বান্দরবানে সেনাদলের ওপর কুকি-চিন সন্ত্রাসীদের গুলি, ওয়ারেন্ট অফিসার নিহত

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ১৩ মার্চ ২০২৩, ১৭:২৪

বান্দরবানের রুয়াংছড়ির দুর্গম পাহাড়ে সেনাবাহিনীর টহল দলের ওপর কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মির (কেএনএ) অতর্কিত গুলিবর্ষণে নাজিম উদ্দিন নামে সেনাবাহিনীর এক মাস্টার ওয়ারেন্ট অফিসারের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়াও এই ঘটনায় আহত হয়েছেন দুই সেনাসদস্য। তারা চিকিৎসাধীন আছেন।

রবিবার দুপুরে এ হামলার ঘটনা বলে সোমবার আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) থেকে জানানো হয়েছে।

আইএসপিআর জানায়, সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে জাতীয় শিশু দিবস-২০২৩ ও মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে রবিবার দুপুরে দুর্গম পাহাড়ে মা ও শিশুদের বিনামূল্যে স্বাস্থ্য সেবা দিতে যাওয়া দলের নিরাপত্তায় নিয়োজিত সেনাসদস্যদের ওপর কেএনএ’র সশস্ত্র সন্ত্রাসী দল অতর্কিত গুলি চালায়। এ ঘটনায় সেনাবাহিনীর মাস্টার ওয়ারেন্ট অফিসার নাজিম উদ্দিন গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান। গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন দুই সেনা সদস্য। বর্তমানে তারা চিকিৎসাধীন আছেন।

আইএসপিআর জানিয়েছে, মাস্টার ওয়ারেন্ট অফিসার নাজিম উদ্দিন বিগত ৩০ বছর অত্যন্ত সততা, নিষ্ঠা এবং পেশাদারিত্বের সঙ্গে সেনাবাহিনীর বিভিন্ন পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করেছেন। তার বাবা মৃত শমসের আলী। তিনি রংপুরের ঘাঘটপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। তার মৃত্যুতে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।

বিচ্ছিন্নতাবাদী ভাবধারায় বিশ্বাসী কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মি নামক এই সশস্ত্র সন্ত্রাসী দলটি নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র মতো একটি জঙ্গি গোষ্ঠীকে বান্দরবানের পাহাড়ি এলাকায় অর্থের বিনিময়ে অস্ত্র প্রশিক্ষণ দিচ্ছে।

পাহাড়ি এলাকার অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর উন্নয়নের জন্য সরকার নির্মিতব্য বান্দরবানের থানচি সড়ক সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হচ্ছে। সরকারের এই উন্নয়নমূলক কার্যক্রমকে প্রতিহত করতে কেএনএ সন্ত্রাসী দলটি সড়ক নির্মাণ কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত অসামরিক ঠিকাদার, মালামাল সরবরাহকারী এবং শ্রমিকদের কাছ থেকে প্রথমে চাঁদা দাবি করে। পরবর্তীতে কাজ বন্ধ করার হুমকি দেয়। কিন্তু সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে পরিচালিত এই কাজ চলমান থাকায় কেএনএ সন্ত্রাসী দল গেল শনিবার ১২ জন শ্রমিককে অপহরণ করে।

আইএসপিআর জানায়, এদের মধ্যে একজন শ্রমিক গুলিবিদ্ধ হন এবং চারজন শ্রমিককে এখনও কেএনএ জিম্মি করে রেখেছে। অবশিষ্ট সাত শ্রমিককে মুক্তিপণের বিনিময়ে ছেড়ে দিলেও তাদেরকে সেনাবাহিনীর সঙ্গে সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের কাজ না করার জন্য হুমকি দেয়। আর ১২ মার্চ কেএনএ সেনাবাহিনীর টহল দলের ওপর গুলিবর্ষণও করে।

উল্লেখ্য, ৮ ফেব্রুয়ারি বান্দরবানের তিন উপজেলায় যানবাহন চলাচল বন্ধের জন্য সশস্ত্র সন্ত্রাসী দল কেএনএ স্থানীয় পরিবহন মালিক সমিতিকে হুমকি দিয়ে নোটিশ জারি করে। কেএনএ সদস্যদের এসব সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কারণে রবিবার ওই এলাকায় অনির্দিষ্টকালের জন্য ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করে জেলা প্রশাসন।

এছাড়াও কেএনএ-এর নির্যাতনে স্থানীয় বিভিন্ন পাহাড়ি সম্প্রদায়ের জনগোষ্ঠী ঘরছেড়ে অন্যত্র বসবাস করছে। কেএনএ সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর চাঁদাবাজি, মাদকের চোরাচালান, অপহরণ ও নৃশংস হত্যাকাণ্ডের কারণে বর্তমান সরকারের নানান উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড, বেসরকারি বিনিয়োগ ও পর্যটন শিল্প বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। কেএনএ-এর এই অপতৎপরতা দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার পাশাপাশি বিশ্ব দরবারে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করছে এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের বিরাজমান শান্তি-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে বিঘ্নিত করছে।

ঢাকাটাইমস/১৩মার্চ/এসএস/ইএস

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

জাতীয় এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :