শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলার সাত বছর আজ, বিচার কবে?

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২২ এপ্রিল ২০২৩, ১০:১৩

আজ থেকে সাত বছরের আগে ঈদুল ফিতরের দিন। দেশের অন্যতম বড় ঈদগাহ শোলাকিয়ায় জড়ো হন অন্তত সাড়ে তিন লাখ মুসল্লি। কিছুক্ষণের মধ্যেই শুরু হবে ঈদের জামাত। তবে তার আগেই ঘটে বিপত্তি। মুসল্লিদের ঢোকার পথে পুলিশের একটি নিরাপত্তা চৌকিতে অতর্কিত হামলা চালায় জঙ্গিরা। ওই হামলার ঘটনায় দুই পুলিশ সদস্যসহ নিহত হন মোট পাঁচজন। ঈদগাহ মাঠ কিছুটা আড়ালে থাকায় এবং মাঠে মাইকের শব্দ থাকায় পাশে কী ঘটছে তা বুঝতে পারেননি মুসল্লিরা। তাই বড় ধরনের বিপদ থেকে রক্ষা পান তারা।

কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় সেই ভয়াবহ জঙ্গি হামলার সাত বছর আজ। সেই ঘটনার আতঙ্ক এখনও অনেকের মনে। শোক কাটিয়ে উঠতে পারেননি নিহত ও আহতদের স্বজনরা। ইতিহাসের বর্বরোচিত এ জঙ্গি হামলার সাত বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও রয়ে গেছে সেদিনের নৃশংসতার ক্ষতচিহ্ন। এখানে-সেখানে লেগে আছে গুলির দাগ। আসামিদের সময়মতো আদালতে হাজির করতে না পারায় বিচার কার্যক্রম চলছে ধীরগতিতে। ফলে এখনও শুরু হয়নি সাক্ষ্যগ্রহণ।

সেদিন জঙ্গিদের হামলায় নিহত হন পুলিশের দুই কনস্টেবল ও এক গৃহবধূ। পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ঘটনাস্থলে নিহত হন আবির রহমান নামে এক জঙ্গি। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে পুরো এলাকায়। আজও সেই স্মৃতি তাড়িয়ে বেড়ায় এলাকাবাসীকে।

নিজের ঘরে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন ঝর্ণা ভৌমিক নামের ওই গৃহবধূ। গোলাগুলির সময় আতঙ্কে স্বামী আর দুই ছেলেকে নিয়ে ঘরের মেঝেতে শুয়ে ছিলেন ঝর্ণা। এক সময় ওপর থেকে গামছা নেয়ার জন্য উঠে দাঁড়াতেই জানালার স্টিলের পাত ভেদ করে একটি বুলেট এসে তার মাথায় বিদ্ধ হয়। মুহূর্তেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তিনি। এখনও শোকে কাতর তার স্বজনরা।

টিনশেড ঘরের যেদিক দিয়ে গুলি ঘরের ভেতর ঢুকেছিল সেখানে সাঁটিয়ে রাখা হয়েছে গৃহবধূ ঝর্ণার ছবি। প্রতি বছর সেখানে পরিবারের পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয় পুলিশের পক্ষ থেকেও।

ঝর্ণার স্বামী গৌরাঙ্গ ভৌমিক জানান, প্রতি বছর এ দিনটি আমাদের পরিবারে আসে বেদনা হয়ে। স্ত্রীর মৃত্যুর পর প্রধানমন্ত্রী তাদের বড় ছেলেকে একটি ব্যাংকে চাকরি দেন। ছোট ছেলেটির লেখাপড়ার দায়িত্ব নেয়ার কথা থাকলেও সেটি আর হয়নি। অভাব অনটনে চলছে সংসার। জঙ্গিদের হাতে আমার মতো আর যেন কারও স্বজন হারাতে না হয়। সাত বছর আগে স্ত্রীকে হারিয়েছি এখন বিচার পাইনি। কবে স্ত্রীর হত্যার বিচার পাবো সেটাও জানিনা।

শোলাকিয়ায় হামলার ঘটনায় ওই বছরের ১০ জুলাই কিশোরগঞ্জ মডেল থানায় পুলিশ বাদী হয়ে সন্ত্রাস দমন আইনে একটি মামলা করে। ঘটনার পর শোলাকিয়া ও ঢাকার হলি আর্টিজান হামলার প্রধান পরিকল্পনাকারী জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব গান্ধীকে আটক করা হয়। তার কাছ থেকে তথ্য পেয়ে সারাদেশে শুরু হয় অভিযান। আটক করা হয় শীর্ষ জঙ্গিদের। হামলার সময় পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ঘটনাস্থলে নিহত হয় আবির রহমান নামে এক জঙ্গি। আহত অবস্থায় আটক করা হয় শফিউল ইসলাম ডন নামে এক জঙ্গিকে। পরে তিনিও মারা যান র‌্যাবের সাথে বন্দুকযুদ্ধে।

হলি আর্টিসানের পর নৃশংসতা বিবেচনায় এ হামলা ছিল দেশের ইতিহাসে অন্যতম বর্বরোচিত ঘটনা। দুটি হামলাই চালায় একই জঙ্গিগোষ্ঠী। মামলার তদন্তে শোলাকিয়া জঙ্গি হামলায় ২৪ জঙ্গির সংশ্লিষ্টতা পায় পুলিশ। ঘটনার পর দেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে মারা যায় শীর্ষ পাঁচ জঙ্গিসহ ১৯ জন। ২০১৮ সালের ১২ সেপ্টেম্বর পাঁচ জঙ্গিকে আসামি করে আদালতে চার্জশিট দেন মামলার বাদী কিশোরগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আরিফুর রহমান।

মারা যাওয়ায় অন্য ১৯ জনকে অভিযোগ থেকে বাদ দেয়া হয়।

চার্জশিটভুক্ত পাঁচ আসামি হচ্ছে- জেএমবির শীর্ষ নেতা মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজান, মো. অনোয়ার হোসেন, সোহেল মাহমুদ, রাজীব গান্ধী ও জাহিদুল হক তানিম। বর্তমানে তারা দেশের বিভিন্ন কারাগারে বন্দি।

এসব জঙ্গির নামে দেশের বিভিন্ন থানায় অসংখ্য মামলা থাকায় সারাদেশের আদালতে তাদের হাজির করতে হয়। যে কারণে আসামিদের শোলাকিয়া হামলার মামলায় কিশোরগঞ্জ আদালতে নিয়মিত হাজির করা সম্ভব হচ্ছে না। যে কারণে বিচার কার্যক্রমও বিলম্বিত হচ্ছে। ফলে গত পাঁচ বছরেও শুরু করা যায়নি সাক্ষ্য নেয়া।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কিশোরগঞ্জ জেলা জজ আদালতের সরকারী কৌশুলি আবু নাছের মো. ফারুক সঞ্জু ঢাকাটাইমসকে বলেন, আমি নতুন যোগদান করেছি। এখনও এই মামলার চার্জশীট দেখিনি। ফলে মামলার আপডেট সম্পর্কে বলতে পারব না।

কিশোরগঞ্জের জেলা পুলিশের একটি সূত্র ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলায় জহিরুল ইসলাম ও আনছারুল হক নামে দুই পুলিশ সদস্য নিহত হন। আহত হন অনেকে। আমরা নিহত ও আহতদের পরিবারকে পুনর্বাসনসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছি। সব সময় তাদের পরিবারের খোঁজ-খবর নিই।’ চাঞ্চল্যকর এ মামলায় নিবিড় তদন্ত শেষে আসামিদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয়া হয়েছে। এ মামলায় জঙ্গিদের সর্বোচ্চ শাস্তি হবে বলে আশা করছি।

ঢাকাটাইমস/২২এপ্রিল/এএ/ইএস

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

জাতীয় এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :