বিশ্বব্যাপী সামরিক ব্যয় সর্বকালের সর্বোচ্চ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২৪ এপ্রিল ২০২৩, ১৫:৩৯

বিশ্বের সামরিক ব্যয় ২০২২ সালে সর্বকালের সর্বোচ্চ ২ দশমিক ২৪ ট্রিলিয়নে পৌঁছেছে। ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন ইউরোপ জুড়ে সামরিক ব্যয় তীব্রভাবে বেড়ে যাওয়ায় সামরিক খাতে ব্যয় বেড়েছে বলে একটি শীর্ষস্থানীয় প্রতিরক্ষা থিঙ্ক ট্যাঙ্কের বরাত দিয়ে জানিয়েছে আল-জাজিরা।

স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট (এসআইপিআরআই) সোমবার বৈশ্বিক সামরিক ব্যয় সম্পর্কিত বার্ষিক প্রতিবেদনে বলেছে, টানা অষ্টম বছরে বিশ্বব্যাপী সামরিক ব্যয় বেড়েছে।

শুধু ইউরোপেই সামরিক খাতে ব্যয় বেড়েছে ১৩ শতাংশ যা অন্তত ৩০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি।

এসআইপিআরআই বলেছে, এর বেশিরভাগই রাশিয়া এবং ইউক্রেনের সঙ্গে জড়িত। তবে অন্যান্য দেশগুলোও অনুভূত রাশিয়ার হুমকির প্রতিক্রিয়ায় সামরিক ব্যয় বাড়িয়েছে।

এসআইপিআরআই-এর সামরিক ব্যয় এবং অস্ত্র উত্পাদন কর্মসূচির সিনিয়র গবেষক ন্যান তিয়ান বলেন, ‘সাম্প্রতিক বছরগুলিতে বৈশ্বিক সামরিক ব্যয়ের ক্রমাগত বৃদ্ধি এটাই প্রমাণ করে আমরা ক্রমবর্ধমান অনিরাপদ বিশ্বে বাস করছি। রাষ্ট্রগুলো একটি অবনতিশীল নিরাপত্তা পরিবেশের প্রতিক্রিয়া হিসেবে সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করছে, যা তারা অদূর ভবিষ্যতে উন্নতির প্রত্যাশা করে না।’

মস্কো ২০১৪ সালে ইউক্রেনের ক্রিমিয়ান উপদ্বীপ আক্রমণ করে দখল করে এবং ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে পূর্ণ মাত্রায় আক্রমণ শুরু করার আগে দেশটির পূর্বে বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহীদের সমর্থন করে।

এসআইপিআরআই অনুসারে ফিনল্যান্ডের ব্যয় ৩৬ শতাংশ এবং লিথুয়ানিয়ার সামরিক ব্যয় ২৭ শতাংশ বৃদ্ধির সঙ্গে এই পদক্ষেপগুলো রাশিয়ার প্রতিবেশী বা একসময় সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রভাব বলয়ের অংশ ছিল এমন অন্যান্য দেশগুলোর মধ্যে শঙ্কা ছড়িয়ে দিয়েছে।

এপ্রিল মাসে ফিনল্যান্ড, যার সঙ্গে রাশিয়ার প্রায় ১ হাজার ৩৪০ কিলোমিটার সীমান্ত প্রসারিত। দেশটি সম্প্রতি ন্যাটোর ৩১তম সদস্য হয়েছে। সুইডেন ২০০ বছরের বেশি সময় ধরে সামরিক জোট এড়িয়ে গেছে, তারাও এখন যোগ দিতে চায়।

এসআইপিআরআই-এর সামরিক ব্যয় এবং অস্ত্র উত্পাদন কর্মসূচির গবেষক লরেঞ্জো স্কারাজ্জাতো বলেছেন, ‘যদিও ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে পূর্ণ মাত্রার আক্রমণ অবশ্যই সে বছরের সামরিক ব্যয়ের সিদ্ধান্তগুলিকে প্রভাবিত করেছিল। রাশিয়ার আগ্রাসনের বিষয়ে উদ্বেগ অনেক দিন ধরে তৈরি হচ্ছে। অনেক প্রাক্তন পূর্ব ব্লক রাষ্ট্র ২০১৪ সাল থেকে তাদের সামরিক ব্যয় দ্বিগুণের বেশি করেছে সে বছর রাশিয়া ক্রিমিয়াকে অধিভুক্ত করার পর।’

থিঙ্ক ট্যাঙ্কটি বলেছে, ইউক্রেনে সামরিক ব্যয় ২০২২ সালে ছয় গুণের বেশি বেড়ে ৪৪ বিলিয়ন ডলার হয়েছে, যা এসআইপিআরআই ডেটাতে রেকর্ড করা দেশের সামরিক ব্যয়ের সর্বোচ্চ এক বছরের বৃদ্ধি।

মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) শতাংশ হিসাবে সামরিক ব্যয় ২০২২ সালে ৩৪ শতাংশে উন্নীত হয়েছে, যা আগের বছরের ৩ দশমিক ২ শতাংশ ছিল।

এসআইপিআরআই অনুসারে, রাশিয়ার সামরিক ব্যয় ২০২২ সালে আনুমানিক ৯ দশমিক ২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় ৮৬ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার হয়েছে। এটি রাশিয়ার ২০২২ সালের জিডিপির ৪ দশমকি ১ শতাংশের সমান, যা ২০২১ সালের ৩ দশমিক ৭ শতাংশ থেকে বেড়েছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের বৃহত্তম সামরিক ব্যয়কারী হিসেবে শীর্ষে রয়েছে। পূর্বের থেকে দশমকি ৭ শতাংশ বেড়ে ২০২২ সালে ৮৭৭ বিলিয়ন হয়েছে যা মোট বৈশ্বিক সামরিক ব্যয়ের ৩৯ শতাংশ। এসআইপিআরআই-এর নান তিয়ান বলেছেন, ‘ইউক্রেনকে দেওয়া অভূতপূর্ব আর্থিক সামরিক সহায়তার কারণে ব্যয়ের পরিমাণ মূলত বৃদ্ধি পেয়েছে।’

থিঙ্ক ট্যাঙ্ক অনুসারে, ২০২২ সালে ইউক্রেনের জন্য মার্কিন আর্থিক সামরিক সহায়তা মোট ১৯ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার ছিল।

চীন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম সামরিক ব্যয়কারী হিসেবে রয়ে গেছে। দেশটি ২০২২ সালে আনুমানিক ২৯২ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ করেছ যা ২০২১ সালের তুলনায় ৪ দশমিক ২ শতাংশ বেশি এবং টানা ২৮তম বার্ষিক বৃদ্ধির প্রতিনিধিত্ব করে।

এদিকে, জাপান ২০২২ সালে সামরিক খাতে ৪৬ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে, যা আগের বছরের তুলনায় ৫ দশমিক ৯ শতাংশ বেশি। এসআইপিআরআিই-এর মতে ১৯৬০ সাল থেকে এটি জাপানের সর্বোচ্চ সামরিক ব্যয়।

জাপান এবং চীন এশিয়া ও ওশেনিয়ায় সামরিক ব্যয়ের নেতৃত্ব দিয়েছে, যার পরিমাণ ৫৭৫ বিলিয়ন ডলার। এসআইপিআরআই জানিয়েছে, এই অঞ্চলে সামরিক ব্যয় কমপক্ষে ১৯৮৯ সাল থেকে বাড়ছে।

তাইওয়ানের স্বশাসিত দ্বীপ নিয়ে পূর্ব এশিয়ায় উত্তেজনা বেড়েছে, যেটিকে বেইজিং তার ভূখণ্ডের অংশ বলে মনে করে। চীন দক্ষিণ চীন সাগরের প্রায় পুরোটাই দাবি করে যা মূলত প্রধান সামুদ্রিক বাণিজ্য পথ। এর কিছু অংশ ফিলিপাইন, ভিয়েতনাম এবং মালয়েশিয়াও দাবি করে।

তাইওয়ানের উত্তর-পূর্বে অবস্থিত সেনকাকু বা দিয়াওয়ু দ্বীপপুঞ্জ নিয়েও জাপান ও চীন বিরোধে জড়িয়ে পড়েছে।

টোকিওর উত্তরাঞ্চলীয় অঞ্চলগুলি নিয়েও মস্কোর সঙ্গে দীর্ঘদিনের বিরোধ রয়েছে যেটি হোক্কাইডোর উত্তর-পূর্বে অবস্থিত এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষে সোভিয়েত ইউনিয়ন কর্তৃক দখল করা হয়েছিল। রাশিয়া তাদেরকে কুরিল দ্বীপপুঞ্জ বলে ডাকে।

(ঢাকাটাইমস/২৪এপ্রিল/এসএটি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

আন্তর্জাতিক বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

আন্তর্জাতিক এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :