ভুলভাবে ডেলিভারিতে দুই নবজাতকের মৃত্যু, হাসপাতালের পরিচালককে মারধর করে পুলিশে সোপর্দ

চাঁদপুর প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ০৯ মার্চ ২০২৩, ১০:৪৩

চাঁদপুরে হাসপাতালের প্রসূতি মায়ের পেটের ওপর দিয়ে জোরে চাপ প্রয়োগ করে প্রসব করানো ও ভুল ইনজেশন পুশ করার কারণে একই হাসপাতালে প্রায় একই সময়ে দুই নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনায় হাসপাতালের পরিচালক মোরশেদ আলমকে মারধর করে চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশে সোপর্দ করেছেন নিহত নবজাতকদের স্বজনরা।

বুধবার সন্ধ্যা ৭টা থেকে ৮টার মধ্যে চাঁদপুর শহরের আব্দুল করিম পাটওয়ারী সড়কের এলজিইডি সংলগ্ন স্থানের চাঁদপুর জেনারেল (প্রা:) হাসপাতালের ২য় ও চতুর্থ তলায় এ ঘটনা ঘটে।

ঘটনার পর পর হাসপাতালের চিকিৎসক অন্য পরিচালকরা পালিয়েছে বলে হাসপাতালের অন্য দায়িত্বরত স্টাফরা জানিয়েছেন। খবর পেয়ে রাত ১০টার দিকে চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।

রাত ৮টার দিকে সিজারের পর হাসপাতালের হাসপাতালের চতুর্থ তলায় চাঁদপুর শহরের পুরাণ বাজার ১নং ওয়ার্ডের বাকালী পট্টির ভ্যান চালক শাহজাহান সর্দারের তিন দিন বয়সী নবজাতক চিকিৎসা সেবা না পেয়ে মৃত্যু বরণ করে। আর রাত সাড়ে ৮টার দিকে সিনিয়র নার্স আকলিমা ও ওটি ইনচার্জ মোরশেদ আলমের নরমাল ডেলিভারির সময় স্থানীয় বকাউল বাড়ী রোডের সন্তু বেপারীর নবজাতকের মৃত্যু হয়।

ভ্যান চালক শাহজাহান বলেন, সোমবার (৬ মার্চ) রাত ৮টায় এই হাসপাতালে তার স্ত্রী সুফিয়া বেগম এর সিজারের মাধ্যমে কন্যা শিশুর জন্ম হয়। জন্মের পর থেকে সুস্থ্যই ছিল। বুধবার (৮ মার্চ) দুপুরে বাচ্চা অসুস্থ হয়ে পড়লে কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়। তারা চিকিৎসক দেখিয়ে বলছে পেটে গ্যাস জমেছে। ওষুধ দেয়ার পরও সুস্থ হয়নি। পরে রাত সাড়ে ৭টায় ডাক্তার গফুরের উপস্থিতিতে নার্স ইনজেকসান পুশ করার পর নবজাতক মারা যায় বলে শিশুর ফুফু শাহনাজ বেগম এ প্রতিনিনিধি জানিয়েছেন।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, শুধুমাত্র আমার শিশুরই মৃত্যু হয়নি। আমার স্ত্রীর অবস্থাও খারাপ। তার ব্যথার যন্ত্রণায় চিৎকার দিলেও নার্সদেরকে পাওয়া যায়নি। তাদের ফার্মেসী বন্ধ থাকে, কোন ওষধ পাওয়া যায় না।

শাহাজহানারে আত্মীয় জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, সুফিয়ার প্রথম সন্তানের পর দুটি সন্তান জন্মের পর মারা যায়। এটি চতুর্থ সন্তান। অসহায় ও গরীব হওয়া সত্তে¡ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের পরামর্শে সিজার করে। কিন্তু তাদের অবহেলার কারণে বাচ্চার মৃত্যু হয়েছে। তারা বলেন হাসপাতাল না, কসাইখানা খুলে বসেছে। কোন চিকিৎসক নাই, নার্স নাই। তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।

অপর নবজাতকের পিতা সন্তু বেপারী বলেন, আজকে দুপুরে আমার স্ত্রী হীরা আক্তারকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছি। আমার সন্তান তারা ইচ্ছা করে মেরেছে। আমি তাদেরকে বলেছি নরমাল ডেলিভারিতে সমস্যা হলে সিজার করেন। তাদের হাসপাতালে কোন চিকিৎসক নাই, তারা কোন চিকিৎসক ডেকেও আনে না। হাসপাতালে থাকা আমার স্বজনরা বলেছে পেটের মধ্যে জোরে চেপে ধরে আবার সন্তানকে তারা হত্যা করেছে।

হীরা আক্তারের বোন জামাতা সফিকুর রহমান বলেন, বিয়ের ১১ বছর পর এই প্রথম সন্তান। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সঠিক সেবা দিতে না পারায় নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে। মা’ হীরা এখনো জানেন না তার সন্তান মৃত। তাকে জানানো হয়নি। খুবই কষ্ট ও বেদনা দায়ক ঘটনা।

হাসপাতালের পরিচালক ওটি ইনচার্জ মোরশেদ আলম স্বীকার করেন, তিনি ও নার্স আকলিমা হীরার নরমাল ডেলিভারি করেছেন। কিভাবে মৃত্যু হয়েছে এই বিষয়ে আর কিছু বলতে চাননি।

চাঁদপুর সদর মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. মোস্তফা জানান, খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। শিশুদের অভিভাবকের সাথে কথা বলেছি। তারা আমাদেরকে ঘটনা জানিয়েছে। পরিচালক মোরশেদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাকে আটক করে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। ঘটনা তদন্ত করে এবং অভিযোগের ভিত্তিতে পরবর্তী আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

চাঁদপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ আবদুর রশিদ বলেন, ঘটনাটি আমি জানতে পেরেছি। অভিভাবকদের সাথে কথা বলা হবে এবং তাদের আভিযোগের ভিত্তিতে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

(ঢাকাটাইমস/৯মার্চ/এআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :