সংসার চালাতে হিমশিম খেয়ে ছিনতাইয়ের পথ বেছে নেন সামাদ
আব্দুস সামাদ আদৌ কি পেশাদার ছিনতাইকারী? নাকি পরিস্থিতি তাকে এ পথে নামিয়েছে? কেনই বা তার হাতে উঠে এলো ছুরি? সেই ছুরিতে জীবন গেছে ব্যবসায়ী শরীফের। ঘটনা বৃহস্পতিবার রাত ১২টা ৪৫ মিনেটের। উত্তরা ১১ নম্বর সেক্টরের সোনারগাঁও জনপথ সড়কের দুই নম্বর বাড়ির নিচে ডাচ-বাংলা ব্যাংকের এটিএম বুথ। ওই বুথে টাকা তুলতে গিয়েই ছিনতাইকারী সামাদের ছুরির আঘাতে নিহত হন ব্যবসায়ী শরীফ উল্লাহ।
এ ঘটনায় ৩৮ বছর বয়সী আব্দুস সামাদ গ্রেপ্তার হন। আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দেন। গত শুক্রবার দেওয়া সেই জবানবন্দি পর্যালোচনা করে ঢাকা টাইমস। জবানবন্দিতে আব্দুস সামাদ হত্যার দায় স্বীকার করেন। এমনকি আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে তিনি এ-ও বলেছেন, আর্থিক অভাব অনটনে পড়ে তিনি এই ছিনতাই করতে যান।
তার আর্থিক অভাব অনটনের বিষয়টি কতটুকু সত্যি তা যাচাই করতে ঢাকা টাইমস সামাদের পরিচিত কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে। তাদের মধ্যে ফারহানা নামে একজন ঘনিষ্ঠ ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘সামাদ পেশাদার ছিনতাইকারী বা অপরাধী নন। তার দুটি সন্তান। তাদের মাঝে একজন প্রতিবন্ধী। সেই প্রতিবন্ধী বাচ্চার চিকিৎসার টাকা, সংসারের অভাব অনটন সবমিলিয়ে মানসিক বিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি।’
‘পারিবারিক ব্যয় এবং ওষুধের খরচসহ নানা বিষয় নিয়ে স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়া করে তিনি এ ঘটনা ঘটিয়েছেন। সম্প্রতি কাজ না থাকায় ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েন তিনি। সোজা কথায়, অভাবে পড়ে তিনি এই কাজ করেছেন। পুলিশও তার কোনো ছিনতাইয়ের পূর্ব রেকর্ড পায়নি’- বলেন ফারহানা।ফারহানার বক্তব্যের সঙ্গে আদালতে দেওয়া সামাদের স্বীকারোক্তিরও মিল পাওয়া গেছে। সত্যিকার অর্থেই সামাজিক অব্যবস্থাপনা, অভাব অনটন মানুষকে অস্বাভাবিক অবস্থার মধ্যে নিয়ে যাচ্ছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক খন্দকার ফারজানা রহমান মনে করেন, ‘সমাজে ধনী-গরিব বৈষম্যের শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ।’
সামাদের ঘটনা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘একজন সামাদকে আপনারা অপরাধী হিসেবে দেখছেন। কিন্তু তার পেছনের কষ্টের ইতিহাস দেখছেন না। আমরা মুখে বলি ভালো আছি। সবাই সেটি বলে এক ধরনের আত্মতৃপ্তিও পান। কিন্তু বাস্তবতা কতটা নির্দয় হতে পারে, সামাদের হাতে ছুরি এবং মানুষ খুনের ঘটনা তার একটি উদাহরণ মাত্র। অবশ্যই তার বিচার হওয়া উচিত, কিন্তু সমাজে এভাবে আরও কত সামাদ আছে সেদিকটি প্রশাসন বা সরকারের বিবেচনায় নেওয়া উচিত বলে আমি মনে করি।’ জানা যায়, ঘটনার রাতে সামাদ প্রথমে একটি ছুরি সংগ্রহ করেন। রাত ১১টার দিকে গাজীপুরের টঙ্গী থেকে বসুমতি পরিবহনে উত্তরা হাউজ বিল্ডিংয়ে গিয়ে নামেন। তিনি দিকশূন্যহীন হয়ে ছিনতাইয়ের সুযোগ খুঁজতে থাকেন। পেশাদার অপরাধী বা ছিনতাইকারীরা যেমন সংঘবদ্ধভাবে এই অপরাধটি করে, সামাদের ক্ষেত্রে তা হয়নি। তিনি একাই সুযোগ খুঁজতে থাকেন। এটিএম বুথে যখন ব্যবসায়ী শরীফ উল্লাহ ঢোকেন, তখন তার ওপর নজর পড়ে সামাদের। টাকা তোলার পরই শরীফের হাত থেকে সেই টাকা ছিনিয়ে নিয়ে শরীফের ঘাড়ে ছুরি বসিয়ে দেন ঘাতক সামাদ। তার উপর্যুপরি ছুরিকাঘাতে রক্তাক্ত হয়ে জীবন হারান টাকা তুলতে যাওয়া শরীফ।
তবে ছিনতাইয়ের টাকার অঙ্ক যে খুব বেশি ছিল তা নয়। মাত্র আট হাজার টাকা। উত্তরা পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ মহসিন বলেন, ‘ছিনতাইকারী ঘটনাস্থল থেকে সঙ্গে সঙ্গে আটক হন। যার কারণে টাকা নিয়ে তিনি পালাতে পারেননি।’
নেত্রকোণার পূর্বধলার বিশকাকলি এলাকার আব্দুল হামিদের ছেলে আব্দুস সামাদ। গাজীপুরের পুবাইলের বসুগাঁও গ্রামে স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে ভাড়া থাকতেন তিনি। দুই সন্তানের মধ্যে একজন প্রতিবন্ধী।
নিহত শরীফ উত্তরা ১২ নম্বর সেক্টরে একটি টাইলসের দোকান পরিচালনা করতেন। ওই ব্যবসার টাকা লেনদেন করতেন ডাচ-বাংলা ব্যাংকের সঙ্গে।
মামলার বাদী নিহত শরীফের বড় ভাই আনোয়ার হোসেন। তিনি ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমার ভাইয়ের সন্তানরা এতিম হয়ে গেল। তিনি প্রশ্ন তোলেন, মানুষের জীবনের কি কোনো মূল্য নেই? কিভাবে এ দেশে আমরা ব্যবসা-বাণিজ্য করব?
তিনি মানুষের নিরাপত্তার জন্য প্রশাসনের সহযোগিতার পাশাপাশি ভাই শরীফ হত্যায় জড়িত ব্যক্তির ফাঁসি দাবি করেন।(ঢাকাটাইমস/১৫আগস্ট/এফএ)