে সেই পানি দিয়ে সংক্রমিত জায়গা কয়েক দিন পরিষ্কার করলে উপকার পাওয়া যায়।

পোকা-মাকড়ের কামড়ে যন্ত্রণা করলে

কোনো পোকা-মাকড়ের কামড়ে যদি জ্বালা-পোড়া বা চুলকানি হয়, সে স্থানে কলার খোসা লাগালে দ্রুত এসব থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

এছাড়াও, কলার খোসা চামড়ার জুতা, কাপড়, রুপার গয়না পরিষ্কার করার কাজেও ব্যবহার করা যায়। এতে অলংকার টেকসই হয় ও মসৃণতা বাড়ে।

যেভাবে খাবেন কলার খোসা

কাঁচা কলার খোসা সেদ্ধ করে ভর্তা বা সবজির মতো রান্না করে খাওয়া যায় আবার কাঁচাও খাওয়া যায়। তবে অবশ্যই ভালভাবে পেকে পাতলা হয়েছে এমন খোসা খাওয়া উত্তম। পাকা কলার খোসা খাওয়ার ক্ষেত্রে ভেতরের সাদা দিকটি খাওয়া বেশি স্বাস্থ্যকর।

তবে কলার খোসা খাওয়া নিয়ে বিতর্কও রয়েছে। নিউইয়র্কের করনেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডেভিড লেভিটস্কি কলার খোসা খাওয়ার ব্যাপারে বলেন, মানুষ সব সময় জাদুকরি খাবার খোঁজে। খাবার শরীরের জন্য প্রয়োজনীয়। তবে এটি কোনো কিছুর জাদুকরি উত্তর নয়। কলার খোসার মধ্যে অনেক স্বাস্থ্যগুণ রয়েছে। তবে এটি যদি হজম করতে পারেন, তবেই খাওয়া ভালো।

বর্তমানে বাজারে পাওয়া ফলগুলোতে পেস্টিসাইড ব্যবহার করা হয়। এটি দেহের জন্য ক্ষতিকর। তাই কলার খোসা খাওয়ার আগে এ জাতীয় ক্যামিকেল ব্যবহার করা হয়েছে কিনা সে বিষয় খেয়াল রাখা অতি গুরুত্বপূর্ণ।

(ঢাকাটাইমস/১১আগস্ট/এসএটি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :