আলফাডাঙ্গায় খেজুরের রস যেন সোনার হরিণ

ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় শীতের সকালে একদশক আগেও চোখে পড়তো রসের হাড়ি ও খেজুর গাছ কাটার সরঞ্জামসহ গাছির ব্যস্ততার দৃশ্য। শীতকাল আসলেই রস সংগ্রহ করে বিক্রি করতে দেখা যেত গাছিদের। শীতের মৌসুম শুরু হতেই বাড়ি বাড়ি চলতো খেজুরের রস কিংবা রসের পাটালি গুড় দিয়ে মজাদার পিঠা পুলির আয়োজন। আর খেজুরের রস দিয়ে তৈরি ঝোলা গুড়ের সুনাম তো ছিলই।
তবে সেই দৃশ্য এখন আর তেমন চোখে পড়ে না। শীতে খেজুর রসের কদর বাড়লেও সময়ের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে খেজুর রস। এর প্রধান কারণ বিভিন্ন খেজুর গাছ নিধন। এতে দিনে দিনে কমছে খেজুরের গাছ। সেই সঙ্গে খেজুর গাছ কাটার পেশায় জড়িতরা পেশা বদল করে চলে গেছে অন্য পেশায়; সে কারণে ঐতিহ্যবাহী খেজুরের রস এখন যেন সোনার হরিণ।
উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ঘুরে দেখা গেছে, গুটিকয়েক গাছি পুরাতন এই পেশা ধরে রেখেছেন। পৌর এলাকার নওয়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা হালিম মোল্যা তাদেরই একজন। শীতকাল এলেই ব্যস্ততা বেড়ে যায় তার। তখন অন্য কাজ বাদ দিয়ে খেজুরের রস বিক্রি করেই সংসার চালান তিনি। রস বিক্রি করেই প্রতি মৌসুমে আয় করেন অর্ধলাখ টাকা। প্রায় ৪৫ বছর তিনি এই পেশার সাথে জড়িত। এবছর তিনি ৫০টি খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করছেন। রসের ব্যাপক চাহিদা থাকার কারণে ভোর হতে না হতেই মানুষ তার বাড়িতে এসে রস ক্রয় করে নিয়ে যায়। এমনকি অগ্রিম অর্ডার নিয়েও রস দিতে পারেন না অনেক সময়।
উপজেলার শিরগ্রাম এলাকায় হাচান ফকির নামে এক গাছিকে দেখা যায়, তিনি খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করার জন্য গাছের মাথার দিকে বিশেষ কায়দায় কান্ড ছেটে হাড়ি পাতছেন। পরে গাছ থেকে নিচে নেমে আসলে কথা হয় তার সাথে।
হাচান ফকির জানান, তিনি এবছর কয়েকটি এলাকার ৬০-৭০টি খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করেন। এরপর তিনি রস থেকে গুড় তৈরি করে বাজারে বিক্রি করেন। তাতে প্রতিদিন ১৫০০-২০০০ টাকা আয় হয়। সে অর্থ দিয়ে চলে তার সংসার। শীত মৌসুমে তিনি এই কাজ করেন। বছরের বাকী সময় তিনি কৃষি কাজ করেন।
আলফাডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সভাপতি সেকেন্দার আলম জানান, ‘এখানে খেজুর রসের চাহিদা ব্যাপক। শিশু বাচ্চারাও এ রস পান করার বায়না করে। কিন্তু বাজারে এখন আগের মতো খেজুর রস বিক্রি হয় না। দু’একজন বিক্রি করলেও চড়া দামের কারণে ও স্বল্পতা থাকায় চাহিদা মিটানো যায় না।’
এ বিষয়ে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ কে এম জাহিদুল হাসান ঢাকা টাইমসকে বলেন, এক সময় খেজুর রসের জন্য আলফাডাঙ্গা উপজেলা বিখ্যাত ছিল। এখন গাছ নেই বললেই চলে। যা আছে, সেগুলো থেকে আগের মতো রস পড়ে না। ফলে ঐতিহ্যের খেজুর রসের প্রচুর চাহিদা থাকা স্বত্ত্বেও দিন দিন তা বিলুপ্তির পথে বসেছে। খেজুর গাছ রক্ষায় সকলকে সচেষ্ট হওয়ার আহবান জানান তিনি।
আলফাডাঙ্গা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রিপন প্রসাদ সাহা আলাপকালে ঢাকা টাইমসকে বলেন, আমাদের অসচেতনার কারণে আজ অনেকটাই বিলুপ্তির পথে খেজুর গাছ। খেজুর গাছের এই সঙ্কট নিরসনে আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে, গণসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে এবং বেশি বেশি করে খেজুর বীজ বপন করতে হবে।’
(ঢাকাটাইমস/০৫জানুয়ারি/এসএ)

মন্তব্য করুন