সালথা-নগরকান্দায় পেঁয়াজ পরিচর্যায় ব্যস্ত কৃষকরা, দাম নিয়ে দুশ্চিন্তা

নুরুল ইসলাম, সালথা-নগরকান্দা (ফরিদপুর)
 | প্রকাশিত : ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১১:৩১

গত বছর পেঁয়াজ চাষাবাদ করে উৎপাদন খরচও ঘরে তুলতে পারেনি ফরিদপুরের সালথা ও নগরকান্দা উপজেলার কৃষকেরা। তারপরেও জীবিকার তাগিদে থেমে নেই। গেল বছরের লোকসান কিছুটা পুষিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর পরিকল্পনা নিয়ে এবারও বিপুল পরিমাণে হালি পেঁয়াজ চাষ করছেন কৃষকেরা। উভয় উপজেলায় প্রায় ১৯ হাজার হেক্টর হালি পেঁয়াজ চাষের লক্ষ্যমাত্র নির্ধারণ করা হয়েছে। আর ৫০৮ হেক্টর জমির মুঁড়িকাটা পেঁয়াজ ইতোমধ্যে উত্তোলন করে ফেলেছে কৃষকেরা। তবে মুঁড়িকাটায়ও উৎপাদন খরচ ওঠাতে পারেনি তারা।

ভোক্তা চাহিদা সম্পন্ন পেঁয়াজ কৃষকদের অর্থকরী মসলা জাতীয় ফসল হওয়ায় এর চাষ করে বছরের অর্থনৈতিক চাহিদা মিটিয়ে থাকেন তারা। জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি হালি পেঁয়াজ চাষ হয়ে থাকে এখানে। কিন্তু গত বছর থেকে শুরু করে বর্তমান পর্যন্ত বাজারে দামে ধস নামায় দুশ্চিন্তা মাথায় নিয়ে পেঁয়াজ চাষ ও পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। কৃষকদের দাবি, গতবারের চেয়ে এবার পেঁয়াজের আশানুরূপ ফলন হওয়ার সম্ভবনা কম, তারপর যদি ন্যায্যদাম না পান, তাহলে তারা পথে বসে যাবেন। পেঁয়াজ চাষ থেকে বাধ্য হয়ে সরে দাড়াবেন তারা।

সোমবার সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হালি পেঁয়াজের সবুজ গাছে ছেয়ে গেছে ফসলের মাঠ। শ্রমিকরা টেঙ্গি হাতে নিয়ে পেঁয়াজ ক্ষেত পরিচর্যা কাজে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। পেঁয়াজের চারার গোঁড়ের দিকে টেঙ্গি দিয়ে কুপিয়ে মাটি আগলা করে দিচ্ছেন। যাতে তারাতারি চারা গাছগুলো থেকে পেঁয়াজের গুটি নামতে শুরু করে। সেই সাথে ক্ষেতের ঘাস ও আবর্জনা পরিস্কার করা হচ্ছে।

সালথার ঘুয়ারকান্দী গ্রামের পেঁয়াজ চাষি রোকমান মোল্যা বলেন, গত বছর আমি ৫ বিঘা জমিতে হালি পেঁয়াজ চাষ করেছি। সব মিলিয়ে প্রতিবিঘা জমিতে ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আর প্রতিবিঘায় পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে ৬০ থেকে ৮০ মণ। উৎপাদিত প্রতিমণ কাচা পেঁয়াজ বিক্রি করেছি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা দরে। কিছু পেঁয়াজ বেশি দামে বিক্রির আশায় ঘরে মজুদ রাখায় শুকিয়ে সেগুলো অনেক খাটতি হয়েছে। বছরের শেষে সেগুলো প্রতিমণ বিক্রি করেছি ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকা দরে। এতে হিসেব করে দেখা গেছে, উৎপাদন খরচও ওঠেনি। বরং উৎপাদন খরচ বাদে বিঘায় অন্তত ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা লোকসান হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, এবারও ৪ বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করছি। ক্ষেতের যে পরিস্থিতি তাতে ফলন তেমন ভাল হওয়ার সম্ভবনা নেই। বিঘায় সর্বোচ্চ ৪০ থেকে ৬০ মণ পেঁয়াজ পেতে পারি। বর্তমান প্রতিমণ পেঁয়াজ বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা। এটা চলমান থাকলে আমরা পথে বসে যাবো। সরকার যদি পেঁয়াজের দাম না বাড়ায় তাহলে, আগামী বছর পেঁয়াজ চাষ করবো না।

নগরকান্দার পুরাপাড়া এলাকার পেঁয়াজ চাষি নুর আলম বলেন, ৩০ হাজার টাকা দিয়ে একবিঘা জমি লিজ নিয়ে এবার আমি মুঁড়িকাটা পেঁয়াজ চাষ করেছি। ১২ হাজার টাকা দিয়ে ১০ মণ ছোট (গুটি) পেঁয়াজ কিনে এক বিঘায় জমিতে রোপন করি। সার-ওষুধ, সেচ, শ্রমিক মজুরি ও বাজারজাতসহ বাবদ সব মিলিয়ে ৫০ হাজার টাকার ওপরে খরচ করে পেঁয়াজ পেয়েছি ৭০ মণ। প্রতিমণ পেঁয়াজ এবার বিক্রি করেছি ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা দরে। এতে হিসেব করে দেখা যায়, একবিঘা জমিতে মুঁড়িকাটা পেঁয়াজ চাষ করে ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা লোকসান হয়েছে।

সালথার পেঁয়াজ ব্যবসায়ী মনির মোল্যা বলেন, প্রতিবছর পেঁয়াজ উত্তোলনের সময় কম টাকায় দেড় থেকে ২০০ মণ পেঁয়াজ কিনে ঘরে রেখে দেই। পরে দাম বাড়লে সেগুলো বিক্রি করি। বেশি লাভের আশায় গত বছরও ১০৭ মণ পেঁয়াজ ৯০ হাজার টাকা দিয়ে কিনে ঘরে মজুদ করে রেখেছিলাম। কিন্তু বছর শেষ হয়ে গেলেও দাম বাড়েনি। পরে ৯০ হাজার টাকার পেঁয়াজ মাত্র ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি। এবার আর পেঁয়াজ কিনবো না। সরকার সব কিছুর দাম বাড়ালেও কৃষকের ফসলের দাম ক্রমেই কমাচ্ছে। পাটের দাম কমার পর পেঁয়াজের দাম কমায় কৃষক ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এটা যেন দেখার কেউ নেই। সালথা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ জীবাংশু দাস বলেন, সারাদেশের মসলা ফসলের অন্যতম যোগানদার সালথার কৃষকেরা। প্রায় দেড় লক্ষ মেট্রিকটন পেঁয়াজ উৎপাদন হয় সালথায়। এবার আমাদের লক্ষমাত্র ১০ হাজার ৩৯৫ হেক্টরের বিপরীতে ১০ হাজার ৯৭০ হেক্টর জমিতে হালি পেঁয়াজ চাষ করা হচ্ছে। ফলনও আশানুরূপ হবে প্রত্যাশা করি। ১৩০ হেক্টর জমিতে মুঁড়িকাটা পেঁয়াজ অর্জন হয়েছে। কিন্তু দাম না পেয়ে চিন্তিত কৃষকরা। তাদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য পেলে পেঁয়াজ চাষে আরও আগ্রহী হয়ে ওঠবে। যা দেশের মোট উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে স্থানীয় চাহিদা মেটানো এবং আমদানী ব্যয় কমাতে সহায়ক হবে।

নগরকান্দা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ তিলোক কুমার বলেন, নগরকান্দায় এবার ৭ হাজার ৩৬৪ হেক্টর জমিতে হালি পেঁয়াজের চাষ হচ্ছে। রোগ বালাই নিয়ন্ত্রণে ও আবহাওয়া ভাল থাকলে এবার পেঁয়াজের গড় ফলন আশানুরূপ হবে। আর ৩৭৮ হেক্টর জমিতে মুঁড়িকাটা পেঁয়াজ অর্জন হয়েছে। পুরো উপজেলায় এবার প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার মেট্রিকটন পেঁয়াজ উৎপাদন হবে। পেঁয়াজের বাজার মূল্য কম থাকায় কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দাম ভাল পেলে আরও অধিক পেঁয়াজ উৎপাদন সম্ভব হবে ভবিষ্যতে।

(ঢাকাটাইমস/২৮ফেব্রুয়ারি/এআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :