কাপাসিয়ায় অভিযুক্ত শিক্ষকের অনিয়ম-দুর্নীতি তদন্তে গতি নেই

কাপাসিয়া (গাজীপুর) প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১৬ এপ্রিল ২০২৩, ১৬:২৭ | প্রকাশিত : ১৬ এপ্রিল ২০২৩, ১৫:৫২
অভিযুক্ত ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শিব্বির আহমদ।

গাজীপুরের কাপাসিয়ায় বারিষাব ইউনিয়নের চরদুর্লভ খান আ. হাই সরকার উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শিব্বির আহমেদের বিরুদ্ধে রয়েছে অনেক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ। এসব অনিয়ম-দুর্নীতি তদন্তে গঠন করা হয় তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি। তদন্ত কমিটিকে ৫ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার কথা থাকলেও দেড় মাসেও শুরু হয়নি তদন্ত। অপরদিকে ওই তিন শিক্ষকের বিরুদ্ধে পরিচালনা কমিটির সদস্যরা পাল্টা অভিযোগ দিয়েছেন। কোনো অভিযোগেরই তদন্ত এখনো শুরু হয়নি।

গাজীপুর জেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, গত ২২ ফেব্রুয়ারি গাজীপুর জেলার শিক্ষা কর্মকর্তা রেবেকা সুলতানা স্বাক্ষরিত একটি অফিস আদেশ দেন। আদেশে ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করে দেয়া হয়। কমিটিতে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুস সালামকে আহ্বায়ক একই অফিসের একাডেমিক সুপারভাইজার মোহাম্মদ মোক্তার হোসেন ও জেলা শিক্ষা অফিসের গবেষণা কর্মকর্তা মুশফিকুর রহমান সরকার সদস্য রয়েছেন। তদন্ত কমিটিকে পাঁচ কর্ম দিবসের মধ্যে অভিযোগ ও অনিয়মের সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেয়ার জন্য বলা হয়। আরেকটি আদেশে তিনজন সিনিয়র শিক্ষকদের বিরুদ্ধে পরিচালনা কমিটির করা অভিযোগের তদন্ত করার জন্য বলা হয়েছে।

১৯ ফেব্রুয়ারিতে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার বরাবরে অভিযোগ করেছেন চরদুর্লভ খান আ. হাই সরকার উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক মো. নুরুল ইসলাম, মো. কফিল উদ্দিন ও মীর মো. আলাউদ্দিন তারা অভিযোগপত্রে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শিব্বির আহমেদের বিরুদ্ধে। অভিযোগগুলো হলো- বিদ্যালয়ে যোগদান তথ্যে অসঙ্গতি, শিক্ষক কর্মচারী তথ্য বিবরণীতে যোগদানের তারিখ মিল নেই। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জরিপের নামে শিক্ষক ও কর্মচারীদের কাছে ৩ লাখ টাকা দাবি। ক্ষমতাসীন রাজনীতির দলের সঙ্গে জড়িত রয়েছে ঠিকাদারি ব্যবসা। প্রতিদিন বিদ্যালয়ে উপস্থিত থাকেন না। করোনা মহামারির সময় বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টিকা ফরম ২০০ টাকা করে বিক্রি করেন। পরে সেই টাকা মিডিয়া ও প্রশাসনের চাপে ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হন। বিদ্যালয়ের আয়-ব্যয়ের সঠিক হিসাব নেই। শিব্বির আহমেদের শিক্ষাগত সনদের তথ্য একেক জায়গায় একেক রকম। সর্বকনিষ্ঠ শিক্ষক হয়েও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন। অভিযোগকারী শিক্ষকরা আরো বলেন, রাজনৈতিক ক্ষমতা খাটিয়ে এখন নিয়োগ বাণিজ্য শুরু করেছেন। প্রধান শিক্ষক, সহকারী শিক্ষক ও কর্মচারী নিয়োগ টাকার বিনিময় ছাড়া দেবেন না।

অপরদিকে স্কুল পরিচালনা কমিটি সভাপতিকে অনাস্থা দিয়েছেন। অভিযোগ দিয়েছেন মাধ্যমিক উচ্চ শিক্ষা বোর্ডে। গত ২২ ফেব্রুয়ারি পরিচালনা কমিটির সদস্য, সংরক্ষিত মহিলা সদস্য, সাধারণ শিক্ষক সদস্য, সংরক্ষিত মহিলা শিক্ষক সদস্যসহ কয়েকজন অভিযোগ করেন, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। অভিযুক্তরা হলেন, সিনিয়র শিক্ষক মো. নুরুল ইসলাম, মো. কফিল উদ্দিন ও মীর মো. আলাউদ্দিন। তারা বিদ্যালয়ের সঠিক সময় উপস্থিত না। ক্লাস ফাঁকি দিয়ে বাইরে ঘোরাফেরাসহ বিভিন্ন অনিয়মের কথা উল্লেখ করেন অভিযোগ করেছেন।

বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি মো. কফিল উদ্দিন বলেন, বিদ্যালয়ের স্বার্থে সঠিক প্রক্রিয়ায় নিয়োগ করার জন্য আমি চেষ্টা করেছি। কিন্তু ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক টাকা ছাড়া নিয়োগ দেবেন না। আপত্তি করলে আমাকে বাদ দিয়ে এই নিয়োগ প্রক্রিয়া করতে তিনি মরিয়া হয়ে উঠেছেন। এখন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে উপজেলার মাধ্যমে শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আবদুস সালাম ও বিদ্যালয়ের পরিচালনা পরিষদের কিছু সদস্য একত্র হয়েছেন। এসব সমস্যা নিয়ে কাপাসিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিসে ২৫ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় একটি সভা হয়। ওই সভায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে প্রধান করে বিদ্যালয়ের নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে মর্মে সমঝোতা চুক্তি হয়। সকল নিয়োগ প্রক্রিয়া ইউএনওর নেতৃত্বে সম্পূর্ণ করা হবে।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আবদুস সালাম বলেন, একাডেমিক সুপারভাইজার ট্রেনিংয়ে থাকায় তদন্ত করা হয়ে ওঠেনি। অনেক কাজে ব্যস্ত রয়েছি। এমনিতে এখন কাজের অনেক চাপ। তাছাড়া জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আমাকে কোনো রিমাইন্ডার দেননি। একাডেমিক সুপারভাইজার ট্রেনিং শেষ হলে তারপর দিনক্ষণ ঠিক করে তদন্ত শুরু করা হবে।

অভিযুক্ত ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শিব্বির আহমেদ অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে বলেন, জেলা থেকে তদন্তের যে অফিস আদেশ সম্বন্ধে আমি কিছুই জানি না। অথচ জেলা থেকে আসা অফিস আদেশে গাজী/শিক্ষা/২০২৩/১২৫২/৯ স্মারকের সাত নম্বরে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককে অনলিপি কথা উল্লেখ রয়েছে। তবে অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে বলেন, আমি কোনো অনিয়ম দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত নই। আমি এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে দিয়েছি ছাড়া নেইনি কিছুই। আমার বিরুদ্ধে যারা অভিযোগ করেছে তাদের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ রয়েছে।

জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা রেবেকা সুলতানা মুঠোফোনে ঢাকা টাইমসকে বলেন, চরদুর্লভ খান আ. হাই সরকার উচ্চ বিদ্যালয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শিব্বির আহমেদের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ এসেছে। সেই অভিযোগগুলোর সত্যতা যাচাইয়ের জন্য ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তিনজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে পরিচালনা কমিটির সদস্যরা অভিযোগ করেছেন। দুটি বিষয় নিয়ে এই কমিটি তদন্ত করবে। সেই কমিটিকে পাঁচ কর্ম দিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার কথা। কিন্তু তারা কোনো তদন্ত প্রতিবেদন এখনো জমা দেয়নি। আমার কাছ থেকে কোনো সময় নেয়নি। পুনরায় মো. আব্দুস সালাম সাহেবকে দ্রুত সময়ের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দেয়ার জন্য বলা হয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/১৬এপ্রিল/এআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :