সিলেটে পর্যটক হত্যায় স্ত্রীসহ দুজন গ্রেপ্তার

সিলেট ব্যুরো, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২০ এপ্রিল ২০২৩, ১৬:৩১

সিলেটের গোয়াইনঘাটে রিসোর্টের পাশ থেকে পর্যটকের লাশ উদ্ধারের ঘটনায় ওই পর্যটকের স্ত্রী ও তার প্রেমিকসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

বৃহস্পতিবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান সিলেট জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মামুন।

জেলা পুলিশ কার্যালয়ের কনফারেন্স রুমে এ প্রেস ব্রিফিং অনুষ্ঠিত হয়।

পুলিশ সুপার বলেন, গত ১৭ এপ্রিল বিকালে সিলেটের গোয়াইনঘাট থানাধীন জাফলং বল্লাঘাট রিভারভিউ রিসোর্টের পাশে অজ্ঞাতনামা এক যুবকের লাশ পাথরচাপা অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয়রা পুলিশে খবর দেন। গোয়াইনঘাট থানা পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশটি উদ্ধার করে।

পরে জানা যায়, লাশ উদ্ধার হওয়া ওই যুবকের নাম আলে ইমরান (৩২)। তিনি কিশোরগঞ্জের নিকলী থানার গুরই গ্রামের আব্দুল জব্বারের ছেলে।

এ ঘটনায় পরদিন গোয়াইনঘাট থানায় অজ্ঞাতনামা আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়।

পরবর্তীতে এ হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের শনাক্তকরণ ও গ্রেপ্তারে গোয়াইনঘাট থানা পুলিশ অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু করে। এরই অংশ হিসেবে বুধবার রাতে ও বৃহস্পতিবার সকালে গোয়াইনঘাট থানা পুলিশ এবং জেলা গোয়েন্দা পুলিশ পৃথক দুটি অভিযানে চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলার অন্যতম আসামি ইমরানের স্ত্রী খুশনাহার (২১), প্রেমিক মাহিদুল হাসান মাহিন (২৪) ও হত্যাকাণ্ডে সহযোগী নাদিম আহমেদ নাঈমকে (১৯) গ্রেপ্তার করা হয়।

প্রাথমিক অনুসন্ধান ও গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে পুলিশ জানতে পারে- ইমরানের স্ত্রী খুশনাহারের সঙ্গে মাহিদুল হাসান মাহিন (২৪) নামের এক তরুণের দীর্ঘ প্রায় আড়াই বছরের প্রেম চলে। মাহিন ঢাকার একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে জিএম পদে কর্মরত।

ইমরানের সঙ্গে গত পাঁচ বছর আগে খুশনাহারের বিয়ে হয়। মাহিনের সাথে প্রেমে জড়ানোর পর থেকেই খুশনাহার এবং তার প্রেমিক মাহিন বিভিন্ন সময় ইমরানকে হত্যা করার চেষ্টা করে আসছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় হত্যা করার উদ্দেশ্যে খুশনাহার বেড়ানোর কথা বলে স্বামীকে নিয়ে গত ১৫ এপ্রিল রাতে ভৈরব হতে ট্রেনযোগে সিলেটের উদ্দেশ্য রওয়ানা হন অভিযুক্ত নারী।

অন্যদিকে একই দিনে প্রেমিক মাহিন ও মাহিনের অফিসে কর্মরত গ্রেপ্তারকৃত আসামি নাদিম এবং রাকিব নামের এক সহযোগী ঢাকা কমলাপুর হতে ট্রেনযোগে সিলেটের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন।

১৬ এপ্রিল সকাল ৮টার দিকে জাফলং বল্লাঘাটস্থ ‘রিভারভিউ রিসোর্ট অ্যান্ড আবাসিক হোটেলের ১০১ নং কক্ষে স্ত্রীকে নিয়ে ওঠেন ইমরান। এসময় অন্য তিন আসামি জাফলং বল্লাঘাটের হোটেল শাহ আমিনে অবস্থান করছিলেন।

পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী হত্যাকাণ্ড ঘটানোর আগে খুশনাহার কৌশলে ‘রিভারভিউ রিসোর্ট অ্যান্ড আবাসিক হোটেলের তাদের কক্ষের সামনের সিসিটিভি ক্যামেরা অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেয়। পরবর্তীতে মাথাব্যথার ওষুধের কথা বলে রাত ১০টার দিকে ইমরানকে তার স্ত্রী খুশনাহার ঘুমের ওষুধ খাইয়ে দেন। কিছুক্ষণ পর ইমরান গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলে স্ত্রী খুশনাহার রাত ১২টার দিকে তার প্রেমিক মাহিন ও সহযোগীদের হোটেলকক্ষে নিয়ে আসেন।

রাত ২টার দিকে ইমরানের গলায় গামছা পেঁচিয়ে খুশনাহার ও তার প্রেমিক মাহিন হত্যাকাণ্ড ঘটান।

এ সময় আসামি নাদিম পর্যটক ইমরানের পা চেপে ধরেন এবং রাকিব নামের একজন রুমের বাহিরে পাহারা দেন।

ইমরানের মৃত্যু নিশ্চিত হলে রাত ৩টার দিকে হত্যাকারী সবাই ইমরানের মরদেহ লুকিয়ে রাখার উদ্দেশ্যে হোটেলের পাশে পাথরচাপা দিয়ে রাখেন। পরে রাত সাড়ে ৪টার দিকে তারা হোটেল থেকে বের হয়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশাযোগে সিলেট ছেড়ে পালিয়ে যান।

বৃহস্পতিবার দুপুরে সিলেট জেলা পুলিশ কার্যালয়ের কনফারেন্স রুমে অনুষ্ঠিত প্রেস ব্রিফিংয়ের আগে আসামি খুশনাহার ও নাদিমকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

তবে প্রেস ব্রিফিংয়ের সময় খুশনাহারের পরকীয়া প্রেমিক মাহিনকে গ্রেপ্তারে কিশোরগঞ্জ এবং নারায়ণগঞ্জে অভিযান পরিচালনা করছিল পুলিশ।

সিলেট জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মামুন সাংবাদিকদের বলেন, প্রাথমিকভাবে গ্রেপ্তারকৃত আসামিরা উক্ত হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন।

হত্যাকাণ্ডে জড়িত অন্যান্য পলাতক আসামিকেও গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনানুগ কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।

(ঢাকাটাইমস/২০এপ্রিল/এসএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :