পদ্মা সেতুতে পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচল শুরু, প্রথম যাত্রী রেলমন্ত্রী

প্রমত্তা পদ্মার বুকে নির্মিত সেতুতে পরীক্ষামূলক ট্রেন চলল। এর মাধ্যমে পূরণ হলো দুই পারের মানুষের আরেকটি স্বপ্ন। আর এই ট্রেনের প্রথম যাত্রী হিসেবে পদ্মা সেতু পার হলেন রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন।
মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় একটি গ্যাং কার (পরিদর্শন ট্রেন) ভাঙ্গা থেকে মাওয়ার উদ্দেশে যাত্রা করে। এর পর ছয় বগির একটি ট্রেন পদ্মা সেতু হয়ে মাওয়ায় যাচ্ছে। ট্রেনটি আবার সেতু পার হয়ে মাওয়া থেকে ভাঙ্গা জংশনে ফিরবে।
এর আগে গতকাল থেকেই ভাঙ্গা স্টেশন থেকে শিবচরের ২ স্টেশন হয়ে পদ্মা রেল সেতু হয়ে মাওয়া পর্যন্ত দেখা যায় সাজ সাজ রব। উৎসবমুখর পরিবেশ। ৪২ দশমিক ২ কিলোমমিটার অংশে পরীক্ষামূলক ট্রেন চলবে, পাড়ি দিবে প্রথম বারের মতো পদ্মা রেল সেতু, এই আনন্দে উৎফুল্ল ছিল সবাই।
রেল সেতু কর্তৃপক্ষের তথ্য মতে, মূল সেতুর ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটারসহ দুইপাশের ভায়াডাক্ট মিলিয়ে পাথরবিহীন ৬ দশমিক ৬৮ কিলোমিটার পদ্মা রেল সেতুর কাজ সম্পূর্ন হয় গত (২৭ মার্চ) বুধবার।
গত বছরের ২০ আগষ্ট মূল সেতুতে রেল লাইন বসানোর কাজ শুরু হয়। ৪২ দশমিক ২ কিলোমমিটার রেলপথে পাথরবিহীন রেলপথ ১৩ দশমিক ৩ কিলোমিটার ও ২৮ দশমিক ৯ কিলোমিটার পাথরযুক্ত রেললাইন। এই রেলপথে ১টি জংশন, ৪টি স্টেশন যাবে রেল। বেলা ১২ টার দিক একটি গ্যাংকার প্রথম যাবে এরপর ৭ বগির একটি ট্রেন যাবে পদ্মা রেল সেতু হয়ে মাওয়া। এর যাত্রী হবে রেল মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন, চীফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী, মুজিবুর রহমান নিক্সন চৌধুরী এমপিসহ প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের তথ্য মতে, প্রকল্পের মোট ১৭২ কিলোমিটার লেভেল ক্রসিংবিহীন রেলপথে ৩২টি রেল কালভার্ট, ৩৭টি আন্ডারপাস এবং ১৩টি রেলসেতুর কাজ শেষ হয়েছে। সেতুর দুই পাশের স্টেশন নির্মাণ চূড়ান্ত পর্যায়ে। প্রকৌশলী সূত্র বলছে, পুরো প্রকল্পের কাজ আগামী বছরের জুনে শেষ হলও ঢাকা-ভাঙ্গা এই অংশের কাজ চলতি বছরই শেষ হবে। পদ্মা সেতু চালুর পর দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমের ২১ জেলার মধ্যে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপন হয়েছে। নতুন রেলপথে যাতায়াতে রাজধানী ঢাকা থেকে খুলনার দূরত্ব কমবে ২১২ কিলোমিটার। এই প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি ৭৯ লাখ টাকা।
রাজধানী থেকে যশোর পর্যন্ত ১৭২ কিলোমিটার রেলসংযোগ প্রকল্পের মধ্যে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের বড় চ্যালেঞ্জ ছিল সেতুতে যানবাহন চালু রেখেই নিচতলায় পাথরবিহীন রেললাইন নির্মাণ। গত বছরের ২০ আগস্ট সেতুতে রেললাইন স্থাপনের উদ্বোধন করেন রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন। তবে বিভিন্ন জটিলতায় পুরোদমে কাজ শুরু হয় নভেম্বরে। সিএসসি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কনস্ট্রাকশন সুপারভিশন কনসালটেন্টের (সিএসসি) তত্ত্বাবধানে চলছে পদ্মা সেতুর এই রেলসংযোগ প্রকল্পের কাজ।
শিবচরের বাসিন্দা মনিরুজ্জামান মনির বলেন, এতো দিন আমাদের কল্পনায় ছিল রেল লাইন। এখন সেটি পুরো দমে চোখের সামনে। আর কিছু দিন পরে আমরাও রেলে ঢাকা যাবো। এতে আমাদের পদ্মা সেতুর মতো রেলেও সুযোগ পাবো। এতে আমরা খুবই আনন্দিত। এটাই আমাদের জন্যে সবচে বড় প্রাপ্তি। পুরো এলাকায় এখন ঈদের মতো খুশি।’
শিবচর পৌরসভার মেয়র আওলাদ হোসেন খান বলেন, আমাদের শিবচরে দুটো সাব স্টেশন রয়েছে, যার কারণে আমরা রেলের সব ধরনের সুযোগই পাবো। এজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অশেষ ধন্যবাদ জানাই। তার ক্ষমতার কারণেই আমরা দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছি। এটা আমাদের জন্যে খুবই গর্বের বিষয়, তাই রেল সেতুর কারণে তাদের ধন্যবাদ জানাই।
পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক আফজাল হোসেন বলেন, পরীক্ষামূলকভাবে গ্যাংকার ট্রেনে ভ্রমণ করে রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন নির্মিত রেলপথসহ প্রকল্পের সার্বিক কাজ পরিদর্শন করছেন। পুরোপুরি চালু হওয়ার আগে এ রেলপথ দিয়ে আমরা প্রকল্পের বিভিন্ন পণ্য পরিবহন করব।
(ঢাকাটাইমস/৪এপ্রিল/এআর)

মন্তব্য করুন