নিপাহ ভাইরাস: সতর্ক না থাকলে বড় বিপদ

সাবরিনা সুলতানা তিশা
 | প্রকাশিত : ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৬:০৯

নিপাহ ভাইরাস হলো এক ধরনের আরএনএ ভাইরাস। বাদুড় ও রুগ্ন শূকরের সংলগ্নতা থেকে মানুষের দেহে এই রোগের সংক্রমণ ঘটে। সংক্রমিত পশু ও মানুষের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের মাধ্যমে এই রোগ ছড়িয়ে পড়তে পারে।

সংক্রমণের শুরুটা সাধারণ জ্বর, কাশি ও মাথাব্যথা দিয়ে হলেও এর পরিণতির সমাপ্তি ঘটতে পারে মৃত্যু দিয়ে। তবে সঠিক সময়ে রোগ নির্ণয় করতে পারলে সহায়ক চিকিৎসার মাধ্যমে এর উপশম সম্ভব। রোগ নির্ণয়ের জন্য রোগের উপসর্গ ও ল্যাবরেটরির পরীক্ষার ওপর নির্ভর করা হয়ে থাকে।

এই রোগটি ১৯৯৯ সালে মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরে প্রথম দেখা যায়। সুঙ্গাই নিপাহ নামক মালয়েশিয়ার একটি গ্রামের নামে এই রোগের নামকরণ করা হয়। সেই সময় এই রোগ যাতে ছড়িয়ে না পড়ে সে জন্য লাখ লাখ শূকরকে মেরে ফেলা হয়।

সম্প্রতি বাংলাদেশে এই রোগের সংক্রমণ ও ভয়াবহতা ভয়ংকর হারে বেড়েছে। সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য বলছে, ২৮টি জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে নিপাহ ভাইরাস।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মতে, নিপাহ ভাইরাস আক্রান্তে মৃত্যুহার ৮০ শতাংশ। এখন পর্যন্ত আক্রান্ত ১২ জনের মধ্যে ১০ জনই মৃত্যুবরণ করেছে।

বাংলাদেশ মুসলিমপ্রধান দেশ হওয়ায় অধিকাংশ মানুষ ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী বাদুড় ও শূকরের সংলগ্নতা এড়িয়ে চলে। তবে এই ভাইরাসটির সূত্রপাত কোথা থেকে হলো এই কৌতূহলের গন্তব্য ঠেকল এদেশের মানুষের অত্যন্ত প্রিয় শীতকালের ঐতিহ্যবাহী খেজুর রসের নিকট। আমাদের দেশে খেজুর রস সংগ্রহের যে পদ্ধতি বিদ্যমান তার সঙ্গে বাদুড়ের সংলগ্নতা সুস্পষ্ট। তাই একথা স্পষ্ট যে, খেজুর রস নিপাহ ভাইরাস সংক্রমণের অন্যতম কারণ।

তবে অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, এই রোগের ভয়াবহতা ছড়িয়ে পড়লেও জনসাধারণের মাঝে কোনো রকম সচেতনতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। সেই সঙ্গে নেই কোনো প্রচারণার কাজও। এমনকি প্রশাসনেরও এ বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণের যথেষ্ট অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে।

করোনাভাইরাস আমাদের দেশের অর্থনীতি, শিক্ষাব্যবস্থা ও সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার মানের ওপর ভয়ংকর প্রভাব ফেলেছে। বাংলাদেশ এখনো করোনাভাইরাসের ভয়াবহ ধকল পুরোপুরি কাটিয়ে উঠতে পারেনি।

এরই মাঝে সূত্রপাত ঘটেছে নিপাহ ভাইরাসের। যেহেতু এটি সংক্রামক রোগ সেহেতু এখনই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে দ্রুত ছড়িয়ে পড়বে এই রোগ। দেশের মানুষ আবারও এক দুর্বিষহ অবস্থার সম্মুখীন হতে পারে এবং হতে পারে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের শিকার। তাই এর ভয়ংকর পরিণতি থেকে বাঁচতে হলে এখনই যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

সর্বপ্রথম জনসাধারণের মধ্যে নিপাহ ভাইরাস ও এর ভয়াবহতা নিয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। পাশাপাশি খেজুর রসের সঙ্গে নিপাহ ভাইরাসের সম্পর্ক সম্বন্ধে সাধারণ মানুষকে অবগত করতে হবে এবং এর প্রতিরোধ হিসেবে খেজুর রস খাওয়া থেকে বিরত থাকার ও আক্রান্ত রোগীদের থেকে দূরত্ব বজায় রাখার পরামর্শ দিতে হবে।

স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং মসজিদ ও মন্দিরসহ সকল ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে সচেতনতামূলক প্রচার চালাতে হবে। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোকে এই ধরনের প্রচারকার্যে এগিয়ে আসতে হবে।

টেলিভিশনে বিভিন্ন রকম সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান প্রচার করা যেতে পারে। প্রতিটি এলাকায় খেজুর রস ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধ করতে হবে। প্রয়োজনে খেজুর রস ক্রয়-বিক্রয় বন্ধের জন্য ক্রেতা ও বিক্রেতাকে আইনের আওতায় এনে জরিমানা ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। প্রশাসনকে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

কারও মধ্যে নিপাহ ভাইরাসের কোনো উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত ল্যাবরেটরি পরীক্ষার মাধ্যমে এর উপস্থিতি সম্পর্কে নিশ্চিত হতে হবে এবং যথাযথ চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে। প্রান্তিক এলাকাগুলোতে স্বল্প মূল্যে নিপাহ ভাইরাস শনাক্তকরণ পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে দরিদ্র শ্রেণির লোকেরাও বঞ্চিত না হয়।

এভাবে জনগণ ও প্রশাসনের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় নিপাহ ভাইরাস সম্পূর্ণভাবে নির্মূল করা সম্ভব হবে।

লেখক: শিক্ষার্থী, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

সংবাদটি শেয়ার করুন

মুক্তমত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা