শিক্ষক পেটানানোর ঘটনায় আ.লীগ নেতাসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা

কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলায় প্রধান শিক্ষক নুরুন্নবীকে তুলে নিয়ে পেটানার ঘটনায় উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা রোকনুজ্জামান রোকনসহ সহকারী শিক্ষক আসাদুল ইসলাম এবং আরও অজ্ঞাত ১২ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে।

ভুক্তভোগী শিক্ষক এই মামলা করেন। শনিবার বিকালে মামলাটি করা হয়।

এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে ভুক্তভাগী ওই শিক্ষক বাদী হয়ে লিখিত অভিযোগ দেন রৌমারী থানায়।

আসামি রোকনুজ্জামান রোকনরা উপজেলার চরশৌলমারী ইউনিয়নের পাখিউড়া গ্রামের বাসিন্দা। তিনি সদ্য ঘোষিত আংশিক কমিটির রৌমারী উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক। এছাড়াও এই মামলায় একই ইউনিয়নর ফুলকারচর গ্রামের আসাদুল ইসলামকে আসামি করা হয়েছে।

গত ১৯ জানুয়ারি দুপুরে অফিসিয়াল কাজে উপজেলা শিক্ষা অফিসে যান প্রধান শিক্ষক নুরুন্নবী ও বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী আব্দুর রশিদ। কাজ শেষে উপজেলা চত্বর থেকে উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা রোকনুজ্জামান রোকনের নেতৃত্বে বেশ কয়েকজন ওই প্রধান শিক্ষককে তুলে নিয়ে যান। প্রথম তাকে উপজেলা চত্বরের পাশেই পলি পরিবহনের বাস কাউন্টারে আটক রাখা হয় এবং প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়। কিছুক্ষণ পর মোটরসাইকেলে করে ওই প্রধান শিক্ষককে নিয়ে যাওয়া হয় রৌমারী সিজি জামান উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হারোয়রার বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষে। এসময় আওয়ামী লীগ নেতা রোকনুজ্জামান ওই শিক্ষকের উপর চড়াও হন। তার মুখমণ্ডলে থাপ্পর ও কিল-ঘুষি মারতে থাকেন। তা দেখে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দ্রুত চেয়ার থেকে উঠে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। পরে আহত ওই প্রধান শিক্ষককে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। ঘটনার দিন রাতেই ভুক্তভোগী শিক্ষক আওয়ামী লীগ নেতা রোকনুজ্জামান রোকন, আসাদুল ইসলামের নাম উল্লেখ করে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেন। প্রধান শিক্ষককে মারধরের সিসি টিভির ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

ভুক্তভোগী ওই প্রধান শিক্ষক নুরুন্নবী বলেন, প্রধান শিক্ষক পদ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। প্রধান শিক্ষকের পদ নিয়ে তদন্ত হয়েছে এবং আমাকে দায়িত্ব দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু রোকন আমার সহকর্মী আসাদুল ইসলামের নিকট ২০-২৫ লাখ টাকা উৎকোচ নিয়ে আমার ওপর অত্যাচার করে আসছে। আমি এই ঘটনায় থানায় মামলা করেছি। এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।

ফুলকারচর নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়র পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি শুক্কুর মাহমুদ বলেন, বিদ্যালয়ের কমিটি গঠনের কাজ শিক্ষা অফিস গিয়েছিলেন প্রধান শিক্ষক নুরুন্নবী। তাকে অন্যায়ভাবে তুলে নিয়ে মারধর করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি।

রৌমারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হোরায়রা ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, এটা ন্যাক্কারজনক ঘটনা। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে আওয়ামী লীগ নেতা রোকনুজ্জামান রোকনের বিরুদ্ধে অবশ্যই সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

রৌমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রুপ কুমার সরকার বলেন, প্রধান শিক্ষককে পেটানোর ঘটনায় রোকনসহ দুজনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরও ১০ থেকে ১২ জনকে আসামি করে একটি মামলা হয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

(ঢাকাটাইমস/২১জানুয়ারি/এলএ)