বাস্তবায়ন করতে হবে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ও আদর্শ

মো. খসরু চৌধুরী সিআইপি
 | প্রকাশিত : ১৯ মার্চ ২০২৩, ১০:৩৬

হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের দিয়ে গেছেন বাংলাদেশ নামের একটি জাতিরাষ্ট্র ও ভাষারাষ্ট্র। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি জাতিকে একটি পতাকা দিয়েছেন, একটি স্বাধীন ভূখণ্ড দিয়েছেন এবং বিশ্বসভায় বাঙালি জাতিকে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করে গেছেন। তাঁরই দেখানো পথ ধরে দেশ আজ এগিয়ে চলেছে। নেতৃত্ব দিচ্ছেন তাঁরই সুযোগ্য কন্যা চারবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধু দেশ গড়ার কাজে খুব বেশি সময় হাতে পাননি। স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির মদদে কিছু বিশ্বাসঘাতক সেনা সদস্য তাঁকে সপরিবারে হত্যা করেছিল। জাতির মুখে কালিমা লেপন করেছিল। বিদেশে থাকায় এই হত্যাকাণ্ড থেকে রক্ষা পেয়েছিলেন তাঁর দুই কন্যা।

আমাদের সৌভাগ্য, বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা নিজের জীবনের মায়া না করে স্বাধীনতার অর্জনগুলো রক্ষায় যথাসময়ে এগিয়ে এসেছিলেন। দেশকে আবার বঙ্গবন্ধুর প্রদর্শিত পথে এগিয়ে নিতে প্রাণপণ লড়াই করে চলেছেন। তাঁর সেই চেষ্টা সফল হয়েছে। নানা ক্ষেত্রেই বাংলাদেশ ধারাবাহিকভাবে এগিয়ে চলেছে। এ সবই হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর প্রদর্শিত পথে প্রত্যাবর্তনের কারণে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আজ আমাদের অস্তিত্বের অংশ। নিজের অস্তিত্বের প্রয়োজনেই আমাদের বঙ্গবন্ধুর আত্মত্যাগকে জানতে হবে। তাঁর দেখানো পথে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। অস্তিত্ববিরোধী যেকোনো ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সজাগ থাকতে হবে। সেই সঙ্গে নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দিতে হবে তাঁর আদর্শ। বাস্তবায়ন করতে হবে তাঁর স্বপ্ন, তাঁর আদর্শ।

একজন ব্যক্তি কীভাবে আপন মহিমায় ইতিহাসের মহানায়ক হয়ে উঠতে পারেন বঙ্গবন্ধু তারই উদাহরণ। পদ্মা মেঘনা যমুনা বুড়িগঙ্গা পাড়ের মানুষের পরিচিতি ছিল সেই বৈদিক যুগেও বীরের জাতি হিসেবে। গ্রিক বীর আলেকজান্ডারের সময়ও সমীহ করা হতো এ জাতির সাহস ও বীরত্ব। তারপর ঘনিয়ে আসে অন্ধকার। পরাধীনতার শিকলে আবদ্ধ হয় এ দেশের মানুষ। সেই অভিশপ্ত অধ্যায়ের অবসান ঘটে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে।

দুনিয়ার ইতিহাসে তাঁর মতো জনপ্রিয় কোনো নেতার অভ্যুদয় হয়নি। ১৯৭০-এর নির্বাচনে বাংলাদেশের দুটি আসন বাদে সব কটিতে জয়ী হয় বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ। কিন্তু পাকিস্তানের সেনাপতি শাসকরা বঙ্গবন্ধুর হাতে ক্ষমতা ছাড়তে রাজি হয়নি। এ অন্যায়ের প্রতিবাদ শুরু হয় বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে। ১৯৭১ সালের ৩ থেকে ২৫ মার্চ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর অঙ্গুলি হেলনে পরিচালিত হয় পুরো বাংলাদেশ। সেনানিবাস ছাড়া কোথাও পাকিস্তানি শাসনের অস্তিত্ব ছিল না। ’৭১ সালের ২৫ মার্চ গভীর রাতে পাকিস্তানি সেনারা বাঙালি হত্যায় মেতে উঠলে বঙ্গবন্ধু ২৬ মার্চের সূচনালগ্নে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। পাকিস্তানি হানাদাররা বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করে। তবে আগেভাগে তাঁর দেওয়া নির্দেশনা অনুযায়ী বাঙালি জাতি ঝাঁপিয়ে পড়ে মুক্তিযুদ্ধে। পাকিস্তানি দখলদাররা মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর যৌথ কমান্ডের কাছে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয় ’৭১-এর ১৬ ডিসেম্বর। বাংলাদেশ শত্রুমুক্ত হওয়ার ২৪ দিন পর পাকিস্তানি কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে স্বদেশে ফেরেন বঙ্গবন্ধু। দেশ পুনর্গঠনে নেমে পড়েন শূন্য অবস্থা থেকে। কিন্তু ’৭৫ সালের ১৫ আগস্ট পাকিস্তানি চরদের হাতে নিহত হন ইতিহাসের মহানায়ক। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়ারই চেষ্টা হয়। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর অজেয় আদর্শ পরাভূত করতে পারেনি ’৭৫-এর খুনিরা। বঙ্গবন্ধু আরও উজ্জ্বলভাবে প্রতিস্থাপিত হয়েছেন বাঙালির হৃদয়ে। বাঙালির হৃদয়ে বঙ্গবন্ধু আছেন বলেই ফিনিক্স পাখির মতো ভস্ম থেকে উড়াল দেওয়ার সাহস দেখাচ্ছে ১৮ কোটি মানুষের এ জাতি।

বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা আজ দৃশ্যমান। এক সময় বাংলাদেশকে বলা হতো তলাবিহীন ঝুড়ি। যারা সে সময় তলাবিহীন ঝুড়ি বলতো, আজ তারাই দেশের উন্নয়ন নিয়ে প্রশংসা করেন। এটাই আওয়ামী লীগের অর্জন। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নারী নেত্রীদের মধ্যে আইকন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, চীনসহ সকলের সাথে সুসম্পর্ক রেখে দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা অব্যাহত রেখেছেন। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০৮ সালে জাতীয় নির্বাচনে যে স্বপ্ন দেশের মানুষকে দেখিয়ে ছিলেন, আজকে সেই স্বপ্ন বাস্তবে রূপ লাভ করেছে।

মহামারি করোনা পরিস্থিতিতে মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষা থেকে শুরু করে চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে তিনি নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন এবং করোনা মহামারির বিস্তার নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়েছেন। একই সঙ্গে দরিদ্র মানুষকে ত্রাণ সহযোগিতার পাশাপাশি জীবিকা ও অর্থনীতি বাঁচাতে নিয়েছেন কার্যকরী পদক্ষেপ।

শেখ হাসিনা সরকার টানা তৃতীয় মেয়াদসহ চতুর্থবার দেশ পরিচালনা করছে। দেশবাসী আজ এর সুফল পাচ্ছে। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি, একাত্তরের ঘাতক যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকার্য সম্পন্ন করা, সংবিধান সংশোধনের মধ্য দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পুনঃপ্রতিষ্ঠা, ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা বিরোধ নিষ্পত্তি ও সমুদ্রবক্ষে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে ব্লু ইকোনমির নতুন দিগন্ত উন্মোচন, বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট সফল উৎক্ষেপণের মধ্য দিয়ে মহাকাশ জয়, সাবমেরিন যুগে বাংলাদেশের প্রবেশ, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ, মেট্রোরেল, পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন, কর্ণফুলী টানেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, নতুন নতুন উড়াল সেতু, মহাসড়কগুলো ফোর লেনে উন্নীত করা, এলএনজি টার্মিনাল স্থাপন, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, মাথাপিছু আয় দুই হাজার ২২৭ মার্কিন ডলারে উন্নীত, মাত্র ৩.৫ বিলিয়ন থেকে রিজার্ভ ৪৮.০৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত, দারিদ্র্যের হার হ্রাস, মানুষের গড় আয়ু প্রায় ৭৩ বছরে উন্নীত, ২৫ হাজার ২৩৫ মেগাওয়াটে উন্নীত ও প্রায় শতভাগ মানুষকে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আনা, যুগোপযোগী শিক্ষানীতি প্রণয়ন, সাক্ষরতার হার ৭৫.৬০ শতাংশে উন্নীত করা, বছরের প্রথম দিনে প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত সব শিক্ষার্থীর হাতে বিনা মূল্যে নতুন বই পৌঁছে দেওয়া, মাদ্রাসা শিক্ষাকে মূলধারার শিক্ষার সঙ্গে সম্পৃক্ত করা ও স্বীকৃতি দান, মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন, প্রতিটি জেলায় একটি করে সরকারি/বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের উদ্যোগ, নারীনীতি প্রণয়ন, ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণ, ফোরজি মোবাইল প্রযুক্তির ব্যবহার চালুসহ অসংখ্য ক্ষেত্রে কালোত্তীর্ণ সাফল্য অর্জন করেছে বাংলাদেশ।

লেখক: পরিচালক, বিজিএমইএ; শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ; চেয়ারম্যান, নিপা গ্রুপ ও কেসি ফাউন্ডেশন।

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :