নেই অবকাঠামো-শিক্ষার্থী, তবু সরকারি বিদ্যালয়!

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৩:১২

কুড়িগ্রামে শিক্ষার্থী আর অবকাঠামো না থাকলেও সেটি একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। বাস্তবে আছে শুধু পতাকা, সাইনবোর্ড আর শিক্ষক। এ যেন ঢাল নেই তলোয়ার নেই নিধিরাম সরদার।

চারদিকে কৃষি জমি। ধান রোপণে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষক। জমির মাঝখানে চোখে পড়বে একটি টিনের চাল। বেড়া-দরজা-জানালা কিছুই নেই। শুধুমাত্র টিনের চালার সামনে বাঁশের মধ্যে লাগানো জাতীয় পতাকা পতপত করে উড়ছে আর সামনে একটি সাইনবোর্ডে লেখা- উত্তর মাঝের চর আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। দুটি ভাঙা ব্রেঞ্চ আর কয়েকটি প্লাস্টিকের চেয়ার এবং একটি মাত্র টেবিলের উপর শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর হাজিরা খাতা। সেখানে দুয়েকজন অভিভাবকসহ বসে আছেন বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। নেই কোন শিক্ষার্থীর কোলাহল কিংবা শিক্ষকদের পাঠদানের জন্য ব্যস্ততা। বিদ্যালয় যাওয়ার পথ না থাকায় যেতে হবে জমির আইল বেয়ে। না এটা কোন ছবি বা কল্প কাহিনীর গল্প নয়। এমন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের খোঁজ মিলবে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার মোগলবাসা ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর গ্রামে। সরেজমিনে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের চিত্র দেখে জরাজীর্ণ বললেও ভুল হবে। বিদ্যালয়টিতে শুধুমাত্র কাগজ কলমে ৮০ জন শিক্ষার্থীর জন্য রয়েছে ৫ জন শিক্ষক।

মোগলবাসা ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর মৌজায় ২০০৪ সালে বেসরকারিভাবে গঠিত উত্তর মাঝের চর আদর্শ প্রাথমিক বিদ্যালয়। কিন্তু নিচু স্থান হওয়ায় বন্যার পানিতে ডুবে থাকে বছরের অধিকাংশ সময়। তাই ২০১১ সালে পাশেই উত্তর মাঝের চর গ্রামে উঁচু স্থানে নিয়ে যাওয়া হয় বিদ্যালয়টি। সেখানে থাকাকালে ২০১৮ সালে বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ হয়। গত বছরের বন্যায় ধরলা নদীর ভাঙনে একই ইউনিয়নের পাশের চর কৃষ্ণপুর গ্রামের চর কৃষ্ণপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভেঙে যায়। এরপর সেই বিদ্যালয়টিও স্থানান্তরিত করা হয় উত্তর মাঝের চর গ্রামেই। পাশাপাশি দুটি বিদ্যালয়ের অবস্থান হওয়ায় উত্তর মাঝের চর আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে পূর্বের স্থানে স্থানান্তর করার নির্দেশ দেয় উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস। এরপর থেকেই বিদ্যালয়ের এমন চিত্র হলেও কর্তৃপক্ষের ভ্রুক্ষেপ নেই। বিদ্যালয়ের পরিবেশ না থাকায় সন্তানদের ভর্তি করাচ্ছেন না অভিভাবক।

সহকারী শিক্ষক আশরাফিয়া বিনতে আকতার বলেন, বিদ্যালয়ে আসার কোন পথ নেই। জমির আইল দিয়ে আসা-যাওয়া করতে হয়। এ জন্য বাচ্চারা বিদ্যালয়ে আসে না। বিদ্যালয়ের শিশু শ্রেণি হতে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত প্রায় ৮০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। এরমধ্যে ১০/১৫ জন শিক্ষার্থী আসে। জমির আইল ভেজা থাকায় প্রায় সময় পিছলে পড়ে আহত হয় এবং পোশাক নষ্ট হয়ে যায়।

অভিভাবক কাজলি বেগম বলেন, স্কুলের ঘর নেই শুধু পতাকা, সাইনবোর্ড আছে দেখে বোঝা যায় এটি স্কুল। কিন্তু বাস্তবে টিনের চালটুকু দেখে কেউ বুঝতে পারবে না- এটা সরকারি স্কুল।

অভিভাবক লাইলী বেগম বলেন, সরকারি স্কুল হলেও এখানে ঘর, ব্রেঞ্চ, টিউবওয়েল, ল্যাট্রিন এমন কি স্কুল আসার রাস্তাও নেই। এমন পরিবেশে কোন অভিভাবক কি তার সন্তান দিতে পারে?

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলতাফ হোসেন বলেন, বিদ্যালয় স্থানান্তর আর জমি সংক্রান্ত জটিলতার কারণে এমন করুণ চিত্র। দানকৃত জমিতে দাগ নাম্বারের সমস্যার কারণে নতুন ভবন হচ্ছে না। অথচ একই মালিকের জমি বিদ্যালয়ের চারপাশে। বিদ্যালয়ের নতুন ভবনের জন্য বরাদ্দ আসলেও অর্থ ছাড় হচ্ছে না জমি জটিলতার কারণে।

জমিদাতা ও ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ বলেন, আমি এক বিঘা জমি দান করেছি বিদ্যালয়ের নামে। এখন জমি সংক্রান্ত কি জটিলতা হয়েছে তারাই ভালো জানে। প্রায় দুই বছর থেকে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি না থাকা এবং বিদ্যালয়ের উন্নয়ন না হবার জন্য কর্তৃপক্ষকে দায়ী করেন।

সদর সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা কানিজ আখতার কাছে বিদ্যালয় সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী না থাকায় প্রধান শিক্ষক এবং সহকারী শিক্ষকদের ফোনে অফিস আসার নির্দেশ দেন।

সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসার লুৎফর রহমান বলেন, জমি সংক্রান্ত সমস্যা থাকায় ভবন করা যাচ্ছে না। সদর এসিল্যান্ডসহ (ভূমি কর্মকর্তা) বিদ্যালয়ের স্থান পরিদর্শন করা হয়েছে। জমি সংক্রান্ত জটিলতা দূর করতে প্রধান শিক্ষককে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। কিন্তু প্রধান শিক্ষককের অবহেলার কারণে বিদ্যালয়ের নাজুক অবস্থা।

(ঢাকাটাইমস/০৬ফেব্রুয়ারি/এলএ/এসএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :