ওমরাহযাত্রী বহনকারী বাসদুর্ঘটনা: চাঁদপুরে নিহতের দুই পরিবারে চলছে মাতম

সৌদি আরবের আসির প্রদেশে ওমরাহ যাত্রী বহনকারী বাস দুর্ঘটনায় নিহত ১৮ বাংলাদেশির মধ্যে চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলার তুষার ও ফরিদগঞ্জের রনি রয়েছেন। রনি ছিলেন নববিবাহিত। দুই পরিবারে চলছে মাতম। এদের মধ্যে রনির প্রথম স্ত্রী তাকে তালাক দেওয়ায় সে দুই মাসের ছুটিতে গত ৫ ফেব্রুয়ারি দেশে আসেন এবং ৭ তারিখে বিয়ে করেন। তার নববধূ স্ত্রীর নাম শিমু আক্তার (২৮)। তার প্রথম স্ত্রী এক সন্তান রেখে তাকে তালাক দিয়ে চলে গেছেন।
নববিবাহিত সীমা এখন স্বামীকে হারিয়ে দিশেহারা হয়ে গেছেন। কেঁদে কেঁদে বলছেন ‘আমি এখন কী নিয়ে বেঁচে থাকবো।’
একই দুর্ঘটনায় নিহত তুষার (২০) মতলব দক্ষিণের খাদেরগাঁও ইউনিয়নের ঘিলাতলী গ্রামের ছেলে। বৃহস্পতিবার দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান ওই ইউপি চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন।
গত ২৬ মার্চ সৌদি আরবে ওমরা হজ পালন করতে যান তুষার। তিনি মনির মজুমদারের প্রথম সংসারের ২ ছেলে ও ১ মেয়ের মধ্যে বড় সন্তান।
ঘিলাতলী গ্রামের ইব্রাহীম ঢালী জানান, গত ১১ মাস আগে তুষার কাজের জন্য সৌদিতে যান। সেখান থেকেই তিনি ওমরা করতে মক্কা যাচ্ছিলেন। আর এরমধ্যেই এই দুর্ঘটনার সংবাদ পেলাম।
স্থানীয়রা বলেন, তুষারের বাবা ২য় বিয়ে করার পর থেকে তার পরিবারের হাল তিনি নিজেই কাঁধে তুলে নিয়ে ছিলেন। একসময় তিনি নারায়নপুর বাজারের মুদি দোকানে কর্মচারী হিসেবে কাজ নেন। পরে তার মা কিস্তিতে টাকা তুলে তাকে সৌদি আরবে পাঠান। বর্তমানে এ দুর্ঘটনায় পুরো পরিবারটির জন্য কালো অধ্যায় শুরু হয়ে গেল।
এ বিষয়ে মতলব ৩নং খাদেরগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন হাওলাদার বলেন, তুষারের মৃত্যুর খবর শুনে তাদের বাসায় গিয়েছি এবং তাদের পরিবারকে সান্ত্বনা দিয়েছি। সে খুব ভালো ছেলে ছিল। আমি তুষারের আত্মার মাগফেরাত ও শান্তি কামনা করছি।
বৃহস্পতিবার (৩০ মার্চ) সকালে রনির বাড়িতে সরেজমিনে দেখা যায়, আহাজারি করছেন তার স্ত্রী শিমু আক্তার (২৮)। বাবা আব্দুল লতিফ (৭০) ছেলে হারিয়ে অঝোরে কেঁদেই যাচ্ছেন। ছোট ভাইয়ের মর্মান্তিক মৃত্যুর কথা মনে করে বড় বোন হাজেরা খাতুন (৪৫) বারবার মূর্ছা যাচ্ছিল।
নিহত রনির ছোট ভাই হোসাইন আহমেদ জসিম জানান, চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জে তাদের পৈত্রিক গ্রামের বাড়ি। টঙ্গীর বড় দেওড়া জামে মসজিদ রোডে বাড়ি করে দীর্ঘদিন যাবৎ তারা সপরিবারে বসবাস করে আসছেন। তিন ভাই, এক বোনের মধ্যে রনি দ্বিতীয়। রনি দেওড়া এলাকায় টেইলার্স ব্যবসা ও মুদি দোকানের কাজ করতেন। ব্যবসায় লোকসান হওয়ার পর পাড়ি জমান অর্থ উপার্যনের জন্য সৌদি আরবে। বিগত ৮ বছর যাবৎ সৌদি আরবে একটি কোম্পানিতে চাকরি করেন। গত দুই মাস আগে ছুটি নিয়ে দেশে এসে ছিলেন। ছুটি কাটিয়ে গত শনিবার সৌদি আরবের উদ্দেশে দেশ ত্যাগ করেন।
হোসাইন আহমেদ জসিম আরও বলেন, ‘আগামী ১ এপ্রিল তার কর্মস্থলে যোগ দেওয়ার কথা ছিল। চাকরিতে যোগ দেওয়ার আগে হাতে বেশ কিছুদিন সময় থাকায় ওমরা হজ পালন করে সবার জন্য দোয়া করার কথা ছিল ভাইয়ার। সেই আশা আর পূরণ হলো না তাঁর। সরকার তাঁর লাশ দ্রæত দেশে ফিরিয়ে আনবে বলে আশা করছি।’
রনির ছোট বোন সীমা আক্তার বলেন, রনি দাদা দুই মাসের ছুটিতে ফেব্রুয়ারি মাসের ৫ তারিখে বাসায় আসেন ও ৭ তারিখে বিয়ে করেন। তার প্রথম স্ত্রী এক সন্তান রেখে তাকে তালাক দিয়ে চলে গেছে। দাদার প্রথম পক্ষের একমাত্র ছেলে ইসমাইল হোসেন (১১) স্থানীয় এরাবিক ইনস্টিটিউট নামের একটি মাদ্রাসায় তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছেদের পর তার ছেলে ইসমাইল দাদার সঙ্গেই বসবাস করছে। এ অবস্থায় ছুটিতে এবার বাড়ি এসে শিমু আক্তারকে বিয়ে করেছিল রনি।
(ঢাকাটাইমস/৩০মার্চ/এআর)

মন্তব্য করুন