দেশে নিবন্ধিত হিমোফিলিয়া রোগীর সংখ্যা ২২০০
দেশে এখন পর্যন্ত দুই হাজার ২০০ জনের বেশি হিমোফিলিয়া রোগী রেজিস্টার্ড (নিবন্ধিত) হয়েছেন।
বিশ্ব হিমোফিলিয়া ফেডারেশনের বার্ষিক জরিপে এ তথ্য জানানো হয়।
২০২০ এর তথ্য মতে বিশ্বে প্রতি লাখ নবজাতক পুরুষ শিশুদের মধ্যে ২৪.৬ জন হিমোফিলিয়া এ এবং পাঁচ জন হিমোফিলিয়া বি রোগে আক্রান্ত। যার মধ্যে ৯.৫ জন হিমোফিলিয়া এ এবং ১.৫ জন হিমোফিলিয়া বি তে আক্রান্ত শিশুরা তীব্র মাত্রার রোগে আক্রান্ত।
এদিকে সারা বিশ্বের মত ১৭ এপ্রিল বাংলাদেশেও উদযাপিত হয়েছে বিশ্ব হিমোফিলিয়া দিবস।
হিমোফিলিয়া সম্পর্কে বিশ্বব্যাপী সচেতনতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যেই প্রতি বছর এ দিবসটি পালন করা হয়ে থাকে। এ বছর দিবসের প্রতিপাদ্য হচ্ছে “এক্সসেস ফর অল: প্রিভেনশন অফ ব্লিডস এ্যাজ গ্লোবাল স্ট্যান্ডাড অফ কেয়ারঅর্থাৎ রক্তক্ষরণ প্রতিরোধ-সকলের নাগালে আসুক বিশ্বমানের সেবা”।
বিশ্ব হিমোফিলিয়া দিবস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) হেমাটোলজি বিভাগের পক্ষ থেকে একটি বৈজ্ঞানিক সেমিনারের আয়োজন করে।
সোমবার বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে বিএসএমএমইউর শহীদ ডা. মিল্টন হলে বৈজ্ঞানিক সেমিনারের আয়োজন করা হয়।
বিএসএমএমইউর হেমাটোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান মো. সালাহউদ্দিন শাহের সভাপতিত্বে আয়োজিত সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএসএমএমইউর উপাচার্য মো. শারফু্দ্দিন আহমেদ।
ওই সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য দেন বিএসএমএমইউর মেডিসিন অনুষদ ডিন মাসুদা বেগম। হেমাটোলজি বিভাগের সহকারি অধ্যাপক ডা. মুজাহিদা রহমান, রেসিডেন্ট ডা. তানভীর আহমেদ মেহেদী। আর ডা. মো. আব্দুল্লা আল মামুন সেমিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
অনুষ্ঠানে মুল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন হেমাটোলজী বিভাগের চেয়ারম্যান মো. সালাহ উদ্দিন শাহ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন রেসিডেন্ট ডা. মিলি দে ও ডা. কাজী ফজলুর রহমান।
সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে হিমোফিলিয়া সম্পর্কে রোগী, রোগীর স্বজন, সকল পর্যায়ের স্বাস্থ্য সেবা প্রদানকারী এবং সর্বস্তরের জনগণের মাঝে সচেতনতা তৈরির বিষয়ে বিএসএমএমইউর উপাচার্য মো. শারফুদ্দিন আহমেদ গুরুত্বরোপ করেন।
হিমোফিলিয়ার সকল রোগী যেন সহজে প্রয়োজনীয় প্রাথমিক, জরুরি চিকিৎসা এবং সুলভে ফ্যাক্টর, প্লাজমা এবং অন্যান্য চিকিৎসার উপকরণ পেতে পারেন এবং মাল্টি ডিসিপ্লিনারি টিম এর সমন্বয়ে কমপ্রিহেনসিভ হিমোফিলিয়া চিকিৎসা কেন্দ্র স্থাপনসহ হিমোফিলিয়া চিকিৎসার সর্বাধুনিক সুবিধাদি সহজলভ্য করার ব্যাপারে সরকারি বেসরকারি সকল পর্যায়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে হেমাটোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান মো. সালাহউদ্দিন শাহ আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
আর বিএসএমএমইউর প্রশাসনের সহায়তা কমানা করেন। সকল হিমোফিলিয়া রোগীর সহজ, সুলভ ও সময়মত চিকিৎসা এদেশে দ্রুতই নিশ্চিত হবে এটাই সকলের প্রত্যাশা।
উল্লেখ্য, হিমোফিলিয়া রোগে শরীরে আঘাত বা কেটে গেলে রক্ত জমাট বাধা প্রলম্বিত হয়। রোগের তীব্রতা বেশি হলে আঘাত ছাড়াই রক্তপাত হতে পারে এবং অস্থিসন্ধি বা গিরায় বা মাংসপেশীতে বারবার রক্ত ক্ষরণ হতে পারে। বারবার রক্তক্ষরণের ফলে ধীরে ধীরে গিরায় ক্ষয় এবং বিকৃতি দেখা দিতে পারে।
এছাড়াও স্পর্শকাতর অংশে যেমন মস্তিঙ্ক, খাদ্যনালী, মেরুদণ্ড রক্তক্ষরণ হলে জীবন বিনাশের বা স্থায়ী অক্ষমতার ঝুঁকি তৈরি হয়। হিমোফিলিয়া প্রধানত বংশগত রোগ। সাধারণত পুরুষরাই এ রোগে আক্রান্ত হয় এবং নারীরা রোগের বাহক হিসেবে কাজ করেন। বিশেষ ক্ষেত্রে নারীরাও এরোগে আক্রান্ত হতে পারেন। খুব অল্প কিছু ক্ষেত্রে জন্মগত ভাবে না থাকলেও অন্য রোগের কারণে হিমোফিলিয়া রোগ দেখা দিতে পারে।
বিশ্বহিমোফিলিয়া ফেডারেশন এর বার্ষিক সার্ভে ২০২০ এর তথ্য মতে প্রক্ষেপণ করা হয় বিশ্ব প্রতি লাখ নবজাতক পুরুষ শিশুদের মধ্যে ২৪.৬ জন হিমোফিলিয়া এ এবং পাঁচ জন হিমোফিলিয়া বি রোগে আক্রান্ত, যার মধ্যে ৯.৫ জন হিমোফিলিয়া এ এবং ১.৫ জন হিমোফিলিয়া বি তে আক্রান্ত শিশুরা তীব্র মাত্রার রোগে আক্রান্ত।
বাংলাদেশে এ পর্যন্ত দুই হাজার ২০০ জনের বেশি হিমোফিলিয়া রোগী রেজিস্টার্ড হয়েছেন। তবে ধারণা করা হয় প্রকৃত সংখ্যা এর চেয়ে অনেক বেশি। হিমোফিলিয়া রোগীদের চিকিৎসার মূল লক্ষ্য থাকে ফ্যাক্টর দেওয়ার মাধ্যমে রক্তপাত দ্রুত বন্ধ করা এবং তীব্র রোগীদের ক্ষেত্রে যাতে রক্তপাত শুরু না হয় সে জন্য নিয়মিত ফ্যাক্টর দেওয়ার ব্যবস্থা করা।
হিমোফিলিয়া ট্রিটমেন্ট সেন্টার (এইচটিসি) এর মাধ্যমে রোগীদের চিকিৎসা দেয়া। গিরা ক্ষয় বা বিকৃত হয়ে গেলে ফিজিক্যাল থেরাপি বা সার্জারির প্রয়োজন হতে পারে।
পাশাপাশি এ ধরণের রোগে আক্রান্ত রোগীদের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও মানসিক ক্ষেত্রে সহযোগিতা প্রয়োজন হতে পারে। এদেশে রোগীদের চাহিদা অনুযায়ী ফ্যাক্টর এর সহজলভ্যতা কম এবং বাজার মূল্যের কারণে অনেক দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত রোগীর পক্ষে তা কিনে প্রয়োগ করা সম্ভব হয় না।
(ঢাকাটাইমস/১৭এপ্রিল/এএ/এসএম)