উত্তাল রাবি এখন শান্ত, আরএমপি কমিশনারের পেশাদারিত্বে সম্ভাব্য সংঘাত থেকে রক্ষা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস
  প্রকাশিত : ১৩ মার্চ ২০২৩, ২২:৩৮| আপডেট : ১৪ মার্চ ২০২৩, ০৯:৩৪
অ- অ+

শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের সংঘর্ষে গত শনিবার রাতে রণক্ষেত্রে পরিণত হওয়া রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) এখন শান্ত। ক্যাম্পাসে ফিরছেন শিক্ষার্থীরা। আগামীকাল মঙ্গলবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) থেকে ক্লাস-পরীক্ষাসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম যথারীতি শুরু হচ্ছে।

এদিকে এ সংঘর্ষে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) সাতজন সদস্য আহত হওয়ার পরেও পুলিশ ধৈর্যসহ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও মোকাবিলা করেছে। মারমুখী কোনো অ্যাকশনে না গিয়ে কৌশলে নিয়ন্ত্রণ করেছে গোটা পরিস্থিতি। যে দক্ষতার প্রশংসা এখন সেখানকার মানুষের মুখে মুখে।

শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও স্থানীয়রা বলছেন, ‘রাবির ঘটনা আরও ভয়াবহ পরিস্থিতির দিকে মোড় নেওয়ার আগেই পুলিশের ধৈর্য-দক্ষতা ও পেশাদারিত্বে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ফিরে এসেছে। বড় ধরনের সম্ভাব্য সংঘাত থেকে রক্ষা পেয়েছে গোটা রাজশাহী। রেহাই মিলেছে প্রাণহানি ও রক্তপাত থেকেও। এ ঘটনা কোনো প্রাণহানির দিকে না গড়ানোর পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছেন রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) কমিশনার মো. আনিসুর রহমান। তার ধৈর্যশীলতা, নেতৃত্বগুণ ও পেশাদারিত্বই এত বড় ঘটনাকে খুব দ্রুত শান্তিময় পরিসমাপ্তির দিকে নিয়ে গেছে।’

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার সূত্রপাত ঘটে গত শনিবার রাবির এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে বাস হেলপার-কন্ডাক্টরের ভাড়া নিয়ে তর্ক-বিতর্কের জের ধরে। এমন একটি ভিডিও ক্লিপও ঢাকা টাইমসের হাতে এসেছে। ওই ভিডিওতে দেখা গেছে, ভাড়া নিয়ে তর্কের জের ধরে বাসের ভেতর ধস্তাধস্তি হওয়ার চিত্র।

এ বিষয়ে আরএমপির অতিরিক্ত উপকমিশনার (মিডিয়া) মো. রফিকুল আলম ঢাকা টাইমসকে বলেন, রাবির এক শিক্ষার্থী গ্রামের বাড়ি বগুড়া থেকে ‘মোহাম্মদ’ নামে বাসে রাবিতে আসছিলেন। বাসে ভাড়া নিয়ে বাসকর্মীদের সঙ্গে তার তর্ক হয়। পরে তিনি তার সহপাঠীদের বাসে মারধরের শিকার হওয়ার কথা জানালে শিক্ষার্থীরা বিনোদপুর গেটে বাসটিকে আটকায় এবং বাসকর্মীদের মারধর করে। এ সময় বিনোদপুর বাজারের কিছু ব্যবসায়ী ছাত্রদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।

এডিসি রফিকুল বলেন, ‘সঙ্গে সঙ্গে কমিশনার স্যারের নির্দেশনায় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। কমিশনার স্যার ধৈর্যসহ পরিস্থিতি মোকাবিলা ও জানমালের ক্ষতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখতে সকল পুলিশ সদস্যকে নির্দেশনা দেন। কমিশনার স্যারের নেতৃত্বগুণ, দক্ষতা, উত্তাল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা ও অসাধারণ পেশাদারিত্বের কারণে খুব দ্রুত বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি হওয়াসহ ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি বা বড় সংঘাতময় পরিণতি থেকে রক্ষা মিলেছে বলে আমি মনে করি।’ তিনি বলেন, ‘সংঘর্ষ আরও ছড়িয়ে পড়তে পারত, তবে স্যারের অসাধারণ দক্ষতায় দ্রুত সময়ে একটি শান্তিপূর্ণ পরিসমাপ্তি ঘটেছে।’

এডিসি বলেন, সেখানে আমাদের একটি ফাঁড়ি ও একটি ক্যাম্প রয়েছে। এতে কোনো অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এ বিষয়ে একটি ভুল তথ্য ছড়িয়ে পড়েছে। আসলে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে রাবির একটি গার্ডরুমে, যেখানে বসে রাবির নিরাপত্তাকর্মীরা পাহারা দিয়ে থাকে। কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যরা সেখানে মাঝেমধ্যে বসেন। তবে ওটি কোনো পুলিশ ফাঁড়ি বা ক্যাম্প নয়।

এ ঘটনায় এ পর্যন্ত দুটি মামলা হয়েছে জানিয়ে এডিসি রফিকুল বলেন, একটি মামলা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দায়ের করেছে এবং আরেকটি মামলা পুলিশ বাদী হয়েছে দায়ের করেছে।

রাবি ও আশপাশের এলাকায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ফিরে এসেছে জানিয়ে এডিসি রফিকুল সোমবার রাতে ঢাকা টাইমসকে আরও বলেন, ‘বিকালে (সোমবার) রাবি ভিসির সঙ্গে শিক্ষার্থীদের বৈঠক হয়েছে। ফলপ্রসূ হয়েছে বৈঠকের ফলাফল। মঙ্গলবার থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাভাবিকভাবে ক্লাস-পরীক্ষাসহ সব কার্যক্রম চলবে বলে সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে।’

সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা করেছে। সংঘর্ষের সময় সাতজন পুলিশ সদস্য আহত হওয়ায় নগরীর মতিহার থানায় এ মামলা করা হয়। মতিহার থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আমানত উল্লাহ বাদী হয়ে রবিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে এ মামলা করেন। তবে মামলার এজাহারে কারো নাম উল্লেখ নেই। ২৫০-৩০০ জন অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে।

এদিকে সংঘর্ষের সময় দুই শতাধিক শিক্ষার্থীকে আহত করার অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি মামলা করা হয়েছে রবিবার বিকালে। রাবি রেজিস্ট্রার আবদুস সালাম বাদী হয়ে নগরীর মতিহার থানায় অজ্ঞাতনামা ৫০০ জনকে আসামি করে এই মামলা করেন। মামলা হওয়ার পর পুলিশ তসলিম আলী ওরফে পিটার (৪৫) নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বিনোদপুর বাজারের বাসের চেইন মাস্টার।

এদিকে ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। উপ-উপাচার্য অধ্যাপক হুমায়ুন কবীরকে প্রধান করে এই কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক অধ্যাপক প্রদীপ কুমার পাণ্ডে সোমবার সকালে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

অধ্যাপক প্রদীপ কুমার জানান, সাবেক প্রক্টর ও রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক তারিকুল হাসান এবং সহকারী প্রক্টর আরিফুর রহমানকে কমিটির সদস্য করা হয়েছে।

এর আগে, গত শনিবার সন্ধ্যায় স্থানীয়দের সঙ্গে রাবি শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে ২০০ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন বলে দাবি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের। এই ঘটনার জেরে রবিবার দিনভর শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করে। তারা রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়ক ও রেলপথ অবরোধ করেন। পরে পুলিশ তাদের বুঝিয়ে শান্ত করেন এবং শিক্ষার্থীরা অবরোধ তুলে নেন।

(ঢাকাটাইমস/১৩মার্চ/কেএম)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
আবুল বারকাত গ্রেপ্তার
শতভাগ পাস, প্রায় সবাই জিপিএ-৫: ক্যাডেট কলেজের উজ্জ্বল সাফল্য
৩ থেকে ১০ জুলাই: যৌথ বাহিনীর অভিযানে সারাদেশে ৩৪৫ অপরাধী আটক
মুক্ত বাংলা শপিং কমপ্লেক্সে সেনাবাহিনীর অভিযান: শীর্ষ সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজ আটক
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা