বেসরকারি খাতে যাচ্ছে জ্বালানি আমদানি

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ০৩ ডিসেম্বর ২০২২, ২২:৫০

* নীতিমালা তৈরির কাজ চলছে: বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী

* ডিজেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ বাড়াবে না সরকার

*কোনো বেসরকারি উদ্যোক্তা এলএনজি আমদানি করলে স্বাগত জানাবো : জ্বালানি সচিব

* শুধু আমদানিই নয়, গ্রাহক পর্যায়ে জ্বালানি বিক্রি করতে পারবে উদ্যোক্তারা

*দেশের গ্যাস ফুরিয়ে যাচ্ছে, এ তথ্য সঠিক নয়: ম তামিম

বেসরকারিভাবে জ্বালানি আমদানির সুযোগ করে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। শিগগিরই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে জ্বালানি বিভাগকে নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রিসভা। সে অনুযায়ী এ সংক্রান্ত একটি নীতিমালা তৈরির কাজেও হাত দিয়েছে জ্বালানি বিভাগ। এ নীতিমালা তৈরির পর নির্ধারিত সরকারি আনুষ্ঠানিকতা শেষে শুরু হবে বেসরকারি খাতে জ্বালানি আমদানি।

এদিকে বেসরকারি খাতে জ্বালানি আমদানি এবং বিক্রির অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে শনিবার এক অনুষ্ঠানে ছন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, এ সংক্রান্ত নীতিমালা তৈরির কাজ চলছে। এছাড়া ডিজেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ সরকার বাড়াবে না বলেও জানান প্রতিমন্ত্রী।

শনিবার জ্বালানি বিটের সাংবাদিকদের সংগঠন ‘ফোরাম ফর এনার্জি রিপোর্টার্স বাংলাদেশ (এফইআরবি)’ আয়োজিত ‘এনার্জি ট্রানজিশন: গ্লোবাল কনটেক্সট অ্যান্ড বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনারে প্রতিমন্ত্রী এসব তথ্য জানান। গ্যাসের দামবৃদ্ধি বাংলাদেশের জন্য আশীর্বাদ বলেও মন্তব্য করেন তিনি। ২২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সেমিনারটি আয়োজন করে এফইআরবি।

একই সেমিনারে জ্বালানি বিভাগের সিনিয়র সচিব মাহবুব হোসেন বলেন, ‘এলএনজি আমদানিতে এখনও নীতিমালায় কোনও বাধা নেই। কোনও বেসরকারি উদ্যোক্তা যদি এলএনজি আমদানি করে, আমরা তাকে স্বাগত জানাবো।’

গত সোমবার মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে বেসরকারি খাতে জ্বালানি আমদানির বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সেমিনারে নসরুল হামিদ বলেন, শুধু জ্বালানি আমদানি নয়, গ্রাহক পর্যায়ে জ্বালানি বিক্রি করতে পারবে উদ্যোক্তারা।

ফার্নেস অয়েল আগে থেকেই আমদানি করতো বেসরকারি উদ্যোক্তারা। নতুন নীতিমালা হলে সব ধরনের জ্বালানি তারা আমদানি এবং বিতরণ করতে পারবে বলেও জানান প্রতিমন্ত্রী। তিনি জানান, উদ্যোক্তারা আমদানি করবেন, তারা পাম্পের কাছে বিক্রি করবেন।

নসরুল হামিদ বলেন, ‘আমরা জ্বালানির ধরন পরিবর্তনের ক্ষেত্রে আমাদের ক্রয় ক্ষমতা বিবেচনা করছি। আমাদের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে কোনও কিছু আমরা এই মুহূর্তে নিয়ে আসতে পারবো না।’ বৈদ্যুতিক গাড়ি এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিকে সম্প্রসারণের উপর জোর দেওয়ারও আহ্বান জানান তিনি।

ডিজেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ আর বাড়ানো হবে না জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ডিজেলভিত্তিক যেসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ আগামী বছরের জুনের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে, সেগুলোর মেয়াদ আর বাড়ানো হবে না।

তিনি বলেন, ‘গ্যাসের দামবৃদ্ধি বাংলাদেশের জন্য আশীর্বাদ হয়েছে। কারণ, এখন আমাদের কাছে ডিপ সিতে (গভীর সমুদ্রে) এক্সপ্লোরেশনের জন্য অফার আসছে। আগে কোনো পার্টিই পাওয়া যায়নি। বদরুল ইমাম সাহেব একটা জাতীয় দৈনিকের মতামতে বলেছেন যে, কেন আমরা ডিপ সিতে এক্সপ্লোরেশনে গেলাম না তখন। কোনো পার্টিই তো ছিল না তখন। আমরা টেন্ডার দিয়েছি, কেউ আসেনি। কারণ সে সময়ে গ্যাসের দাম অনেক কম ছিল।'

নসরুল হামিদ বলেন, ‘অনেক সময় বিজ্ঞানীরা বুঝতে পারেন না যে, এখানে একটা বিজনেস কেস ইনভলবড। এটা এমন না যে গ্যাস পেলাম, কালকে গিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ব। বিজনেস কেসটা হলো খনন করলে সেটা ওই কোম্পানির জন্য লাভজনক হবে কি না। ফিসিবিলিটি ইজ দ্য মেইন থিং। ১০ বছর আগে কেন হয়নি? এই কারণেই হয়নি। ইট ওয়াজ নট ফিসিবল। আইওসি ২ ডলারে গ্যাস দেয়। আর সেখানে গিয়ে গ্যাস এক্সপ্লোরেশন করতে গেলে লাগবে ৭ ডলার। আমি যদি বলি ৫ ডলার দেবো, কেউ রাজি হবে? কেউ রাজি হয়নি। এটা বুঝতে হবে। এখন দাম বেড়েছে, এখন অনেক মানুষ আসছে।’

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমি কাউকে দোষ দেই না। যারা থিওরি নিয়ে কাজ করেন, তারা এ বিষয়টি বাইরে গিয়ে চিন্তা করেন না যে, কেন আসে না। কারণ, খনন কোম্পানিও ব্যবসা করতে চাচ্ছে। তারা এখানে ১০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে, ৫০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে। তারা তো বসে নেই যে ২ ডলার করে গ্যাস বিক্রি করবে। তারা চিন্তা করে, আগামী ১০ বছর লাগবে আমার গ্যাস এক্সপ্লোরেশন করে আসতে, সে সময় দাম কত হবে, সে সময় যদি দাম ড্রপ করে, তাহলে কী হবে। আদৌ কি চাহিদা থাকবে কি না। এখানে নানা জটিলতা আছে।'

বিদ্যুৎ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গ্রাহকের দোরগোড়ায় সাশ্রয়ী ও সহনীয় দামে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি পৌঁছে দেওয়াই মূল চ্যালেঞ্জ। সেই সঙ্গে বেসরকারি খাত চাইলে তেল-গ্যাস আমদানি করতে পারবে বলেও উল্লেখ করেন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী।

সেমিনারের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ম তামিম। তিনি ওই প্রবন্ধে উল্লেখ করেন, ২০৩০ সাল নাগাদ দেশের বিদ্যুৎ এবং জ্বালানি আমদানিতে বছরে অন্তত ২০ থেকে ২৫ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন হবে। এরমধ্যে গ্যাস আমদানিতে ১১ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার, কয়লা আমদানিতে ৫ বিলিয়ন ডলার, বিদ্যুৎ আমদানি এবং তরল জ্বালানি আমদানিতে আরও ৯ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন হবে।

দেশের গ্যাস ফুরিয়ে যাচ্ছে, এ তথ্য সঠিক নয় বলে সেমিনারে মন্তব্য করেন ভূতাত্বিক অধ্যাপক বদরুল ইমাম। তিনি বলেন, ‘অন্তত তিনটি আন্তর্জাতিক গবেষণা বলছে, আমাদের দেশে এখনও ৩৪ টিসিএফ এর মতো গ্যাস রয়েছে।’ এই গ্যাসের জন্য তিনি স্থলভাগে অনুসন্ধান জোরদার করার আহ্বান জানান।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহম্মদ হোসাইন বক্তব্য দেন। এফইআরবির চেয়ারম্যান শামীম জাহাঙ্গীর সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য দেন, সঞ্চালনা করেন এফইআরবির নির্বাহী পরিচালক রিশান নসরুল্লাহ।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিদ্যুৎ সচিব হাবিবুর রহমান বলেন, ‘আমরা চাইলেই রাতারাতি জ্বালানির ধরন পরিবর্তন করতে পারবো না। চাইলেই এক সঙ্গে অনেক সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব নয়। কারণ আমাদের জমির স্বল্পতা রয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদনের একটি বড় সমাধান হচ্ছে রুফ টপ সোলার বা ছাদে সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদন, সরকার এটিকে উৎসাহিত করছে।’

এদিকে গত ২৮ নভেম্বর মন্ত্রীসভার এক বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদসচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, বেসরকারি যেকোনো প্রতিষ্ঠান যেকোনো ধরনের জ্বালানি আমদানি করতে পারবে বলে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে কয়েক দিনের মধ্যে। এরপর বেসরকারি খাত জ্বালানি আমদানি করতে পারবে। সরকার তাদের সব ধরনের সহযোগিতা দেবে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে জ্বালানি বিভাগকে নির্দেশনাও দিয়েছে মন্ত্রিসভা। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২২-এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদনের সময় মন্ত্রিসভার সদস্যরা এ বিষয়ে আলোচনা করেন বলেও জানান তিনি। ওই খসড়ায় বলা হয়, বিশেষ পরিস্থিতিতে সরকার জ্বালানির মূল্য সমন্বয় করতে পারবে গণশুনানী ছাড়াই। এরপর গত বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রপতি স্বাক্ষর করেন ওই অধ্যাদেশে। এর আগে ৯০ দিন সময় নিয়ে গণশুনানীর মাদ্যমে জ্বালানির মূল্য নির্ধারণ করত বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিআইআরসি)। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গণশুনানী ছাড়া জ্বালানির দাম নির্ধারণের ক্ষমতা সরকার হাতে নেওয়ায় ভোক্তার অধিকার খর্ব হবে।

(ঢাকাটাইমস/০৩ডিসেম্বর/আরকেএইচ/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

অর্থনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

অর্থনীতি এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :